ঢাকা : ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির স্মৃতি ভুলে যাননি তো? যে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র। কুয়ালালামপুরে সেই টুর্নামেন্ট দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে পেয়েছে চিরস্থায়ী জায়গা। ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় এখনো রোমাঞ্চ ছড়ায়। ওই টুর্নামেন্টের আরেকটি জয়ও স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে। সেটি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩ ওভারে ১৪১ রান। লক্ষ্যে নেমে মাত্র ১৫ রানে ৪ উইকেট নেই। শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিলেন অধিনায়ক আকরাম খান। খেলেছিলেন অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস। এরপর পেড়িয়ে গেছে ২৬ বছর। দুদেশের ক্রিকেটেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। বাংলাদেশ সমীহ জাগানিয়া দল হিসেবে ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
অন্যদিকে ডাচদের ক্রিকেট পড়ে আছে একই জায়গায়। এখনো সে দেশের মানুষ ক্রিকেটটা খেলেন শখের বসে। সেই ডাচদের সঙ্গে আজ বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সেই ম্যাচের আগে ভীষণ চাপে বাংলাদেশ শিবির।
বিশ্বকাপে টানা হারের হতাশা তো আছেই, অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ বলেই আছে জয়ের আকাশচুম্বী প্রত্যাশার চাপ। তাই সেই ২৬ বছর পর এসেও ডাচদের বিপক্ষে জয় পাওয়া নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সাকিবদের।
আফসোস, কিলাত ক্লাব গ্রাউন্ডে আকরাম খানের এনে দেওয়া সেই জয়টা পায়নি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তবে অফিশিয়াল যে দুটি ওয়ানডে ডাচদের সঙ্গে খেলেছে বাংলাদেশ, সেখানেও আছে হারের লজ্জা। ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের গ্লাসগোতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডাচরা বাংলাদেশকে দিয়েছিল ৬ উইকেটে হারের স্বাদ। তার শোধ অবশ্য বাংলাদেশ নেয় পরের বছর আঙিনার বিশ্বকাপে, চট্টগ্রামে একই ব্যবধানে ডাচদের হারিয়ে। সেটাই ছিল শেষ দেখা। এক যুগ পর দু’দল যখন মুখোমুখি হচ্ছে, তখন তাদের দাঁড় করাতে হচ্ছে একই কাতারে!
[209777]
আপনি চাইলে ডাচদের একটু এগিয়েও রাখতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে এই আসরের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানে (৩০৯ রান) না হারলে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের ওপরেই থাকত তাদের অবস্থান। এখন তলানিতে আছে ডাচরা, রানরেটে কিছুটা এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ আটে। লিগপর্বের মাঝামাঝি এসে এখনই দশ দলের কাউকেই সেমিফাইনালের হিসেব থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে নিচের দিকের দলগুলোর সম্ভাবনা বড্ড ক্ষীণ, প্রায় অসম্ভবও বলতে গেলে। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে বাংলাদেশকে কেবল শেষ চার ম্যাচ জিতলেই চলবে না, একই সঙ্গে তাদের পক্ষে আসতে হবে অন্য অনেকগুলো ম্যাচের ফলাফল, মেলাতে হবে জটিল সমীকরণ। ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ অবশ্য অত জটিলতায় যেতে চাইলেন না। কাঁধের চোটে শেষ দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি। তবে বিশ্রামের পর দু’দিন নেটে ফুল লাইন-আপ নিয়ে বোলিং করেছেন। তিনি দলে ফিরলে হয়তো জায়গা ছেড়ে দিতে হবে হাসান মাহমুদকে। বাংলাদেশ দলে ওই একটাই পরিবর্তনের সম্ভাবনা।
সংবাদ সম্মেলনে এসে তাসকিন দলের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। ‘(সেমিফাইনালের সম্ভাবনা) এখনো শেষ হয়ে যায়নি। চারটি ম্যাচ আছে। আমরা যদি এই চারটি জিতি, যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। তখন রানরেট একটা ইস্যু হবে এবং অন্য দলগুলো কী করে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এই মুহূর্তে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ যেতে চাই।’
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরাটা দিতে না পারার কথা নিজেই বলেছেন তিনি, ‘ব্যাটিং-বোলিংটা আমাদের প্রত্যাশা মতো হচ্ছে না। এখানে উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আমরা জানি, এরচেয়ে অনেক ভালো ক্রিকেট আমরা খেলতে পারি। আশা করছি কালকে (আজ) সেরাটা দিয়ে যেসব জায়গায় ভুল হয়েছে, সেসব জায়গায় উন্নতি করব। আমাদের জয়ের কোনো বিকল্প নেই। যেসব জায়গায় ভালো হয়নি, সেসব জায়গায় আরও ১০-১৫ ভাগ বাড়তি দিয়ে যদি খেলতে পারি, তাহলে ভালো কিছু হবে।’
দল খারাপ করলে ভেতর-বাইরে ওঠা সমালোচনাটা মেনে নিয়ে তাসকিন বলেছেন সুদিন ফেরানোর কথা, ‘হয়কি, যখন খারাপ হয়, তখন আমাদের এই ১৫ জনকেই দায়িত্ব নিতে হয়। এখন সব প্রেশার নিচ্ছি, সমস্যা নেই। আবার যখন ভালো হবে, তখন সবাই মিলে উপভোগ করব।’
ডাচদের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রায়ান কুক দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। সুবাদে বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে তার আছে গভীর ধারণা। কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে এই কোচ শিষ্যদের দিচ্ছেন ভেতরকার নানা তথ্য। যা কাজে লাগিয়ে, নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেই বাংলাদেশকে হারানো পরিকল্পনা করছে ডাচরা। সে কথাই কাল বলেছেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস, ‘আমরা প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলি। এটা প্রতিটি ম্যাচের মতোই বড় ম্যাচ।’
মাঠে এসে অবশ্য ব্যাট-বলে অনুশীলন করেননি সাকিব। ঘুড়ে ঘুড়ে দেখেছেন সতীর্থদের ঘাম ঝড়ানো। কখনো গল্প জুড়ে দিয়েছেন কোচিং স্টাফ কিংবা সতীর্থদের সঙ্গে। দুজনকে সঙ্গী করে ইডেনের সবুজ গালিচায় ঢিমেতালে চক্কর দিতেও দেখা গেল।
বোঝা গেছে, ঢাকার দুই সেশনে ছোটবেলার গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিমের দেওয়া দাওয়াই সঙ্গী করে আজ মাঠে নামবেন তিনি। তাতে যদি হাসে সাকিবের ব্যাট, কাটবে ডাচদের নিয়ে দুর্ভাবনা। ঠিক যেমনটা ২৬ বছর আগে হেসেছিল আকরাম খানের ব্যাট।
এমটিআই