ঢাকা: বারবার ভাগ্যের কাছেই যেন হেরে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভাগ্যটাকে কোনোভাবেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা চৌকার্স খ্যাত দলটি। সকলেরই জানা কঠিন পরিশ্রম আর চেষ্টায় ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু যেটা নির্ধারিত শুধু সেটাই বদলানো যায় না।
এক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার সকল চেষ্টা যেন এই এক জায়গায়ই নির্ধারিত হয়ে আছে। না হলে দুর্দান্ত খেলেও বারবার কেন একই জায়গায় এসে খেই হারিয়ে ফেলছে প্রোটিয়ারা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের আগের চার সেমিফাইনালের ব্যতিক্রম ফল হয়নি এবারও। হ্যান্সি ক্রোনিয়ে, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের মতো টেম্বা বাভুমার দলও সেমিফাইনালের গেরো খুলতে পারল না। ইডেনে গার্ডেনসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ উইকেটে হেরে একরাশ হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল প্রোটিয়ারা।
রাউন্ড রবিন লিগে যাদেরকে ১৩৪ রানে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই অজিদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তারা হয়ে গেল অচেনা। লিগ পর্বে আগে ব্যাটিং করা পাঁচ ম্যাচেই ৩০০-এর বেশি রান করেছিল প্রোটিয়ারা। এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৪২৮ রানও তুলেছিল তারা। চার ম্যাচে রান করেছিল সাড়ে তিন শর বেশি। কিন্তু আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গুটিয়ে গেল ২১২ রানে।
[211364]
সারা বছর দারুণ খেলে, বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হবে, এটাই যেন নিয়ম দক্ষিণ আফ্রিকার। শুধু ওয়ানডে নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তারা সেমিফাইনালের ফাঁড়া কাটাতে পারেনি। দুর্দান্ত খেলে বারবার সেমিতে এসে থেমেছে। সব রকমের ভুলও তারা এই সেমিতেই যেন করে।
বিশ্বকাপে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার এটি চিরায়ত চেনা দৃশ্য। সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও তাদের ফল একই রকম। এবার নিয়ে নিজেদের পাঁচ সেমিফাইনালের তিন বারই ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হলো অজিদের কাছে হেরে।
সর্বশেষ ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে এক বল বাকি থাকতে বৃষ্টি আইনে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ২৯৮ রান তাড়া করেছিল নিউজিল্যান্ড। ডেল স্টেইনের করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে কিউইদের ফাইনালে তোলেন গ্রান্ট এলিয়ট। ৪ উইকেটে জিতেছিল তারা। সেদিন অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে স্টেইন, ডি ভিলিয়ার্স, মরনে মরকেলদের অশ্রুতে ভিজেছিল মাঠের সবুজ ঘাস। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ছিলেন হাশিম আমলা, ফাফ ডু প্লেসি, জেপি ডুমিনির মতো তারকা ক্রিকেটাররাও।
২০০৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেন্ট লুসিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচে রিকি পন্টিংয়ের দলের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিল তারা। সেবারও গ্রায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস, হার্শেল গিবস, ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেটাররা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রোটিয়াদের ট্রাজেডি এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে ক্রিকেট ইতিহাসে। সেই দুঃস্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে অ্যালান ডোনাল্ডকে। জেতা ম্যাচটি এজবাস্টনে অজিদের বিপক্ষে ম্যাচটি টাই হয়ে যায়। সুপার সিক্সে নেট রান রাটে এগিয়ে থাকায় অস্ট্রেলিয়া চলে যায় ফাইনালে।
তার আগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুজনার। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২১৪ রান তাড়া করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২০৫ রানে ৯ উইকেট হারায় তারা। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি চার মেরে ম্যাচ টাই করেন ক্লুজনার। শেষ চার বলে যখন ১ রান দরকার, তখন ড্যামিয়েন ফ্লেমিংয়ের চতুর্থ বলে রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান ডোনাল্ড।
[211366]
নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেও চমক দেখিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২২ বছর নির্বাসনের পর ১৯৯২ বিশ্বকাপ দিয়ে ক্রিকেটে ফেরে তারা। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে নিশ্চিত করেছিল সেমিফাইনালে। সিডনিতে বৃষ্টিবিঘ্নিত সেমির ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে ২৫২ রান তোলে ইংল্যান্ড। বৃষ্টির কারণে ম্যাচের পরিধি কমে এসেছিল ৪৫ ওভারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটা পর্যায়ে ১৩ বলে ২২ রান প্রয়োজন ছিল, তখন আবারও নেমেছিল বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পর প্রোটিয়াদের নতুন লক্ষ্য হয় ৭ বলে ২২ রান, এরপর আবারও বৃষ্টি হলে তাদের লক্ষ্য হয় ১ বলে ২২ রান! শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে ১৯ রানের জয়ে ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড।
এআর