ঢাকা : দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশ হেরেছে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। ফিকে হয়ে গেছে বাংলাদেশের কোটি মানুষের স্বপ্ন। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মঞ্চে বাংলাদেশের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা। কাগজে-কলমে যদিও তা সম্ভব। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
দেশের হারের মাঝেও জ্বলজ্বল করছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রাঙা সেঞ্চুরির ইনিংসটি, যেন কয়লার খনি থেকে উঁকি মারা হীরক খণ্ড। সমান ১১১ বলে করেছেন ১১১ রান। ৮১ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে গেছেন ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সেই ইনিংস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, সেঞ্চুরি করার কোনো লক্ষ্য ছিল না। আমি চেয়েছিলাম লম্বা সময় ব্যাটিং করতে। যখন মোস্তাফিজ আর আমি ব্যাট করছিলাম, তখন ওকে বলছিলাম, শুধু টিকে থাকার চেষ্টা কর। যতখানি সম্ভব এগোতে চাচ্ছিলাম কারণ রান রেট একটা বড় বিষয় এই প্রতিযোগিতায়। আমরা আগে আউট হয়ে গেলে দলের রান রেটে বড় প্রভাব পড়বে।’
নবম উইকেটে মোস্তাফিজকে নিয়ে ৫৬ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। অথচ এই মাহমুদউল্লাহরই এবার বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। মার্চ মাসের পরে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত গায়ে চাপাতে পারেননি লাল-সবুজ জার্সি। সেই সময়ে কীভাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন জানতে চাওয়া হলে মাহমুদউল্লাহ বলেন,‘আমি ঠিক জানি না, নিজেকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছি। হয়তো আল্লাহ আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। চেষ্টা করেছি ফিটনেস ঠিক রাখতে, কষ্ট করতে, এর বাইরে তো আমার করার কিছু ছিল না।’
[209634]
মাঝের সময়টাতে দলে ছিলেন না ঠিকই। কিন্তু ফিরে এতো নিচে ব্যাটিং করতে হচ্ছে, ‘এটাকে তিনি কি ঠিক মনে করছেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদউল্লাহ থেমে গিয়েও বলে ফেলেন অনেক কিছুই। জানান, ‘এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যদিও আমার অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু এখন ওইসব কথা বলার জন্য সঠিক সময় নয়।’
২২৫টি ওয়ানডের দীর্ঘ ক্যারিয়ার। রান আছে পাঁচ হাজারের বেশি। আর সেঞ্চুরি করেছেন চারটি। সেগুলোর সবগুলো আইসিসির বড় প্রতিযোগিতায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একটি, আর বিশ্বকাপে তিনটি।
মাঝখানে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। অনেক নাটকের পর বিশ্বকাপ দল দিয়ে আবার ফিরেছেন জাতীয় দলে। ফেরার পর থেকেই পালন করে যাচ্ছেন নিজের দায়িত্ব। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা রান সংগ্রাহক, দল থেকে বিশ্রামের নামে দূরে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই। ৪ ম্যাচে তিন ইনিংস সুযোগ পেয়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৯৮ রান। বিশ্বকাপের বাকি আছে আরো চার ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহ তাই দেশ আর দল নিয়েই ভাবতে চান, ‘আমি এই মুহূর্তে এটুকুই বলতে পারি যে আমি দেশের জন্য খেলতে চাইছি, দলের জন্য অবদান রাখতে চাইছি। যদি দলের জয়ের জন্য কিছু করতে পারি, তাহলে আরও ভালো লাগবে।’
[209633]
রিয়াদ আরো বলেন, ‘আমরা দল হিসেবে চাই বাংলাদেশকে জয় উপহার দিতে। তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি, আমরা আসলে খুবই পরিশ্রম করছি। কিন্তু যা চাইছি তা ঘটছে না। তবে আপনারা অবশ্যই একটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখতে পাবেন।
মাহমুদউল্লাহ দেখিয়েছেন, প্রতিকূলতার মাঝে কীভাবে ফিরে আসতে হয়। তাকে দেখেই এখন এগিয়ে আসার পালা দলের আর বাকি সবার। তাহলেই ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশ।
এমটিআই