ঢাকা : কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতানো লিওনেল মেসির সময়টা ভালো যাচ্ছে না পিএসজিতে। অবশ্য বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর পর পিএসজিতে মেসি উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবেন না, এটা জানাই ছিল। বিশ্বকাপের পর পিএসজিতে ফেরা মেসির সামনে নানামুখী সংকট সেই আশংকাকেই সত্যি প্রমাণ করেছে।
আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে মেসি জানুয়ারির শুরুতেই ফিরেছিলেন পিএসজিতে। প্রথম দিন দলের অনুশীলনে সতীর্থরা সাদরেই গ্রহণ করেছিলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী মহানায়ককে। দেওয়া হয়েছিল ‘গার্ড অব অনার’।
পিএসজি কোচ ক্রিস্টভ গ্যলতিয়ের চেয়েছিলেন বিশ্বকাপের পর এঞ্জার্সের বিপক্ষে প্রথম মাঠে নামা মেসিকে অভ্যর্থনা দেবেন, যা সাধারণ নিয়ম। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনায় সে চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে ফরাসি ক্লাবটিকে। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে হারিয়েছিল ফ্রান্সকে।
যে ফাইনালের রেফারিং নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ফরাসিদের। এমনকি ফাইনাল ম্যাচটি পুনরায় আয়োজনের দাবিতে অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেন কয়েক লাখ ফরাসি নাগরিক। তাছাড়া বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের আক্রমণাত্মক উদযাপনের কেন্দ্রে ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। যা পছন্দ হয়নি ফ্রান্সের দর্শকদের।
এমবাপ্পেকে নিয়ে ফাইনাল শেষে প্যারোডি গান আর এমিলিয়ানো মার্টিনেজের এমবাপ্পের পুতুল নিয়ে উল্লাসের প্রতিবাদ করেছিল খোদ ফ্রান্সের ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ)। সব মিলিয়ে ফ্রান্সে তৈরি হয়েছিল ‘মেসিবিরোধী’ আবহাওয়া। আশঙ্কা ছিল, পার্ক ডি প্রিন্সেসের দর্শকরা মেসিকে অভ্যর্থনা দিলে ক্ষেপে যেতে পারে। যে কারণে নিজেদের স্টেডিয়ামে মেসিকে অভ্যর্থনা দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে পিএসজি।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর কেটে গেছে দুই মাসের বেশি। কিন্তু মেসির জন্য ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে পিএসজিতে অবস্থান। তাতে আগুনে ঘি ঢালছে পিএসজির সাম্প্রতিক বিপর্যয়। কিছুদিন আগেই ফ্রেঞ্চ কাপের নকআউট পর্বে অলিম্পিক মার্শেইয়ের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে পিএসজি। দুদিন পরেই লিগ ওয়ানে হেরেছে মোনাকোর কাছে। একই সপ্তাহে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বের প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছে পিএসজি।
টানা তিন হারের পর সমর্থকদের পুরো আক্রোশ এখন মেসির উপর। যদিও মোনাকোর বিপক্ষে মেসি মাঠে ছিলেন না। কিন্তু বাকি দুই ম্যাচে তিনি বাঁচাতে পারেননি দলকে। বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচের পর গ্যালারির দর্শকদের কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা পর্যন্ত চেয়েছেন মেসি ও নেইমার! কিন্তু তাতেও শান্ত হচ্ছে না পিএসজি সমর্থকরা। ক্ষমা চাওয়ার সময়েও তাদের শুনতে হয়েছে ‘দুয়োধ্বনি’।
মোনাকোর বিপক্ষে হারের পর ফ্রান্স জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার জেরোমে রোথেন ‘আরএমসি স্পোর্টস’-এ এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, পিএসজির উচিত মেসিকে ছেড়ে দেওয়া। দলে এমবাপ্পে আছে, তার সঙ্গে প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার আনা হোক। পিএসজি ভালো করবে। রোথেনের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, মেসি বিশ্বসেরাদের একজন সন্দেহ নেই। কিন্তু মেসি পিএসজির প্রতি নিবেদিত না। সে ড্রেসিং রুমে অন্যদের সঙ্গে সহজ। ম্যাচের পর মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে। গোল করলেও দর্শকদের অভিনন্দন জানায় না। এটা পিএসজি সমর্থকদের জন্য অপমানজনক।
মেসি পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০২১ সালের আগস্টে। এটা সত্যি ক্যারিয়ারের পুরো সময় বার্সেলোনায় কাটিয়ে আসা মেসি নতুন ক্লাবে মানিয়ে নিতে সময় নিয়েছেন। প্রথম মৌসুমে মাত্র ১১ গোলের সঙ্গে ১৫ অ্যাসিস্ট করেছিলেন। তবে ২০২২-২৩ মৌসুমের ২৬ ম্যাচেই পেয়েছেন ১৫ গোলের দেখা আর করেছেন ১৫ অ্যাসিস্ট। পরিসংখ্যান বলছে, যে কোনো বিচারেই মেসি চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন।
যদিও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। আসলে বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসিদের কাছে হেরে যাওয়া এখনো মেনে নিতে পারছে না ফরাসিরা। যে কারণে মেসিকে চলতি মৌসুম শেষেই ছাড়তে হতে পারে পিএসজির। আগামী জুনে মেসির সঙ্গে পিএসজির দুই বছরের চুক্তি শেষ হচ্ছে। পিএসজির পক্ষ থেকে এক বছরের নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব পছন্দ হয়নি মেসি-পক্ষের। নতুন চুক্তির বিষয়ে গত সপ্তাহে মেসির বাবা জর্জ মেসির সঙ্গে পিএসজির বৈঠক ছিল নিষ্ফলা।
পিএসজির সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর ভক্তদের মনে প্রশ্ন, পিএসজিতে না থাকলে মেসির ভবিষ্যৎ ঠিকানা কোথায় হচ্ছে? শোনা গিয়েছিল, বার্সেলোনা মেসিকে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু গেট ফ্রেঞ্চ ফুটবল নিউজকে মেসির বাবা জানিয়েছেন, বার্সেলোনা থেকে মেসিকে কোনো অফার দেওয়া হয়নি।
এদিকে মেসির ভাই ম্যাথিয়াস মেসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, কাতালানরা বিশ্বাসঘাতক। আমরা বার্সেলোনায় আর ফিরছি না। অন্তত সভাপতি পদে হুয়ান লাপার্তো থাকা অবস্থায় তো নাই-ই। উল্লেখ্য, বার্সার বর্তমান সভাপতি লাপার্তো মেসিকে ধরে রাখার চেষ্টা না করাতেই ক্ষেপেছেন ম্যাথিয়াস।
বিশ্বসেরা মেসির জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরবের আল হিলাল আর আল ইত্তিহাদ ক্লাব। পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বাৎসরিক ২০০ মিলিয়ন ইউরো বেতনে এখন খেলছেন সৌদি ক্লাব আল নাসেরে। সেই দেশের ক্লাব মেসিকে চায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো পারিশ্রমিকে। মেসির জন্য আমেরিকার মেজর লিগ সকারের দরজাও খোলা। ইন্টার মিয়ামির অন্যতম কর্ণধার ডেভিড বেকহ্যাম চাইছেন মেসিকে। কিন্তু মেসির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তাই মেসির ক্লাব ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ভক্তরা। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল
সোনালীনিউজ/এমটিআই