টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

পুরান ঝড়ে আফগানদের উড়িয়ে উইন্ডিজের চারে চার

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
পুরান ঝড়ে আফগানদের উড়িয়ে উইন্ডিজের চারে চার

ঢাকা : প্রথম তিন ম্যাচে দুই দলই ছিল অপ্রতিরোধ্য। প্রতিপক্ষকে তেমন লড়াইয়ের সুযোগ দেয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান। মুখোমুখি লড়াইয়ে থামল আফগানিস্তানের জয়যাত্রা। বড় জয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করল স্বাগতিকরা।

সেন্ট লুসিয়ায় বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে আফগানিস্তানকে ১০৪ রানে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২১৯ রানের লক্ষ্যে ২২ বল বাকি থাকতেই ১১৪ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা।

চার ম্যাচে চতুর্থ জয়ে অপরাজিত থেকেই সুপার এইট শুরু করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে প্রি-সিডিং পদ্ধতির কারণে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েও 'সি২' হিসেবে দুই নম্বর গ্রুপে সেরা আটে খেলবে তারা। নিউ জিল্যান্ডকে বিদায় করা আফগানিস্তান থাকছে এক নম্বর গ্রুপে।

আফগানদের উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের জয়ের নায়ক নিকোলাস পুরান। একগাদা রেকর্ড গড়ে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় ৫৩ বলে ৯৮ রানের ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। অনুমেয়ভাবে তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

[225812]

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে যেতে হয় পুরানকে। চতুর্থ ওভারে তিনি শুরু করেন ঝড়। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে তিন ছক্কার সঙ্গে মারেন দুটি চার। ৮ বলের ওই ওভারে অতিরিক্ত ১০সহ মোট ৩৬ রান দেন ওমারজাই।

টি-টোয়েন্টিতে এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। বিশ্বকাপে এর আগে এক ওভারে ৩৬ রান দেন শুধু স্টুয়ার্ট ব্রড। ২০০৭ সালে ইংলিশ পেসারের ওভারে ৬টি ছক্কা মারেন ভারতের ইউভরাজ সিং।

পুরানের ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৯২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপে প্রথম ছয় ওভারে এটিই সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে ৯১ রান করেছিল নেদারল্যান্ডস।

এরপর কিছুটা ঝিমিয়ে আসে রানের গতি। পরের ১০ ওভারে আরও ২ উইকেট হারিয়ে ৬০ রান করতে পারে ক্যারিবিয়ানরা। প্রথম ১৩ বলে ৩৬ রান করা পুরান পরের ২৭ বলে নেন মাত্র ১৯ রান। মাঝের এই সময়ে মারতে পারেননি কোনো বাউন্ডারি।

সপ্তদশ ওভারে নাভিন উল হকের বলে চার মেরে বাউন্ডারি-খরা কাটান পুরান। পরের ওভারে রাশিদ খানের ওপর দিয়ে বইয়ে দেন ঝড়। তিন ছক্কার সঙ্গে একটি চারে ২৪ রান হজম করেন আফগান অধিনায়ক।

শেষ ওভারে নাভিনের প্রথম দুই বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরির দুয়ারে পৌঁছে যান পুরান। এক বল পর প্রায় অসম্ভব দুই রান নিতে গিয়ে ওমারজাইয়ের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন তিনি। বিশ্বকাপে নব্বই ছুঁয়ে রান আউটে কাটা পড়া দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান পুরান।

[225817]

২০১০ সালে বারবাডোজে ভারতের বিপক্ষে ৬৬ বলে ৯৮ রান করে রান আউট হন পুরানের পূর্বসূরী ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল। সেদিনও ইনিংসে বল বাকি ছিল দুটি।

অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতায় পাশে বসার দিন গেইলের ছক্কার রেকর্ড নিজের করে নেন পুরান। এই সংস্করণে ৮৪ ইনিংসে তার ছক্কা এখন ১২৮টি। অবসরের আগে ৭৫ ইনিংসে ১২৪টি ছক্কা মেরেছিলেন গেইল।

পুরানের রেকর্ডময় ইনিংসের সঙ্গে জনসন চার্লস ২৭ বলে ৪৩, শেই হোপ ১৭ বলে ২৬ ও রভম্যান পাওয়েল ১৫ বলে ২৬ রান করলে ২১৮ রানে পৌঁছায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপে এটিই তাদের সর্বোচ্চ।

২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০৫ রান করেছিল তারা। পরে ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ক্যারিবিয়ানরা থামে ২০৫ রানে।

আগের তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়া ফাজালহাক ফারুকি এদিন পুরো ৪ ওভার শেষ করতে পারেননি। ৩ ওভারে খরচ করেন ৩৮ রান। রাশিদের ৪ ওভারে আসে ৪৫ রান। ৩৬ রানের ওভারের পর আর বোলিং পাননি ওমারজাই। মিতব্যয়ী বোলিংয়ে নুর আহমেদ ৪ ওভারে দেন ২০ রান।

বড় রান তাড়ায় ব্যর্থ টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে শতকছোঁয়া জুটি গড়া আফগানিস্তানের দুই ওপেনার। প্রথম ওভারে আকিল হোসেনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ।

এরপর ইব্রাহিম জাদরান চেষ্টা করেন রানের চাকা সচল রাখতে। আর উইকেট না হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪৫ রান করে আফগানিস্তান। সপ্তম ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন গুলবাদিন নাইব। ১৮ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আফগানরা।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮ বলে ৩৮ রান করেন ইব্রাহিম। ওমারজাইয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ২৩ রান। শেষ দিকে রাশিদের ১১ বলে ১৮ রানে একশ পেরোয় আফগানিস্তান।

১৪ রানে ৩ উইকেট নেন ওবেড ম্যাককয়। দুই বাঁহাতি স্পিনার আকিল ও গুডাকেশ মোটি ধরেন ২টি করে শিকার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২১৮/৫ (কিং ৭, চার্লস ৪৩, পুরান ৯৮, হোপ ২৫, পাওয়েল ২৬, রাসেল ৩*, রাদারফোর্ড ১*; ফারুকি ৩-০-৩৮-০, ওমারজাই ২-০-৪১-১, রাশিদ ৪-০-৪৫-০, নাভিন ৪-০-৪১-১, নুর ৪-০-২০-০, নাবি ১-০-১৫-০, গুলবাদিন ২-০-১৪-২)

আফগানিস্তান: ১৬.২ ওভারে ১১৪ (গুরবাজ ০, ইব্রাহিম ৩৮, গুলবাদিন ৭, ওমারজাই ২৩, নাজিবউল্লাহ ০, জানাত ১৪, রাশিদ ১৮, নুর ২, নাভিন ৪, ফারুকি ০*; আকিল ৪-১-২১-২, রাসেল ২.২-০-১৭-১, জোসেফ ৩-০-৩০-১, মোটি ৪-০-২৮-২, ম্যাককয় ৩-০-১৪-৩)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৪ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নিকোলাস পুরান

এমটিআই