ঢাকা : শনিবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ দলের কোনো অনুশীলন ছিল না, ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল আফগানিস্তানের। তাই খেলোয়াড়দের দেখার জন্য সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে দীর্ঘ জটলা, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। দিনভর এই ভিড় টিকিটের জন্য। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে সন্ধ্যায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয়ের পর এখন টিকিট প্রত্যাশীরা দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশকে জিততে দেখার আশাতেই মাঠে যাচ্ছেন। সিরিজ জয় তাই এখন হয়ে গেছে জনদাবি!
অথচ সিরিজটা শুরুর আগেও আফগানদেরই এগিয়ে রেখেছিলেন অনেকে। কাগজে-কলমে তো আফগানরাই এগিয়ে। টি-টোয়ন্টির বিশ্ব র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশে আফগানদের তিন বোলার। তাদের বিপক্ষে জিততে বড় বড় দলেরই ঘাম ছুটে যায়। বাংলাদেশ যদিও প্রথম ম্যাচটা সহজ পরিস্থিতিকে কঠিন করে জিতেছে। তাতে দর্শকদের হৃৎকম্প বাড়লেও নাটকীয় জয়ে আনন্দের মাত্রাটাও বেড়েছে। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর আত্মবিশ্বাস তো বেড়েছেই, সেই সঙ্গে দেখা গেছে দলের তরুণদেরও কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিতে।
[203105]
প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক তাওহীদ হৃদয় সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, ‘এই টাইপের ম্যাচ যার সঙ্গে জিতি না কেন, কনফিডেন্স সব ক্রিকেটারকে দেবে। এই রকম ম্যাচ কমই হয়, আমি মনে করি। আর আমি যেহেতু ছিলাম, আলহামদুল্লিলাহ ভালো ফিল করতেছি। এই রকম সিচুয়েশন সবসময় আসে না। এই রকম যখন অবস্থা আসে, তখন সব ব্যাটারের শেষ করে টার্গেট থাকে। সেটা করতে পেরে আলহামদুল্লিলাহ।’
কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মিশে আছে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থেকে পাওয়া জয়ের আনন্দও, ‘আমরা আজকের (শুক্রবার) ম্যাচটাতে সবাই অবদান রেখেছি। শুধু শরিফুল, আমি, শামীম না। আমরা তিনজন একসঙ্গে বিশ্বকাপ খেলেছি এইজন্যই না। শুরু থেকে যদি দেখেন, তাসকিন ভাই যারা বোলার, প্রত্যেকটা বোলার সাকিব ভাই থেকে শুরু করে সবাই খুব ভালো শুরু করেছিল। এরপর আমি মনে করি, সবার অবদান ছিল। সবাই ফিল্ডিংয়ে হোক, সবদিক থেকে অবদান রেখেছে।
বিশেষ করে যদি আমাদের (বিশ্বকাপজয়ী) কথা বলেন আমরা দল হিসেবে যতটুকু প্রচেষ্টা করা যায়, যতটুকু বেস্টটা দিয়ে টিমের জন্য কন্ট্রিবিউট করা যায় সব সময় ট্রাই ওটা করি এবং প্রত্যেকটা প্লেয়ার সেটাই করে। আমাদের মাথায় সব সময় থাকে যে আমরা দেশের জন্য খেলব, দেশকে ভালো রেজাল্ট এনেস দেব।’
মাঠের ফিল্ডিংয়ে সবার চেষ্টাই ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের চনমনে, উদ্যমী ফিল্ডিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সবাই কতটা একাগ্র। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বুদ্ধিদীপ্ত ফিল্ড প্লেসমেন্ট এবং বোলিং পরিবর্তনও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এতকিছুর ভিড়ে টপ অর্ডারের ব্যাটিংটা খানিকটা শঙ্কার জায়গা। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব, তিনজনই যথাক্রমে আউট হয়েছেন ১৮, ১৪ ও ১৯ রান করে।
অর্থাৎ শুরুটা পেয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। এই জায়গাটাতে চণ্ডিকা হাতুরুসিংহে নিশ্চয়ই উন্নতির ছাপ দেখতে চাইবেন। সাত নম্বরে শামীম হোসেন পাটোয়ারী শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, ওয়ানডে দলেও একই পজিশনে খেলার জোরালো দাবি জানিয়ে রাখলেন তার সুইপ আর স্কুপে।
ব্যাটিংয়ের শেষটা যেমন হৃৎকম্পন বাড়িয়েছে, তেমনি বোলিংয়ের শেষটাও হতে পারত আরও ভালো। শেষ ৫ ওভারে ২০০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছে আফগানিস্তান, এই জায়গাটাতেও নিশ্চয়ই লাগাম পরাতে চাইবেন কোচ। একাদশে সুযোগ পেতে পারেন হাসান মাহমুদ, সেক্ষেত্রে বিশ্রামে রাখা হতে পারে মোস্তাফিজুর রহমানকে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে হাসান রেখেছিলেন বড় ভূমিকা, আফগানদের বিপক্ষে তাকে খানিকটা বাজিয়ে দেখতেই পারেন কোচ। সবশেষ ম্যাচে একাদশে জায়গা পাননি আফিফ হোসেন। শামীম ভালো করায় আজও বোধহয় তাকে দর্শক হয়ে থাকতে হবে।
আফগান কোচ জনাথন ট্রট বেশিরভাগ দিনেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন, এই সিরিজে শুক্রবার খুব সম্ভবত সপ্তম বারের মতো এসেছিলেন। সাবেক এই ইংরেজ ক্রিকেটার যদিও নুর আহমেদকে খেলানোর ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি, অধিনায়ক রশিদ খানের কথায় গুজরাট টাইটানসের হয়ে আইপিএল মাতানো এই বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের একাদশে থাকার আভাস।
উইনিং কম্বিনেশন ভাঙার রেওয়াজ নেই বাংলাদেশ দলে। তাই আজ হয়তো একই একাদশ। আফগানদের একাদশে বদলের সম্ভাবনা। শেষটা রাঙানোর মরিয়া চেষ্টা আফগানিস্তানের, বাংলাদেশের সামনে প্রথমবারের মতো আফগানদের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারানোর হাতছানি। টিকিট প্রত্যাশী মানুষের ঢল বলছে, রবিবারেও ভরা থাকবে সিলেটের গ্যালারি। সবারই প্রত্যাশা, রবিবারেও জিতবে বাংলাদেশ। গাঁটের টাকা খরচ করে, কেই-বা মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে চায়!
সোনালীনিউজ/এমটিআই