অন্তিম যাত্রায় মৃত্যুহীন রাজা

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

ঢাকা : প্রিয় ক্লাব সান্তোসের ভিলা বেলমিরোতে খেলতে খেলতেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন পেলে। এই সবুজ গালিচায় চিহ্ন এঁকেছেন অজস্র ফুটবলীয় রূপকথার। গতকাল সে মাঠেই শেষবারের মতো ফিরলেন পেলে। অনন্তপথে যাত্রার আগে প্রিয় ক্লাবে কাটাবেন মরেও অমর ফুটবলের রাজা। তাকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পেলের শেষ বিদায়ের দুদিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা। পেলেকে একে একে সাধারণ মানুষ-ভক্ত থেকে শুরু করে বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সেই তালিকায় ছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো থেকে শুরু করে সাবেক খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদসহ আরও অনেকে। ব্রাজিল মহাতারকার কফিনের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী মার্সিয়া আওকি, ছেলে এদারসনসহ পরিবারের অনেকে।

পেলের ছেলে এদারসন শ্রদ্ধা জানান বাবাকে। বাবার কপালে হাত রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি কফিনে রাখেন জপমালা। সে সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। বিশেষ করে জীবনসঙ্গিনী আওকি। বেশ কয়েকবারই তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। সান্তোসের হোম ভেন্যু ভিলা বেলমিরোর মাঝ বরাবর বসানো হয় অস্থায়ী তাঁবু। সেখানে রাখা আছে ফুটবলের রাজার কফিন। কফিনের চারপাশ ছিল ফুলে ফুলে সাজানো। কফিনে শায়িত পেলের দেহের ওপরের অংশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। মুখটা ঢাকা ছিল সচ্ছ সাদা নেটের কাপড়ে। যেন প্রিয় তারকার মুখ শেষবারের মতো দেখতে পায় সবাই। কফিনের ডানদিকে সামান্য দূরে ছিল ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেডের পাশ দিয়ে শত শত সাধারণ মানুষ লাইন ধরে এসে পেলেকে শেষবারের মতো দেখে যান। এখানে ব্যারিকেড থাকলেও সাধারণ মানুষের মনে পেলে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন যুগের পর যুগ ধরে। ভিলা বেলমিরো মাঠের গ্যালারিতে লেখা ছিল ‘লং লিভ দ্য কিং’।

পেলেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশকে অনুরোধ করব তাদের একটি করে স্টেডিয়াম মহান পেলের নামে নামকরণ করার।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুরা যেন পেলের গুরুত্ব বুঝতে পারে সেটি ভেবে এমন প্রস্তাব দেওয়া হবে। আমরা এখানে খুব দুঃখ নিয়ে এসেছি। পেলে চিরন্তন। তিনি ফুটবলের বৈশ্বিক আইকন।’ ইনফান্তিনো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল ফেডারেশন (কনমেবল) প্রধানসহ আরও অনেকে শুরুর দিকে শ্রদ্ধা জানান।

পেলেকে প্রথম শ্রদ্ধা জানানো সাধারণ ব্যক্তিটি ১৪ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। হুইল চেয়ারে করে এসেও পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় অনেককে। কার্লোস মোতা এবং তার ছেলে বের্নার্দো ৫০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন ফুটবলের রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ৫৯ বছরের মোতা এএফপিকে বলেন, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে পেলের অসামান্য সব কীর্তি দেখে। তাকে বিশ্বজয়ী হতে দেখে।’ ভক্তরা এসেছিলেন হাতে ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সি আঁকড়ে ধরে; অনেকের হাতে ছিল পেলের পোস্টার। কেউ কেউ বিশ্বকাপের ডামি নিয়ে এসেছিলেন। তাদের অনেকের চোখেই ছিল বিষাদের অশ্রু। পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে সান্তোস স্টেডিয়ামের বাইরে অপেক্ষমাণ হাজারো মানুষ সারাক্ষণ গেয়েছেন পেলেকে নিয়ে লেখা একাধিক গান।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ প্রথমে জানায়, পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটি নিয়ে ব্রাজিলে গেছেন ব্রাজিল ও পিএসজি তারকা নেইমার। তবে নেইমারের বাবা নেইমার সিনিয়র গ্লোবোকে বলেন, ‘সে আসবে না। তবে তার মন খুব খারাপ। সে আমাকে এখানে তার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে বলেছে। কাউকে হারানো কত কষ্টের সেটা আমরা বুঝি। আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়কেই হারাইনি, একজন মানুষকেও হারিয়েছি।’

ব্রাজিলের সান্তোসের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য ৯ ঘণ্টা। পেলেকে ভিলা বেলমিরোতে শ্রদ্ধা জানানো হবে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আজ সান্তোসের রাস্তায় পেলের কফিন নিয়ে প্যারেড হওয়ার কথা রয়েছে। পেলেকে নেওয়ার কথা তার পৈতৃক ভিটাতে। সেখানে থাকেন তার শতবর্ষী মা দোনা সেলেস্তে আরান্তেস। তাকে দেখানোর পর পেলেকে সমাহিতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তবে ডেইলি মিরর এক সংবাদে জানায়, পেলের মাকে নিয়ে আসা হতে পারে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এমনটি হলে আর পৈতৃক ভিটায় ফিরবেন না পেলে। পেলেকে সমাহিত করা হবে নিজের পছন্দ করে যাওয়া নেকরোপল একুমেনিকাতে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল নেকরোপল একুমেনিকার নবমতলায় চিরশায়িত হওয়ার। যেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় প্রিয় ভিলা বেলমিরোর মাঠ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই