শচিনের মাঠে সাকিবের প্রস্তুতি

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৩, ১১:৫৮ এএম

ঢাকা : নিয়মিত সেই দৃশ্যের দেখা মিলল। বাংলাদেশ জাতীয় দলের টিম কনসালট্যান্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম মাঠে এসে ছুটে গেলেন উইকেট দেখতে। সীমানা ছোট, বাদামি মাটির উইকেট। খুব সহজেই ব্যাটে বল আসে। সমান বাউন্স। তাতে রান উৎসব হয়। গত পরশু যেই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯৯ রান করেছিল তার পাশের উইকেটেই তাদের বিপক্ষে মঙ্গলবার খেলবে বাংলাদেশ।

শ্রীধরণের পথ ধরে প্রতিদিন উইকেট দেখতে আসেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু রোববার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দেখা মিলল না হাথুরুসিংহের। বেলা ২টায় অনুশীলন থাকলেও ঘণ্টাখানেক আগেই হাজির বাংলাদেশ। টিম বাস থেকেও কোচ নামলেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাথুরুসিংহে হোটেলেই অবস্থান করছেন। মুম্বাইয়ের প্রচণ্ড গরমে তিনি কুপোকাত! ‘পানিশূন্যতার কারণে খারাপ বোধ করায় অনুশীলনেও আসেননি। হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি।’, বলেছেন জাতীয় দলের ম্যানেজার রাবীদ ইমাম।

হাথুরুসিংহের পরিবর্তে গতকাল শচিনের মাঠে অনুশীলন চালিয়ে নিয়েছেন শ্রীধরণ। সহকারী কোচ নিক পোথাসকেও বেশ সক্রিয় মনে হয়েছে; বিশেষ করে তাওহীদ হৃদয় বারবার এগিয়ে এসে শট খেলার চেষ্টা করছিলেন তখন ব্যাট-প্যাডের রসায়ন ঠিক করে দিয়েছেন। এ ছাড়া শান্ত, মিরাজদের ব্যাটিংয়ের সময়ও বেশ ভোকাল ছিলেন পোথাস।

[209502]

তবে অনুশীলনের সবার দৃষ্টি ছিল সাকিব ও তাসকিনের দিকে। তাসকিন কাঁধের হালকা চোটে ভুগছেন। সাকিবের সমস্যা পায়ে। ভারতের বিপক্ষে দুজনের কেউই খেলেননি। মঙ্গলবারও খেলবেন কি না, নিশ্চিত করে কেউ বলছেন না। তবে সাকিবের আজকের অনুশীলন ছিল পুনের মতো প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। দফায় দফায় নেটে সময় দিয়েছেন। যার যোগফল করলে অন্তত ৫০ মিনিট দাঁড়াবে। পুনেতে করেছিলেন ৪৫ মিনিট। অনুশীলনে নেমে শুরুতে ফুটভলি খেলার পর ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। তাসকিনের আজ বোলিংয়ের কথা থাকলেও স্বস্তি বোধ না করায় বিরত থেকেছেন। ফিজিওর শুশ্রুষা নিয়েছেন। বারবার তাকে কথা বলতে দেখা গেছে কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে মুম্বাইয়ের এই ড্রেসিংরুমে প্রবেশের অভিজ্ঞতা আছে সাকিব, মোস্তাফিজের। আইপিএল খেলার সুবাদে। তবে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ এই মাঠে ভারতের বিপক্ষে যে ম্যাচটি খেলেছিল, সেই দলের খালেদ মাহমুদ এখন দলের টিম ডিরেক্টরের দায়িত্বে। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু প্রধান নির্বাচক। মাঠে ফিরে অতীতে ফিরে গেলেন মাহমুদ, ‘মাঠটা তো দারুণ সুন্দর। আগে এতটা সুন্দর আর গোছানো ছিল না। এখন একদম পরিপাটি। সংস্কারের পর সব পাল্টে গেছে।’ ভারতের বিপক্ষে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে ৭.২ ওভারে ১২ রানে ২ উইকেট পেয়েছিলেন মাহমুদ। আর মোহাম্মদ রফিক ১০ ওভারে ২১ রানে ৫ মেডেনে নেন ২ উইকেট।

রান উৎসব হলেও মাহমুদ জানেন মাথা খাটিয়ে বোলিং করলে দিনটা বোলারদেরও হতে পারে, ‘হয়তো সবাই মনে করছে এখানে কেবল রানই হয়। রান তো হবেই। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী, মাথা খাটিয়ে বোলাররা বোলিং করলে সফল হওয়ার সুযোগ থাকবে। আমাদের বোলারদের ওই চেষ্টা করতে হবে।’

অধিনায়ক সাকিবের বার্তা নিশ্চয় এমনই থাকবে। কিন্তু তার উপস্থিতি নিয়েই তো যত ধোঁয়াশা। পুনের নেটে ব্যাট হাতে যে দোর্দ- প্রতাপ দেখিয়েছিলেন ১৫০ কিলোমিটার দূরের মুম্বাইতেও তা টেনে এনেছেন। ফুটভলি খেলে গা গরমের পর নকিংয়ে নিজেকে তৈরি করেন সাকিব। শুরুতে নেটে ঢুকে পেসারদের আক্রমণ সামলে নেন। পরে থ্রো ডাউনে খেলে প্রবেশ করেন স্পিনারদের নেটে। ব্যাটিং দেখে বোঝা যাচ্ছিল, শরীরে জড়তা নেই একদমই; বরং বড় শট খেলার চেষ্টায় যেভাবে নিজের পজিশনে দাঁড়িয়ে নড়াচড়া করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল, নেটে নয় ম্যাচেই ব্যাটিং করছেন। রান করছেন অনায়েসে। তিন নেটে আলাদা সময় দেওয়ার পর পেছনে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নেন। এরপর ২২ গজে ফিরে আবার নিজেকে ঝালিয়ে নেন। ব্যাটিংয়ে কোনো সমস্যা না হলেও তার রানিং এবং বোলিংয়ে কোন অবস্থায় আছে তা ছিল দেখার। এদিন দুটোর একটিও না করায় তার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জায়গা থেকে গেল।

বাংলাদেশের অনুশীলনে দেখা মিলে তরুণ লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকিকে। বয়সভিত্তিক দলের লেগ স্পিনারকে মুম্বাই উড়িয়ে আনা হয়েছে নেটে বোলিংয়ের জন্য। ভিসা জটিলতায় তার আসতে দেরি হয়েছে। নয়তো চেন্নাইয়ে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কয়েকটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। নেটে মিরাজ, মেহেদি ও চেন্নাইয়ের নেট বোলার কারাপ্পা জিয়াসের সঙ্গে সমানতালে বোলিং করে গেছেন ওয়াসি। প্রোটিয়া দলে আছেন রিস্ট স্পিনার তাবরেজ শামসি। যদিও এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার। একাদশে তাকে নেওয়া হলে ব্যাটসম্যানদের যেন কোনো সমস্যা না হয় তাই আগেভাগেই নিজেদের প্রস্তুত রাখছেন সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের বিশ্বকাপের ফর্ম বাংলাদেশকে ভাবাতে পারে বেশ। প্রোটিয়ারা দুর্দান্ত গতিতে ছুটছে। যদিও নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বাজে দিনও কাটিয়েছে। তবে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করতে পারে দুই দলের শেষ চার মুখোমুখির রেকর্ড। যেখানে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টি। দক্ষিণ আফ্রিকা ১টি। ২০১৯ বিশ^কাপে তাদের হারিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর দুই দল কেবল একটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে। যাতে বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। শক্তিতে, সামর্থ্য পরিসংখ্যানে দুই দল কাছাকাছি অবস্থানেই আছে। মুম্বাইয়ের ছোট সীমানার মাঠে লড়াইটাও উন্মুক্ত। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি নিতে পারে কি না, সেটাই দেখার।

এমটিআই