ঢাকা : পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে ট্রফিটি হাতে পেয়ে গর্জনে-উচ্ছ্বাসে উদযাপন করলেন রোহিত শার্মা। এরপর ট্রফিটি তুলে দিলেন তিনি ভিরাট কোহলির হাতে। নিজের কাছে কয়েক মুহূর্ত রেখেই রাহুল দ্রাবিড়কে ডাকলেন কোহলি। বিশ্ব সেরার স্মারকটি কোচের হাতে তুলে দিলেন তিনি। এরপর তাকেই মধ্যমণি করেই আরেক দফা আরেক দফা উল্লাসের পালা চলল ভারতের ক্রিকেটারদের।
সেখানেই শেষ নয়। বিজয়ীর বেশে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ শেষে সবাই জড়ো হলেন উইকেটের কাছে। এবার দ্রাবিড়কে কোলে তুলে নিলেন রোহিত ও কোহলি। সাবেক সতীর্থ ও বর্তমান কোচকে শূন্যে ভাসিয়ে দিলেন তারা বারবার। এই ভালোবাসা, এই সম্মান তো তার প্রাপ্যই! পরে সংবাদ সম্মেলনেও ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, এই ট্রফি দ্রাবিড়েরই সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য।
[226600]
যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দ্রাবিড় ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই টুর্নামেন্টই ভারতের প্রধান কোচ হিসেবে তার শেষ দায়িত্ব। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়েই মূলত বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল ভারতের ব্যাটিং গ্রেটের। তবে বোর্ডের একান্ত অনুরোধে তিনি দায়িত্বে রয়ে যান। মেয়াদ যদিও তখন চূড়ান্ত হয়নি। পরে ফেব্রুয়ারিতে জানানো হয়, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবেন তিনি।
তাকে ধরে রাখতে বোর্ডের প্রচেষ্টা ছিল এরপরও। কিন্তু বিশ্বকাপের শুরুতেই দ্রাবিড় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততায় আর নিজেকে রাখছে চাইছেন না তিনি। তাই টুর্নামেন্টে ভারতের ফল যা-ই হোক না কেন, এরপর আর জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকবেন না। কোচের শেষটা সর্বোচ্চ সাফল্য দিয়েই রাঙিয়েছেন রোহিত, কোহলি, জাসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়ারা।
জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির দায়িত্ব পালন করেন দ্রাবিড়। তার তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠে ভারতের একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। পৃথ্বি শ-র নেতৃত্বে ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে দ্রাবিড়ই ছিলেন ভারতীয় দলের প্রধান কোচ।
[226585]
কিন্তু বড়দের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন দফা খুব কাছে গিয়েও সাফল্যের আবির গায়ে মাখাতে পারেননি দ্রাবিড়। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে সেমি-ফাইনালে থামে ভারতের যাত্রা। পরের বছর আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তার দল হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
হয়তো সবচেয়ে বড় হতাশাটা আসে ঘরের মাঠের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। প্রথম পর্ব ও সেমি-ফাইনালে দাপুটে ক্রিকেট খেলে অপরাজিত থেকে ফাইনালে ওঠে ভারত। কিন্তু আহমেদাবাদে লাখো দর্শকের সামনে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আর পেরে ওঠেনি দ্রাবিড়ের দল। নিজ দেশে হতাশার বেদনায় পোড়ে গোটা ভারতীয় দল।
খেলোয়াড়ি জীবনেও শিরোপার কাছে গিয়েও হৃদয়ভাঙা অভিজ্ঞতা আছে দ্রাবিড়ের। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দাপুটে ক্রিকেট খেলে শেষ বাধা উৎরানোর অভিযানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করতেই পারেনি সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন। ফাইনালে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন দ্রাবিড়।
চার বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপে তো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হতাশার মুহূর্তের একটিগুলো সামনেই পড়তে হয় দ্রাবিড়কে। তার নেতৃত্বে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয় ভারত। ড্রেসিং রুমে তার বিমর্ষ চাহনি ভারতের ক্রিকেটেরই বিষাদময় মুহূর্তগুলোর একটি।
সেই একই ক্যারিবিয়ানে প্রায় দেড় যুগ পর আরেকটি ড্রেসিং রুমে আর হতাশায় নুয়ে পড়তে হয়নি দ্রাবিড়কে। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ম্যাচের শেষ ডেলিভারির পরপরই উল্লাসে গর্জে ওঠেন দ্রাবিড়।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ট্রফি দিয়ে বিদায় জানানোর পর ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেও দ্রাবিড়কে তার প্রাপ্য কৃতিত্ব দেন রোহিত।
আমি মনে করি, আমাদের যে কারও চেয়ে ট্রফিটি তারই (দ্রাবিড়) বেশি প্রাপ্য। গত ২০-২৫ বছর ধরে ভারতের ক্রিকেটের জন্য তিনি যা করেছেন, আমার মতে, তার অর্জনের ঝুলিতে এটিই (বিশ্বকাপ ট্রফি) শুধু বাকি ছিল।
পুরো দলের পক্ষ থেকে তার জন্য এটি সত্যিই করতে পারায় আমি খুবই খুশি। আপনারা দেখেছেন, কতটা গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি। এই উপলক্ষের জন্য সত্যিই কৃতজ্ঞ।
এমটিআই