ঢাকা : আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্ম মার্সেলো বিয়েলসা কোচদের আইডল। জ্বী আপনি ঠিকই পড়েছেন। পেপ গার্দিওলা বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ছুটে গিয়েছিলেন বিয়েলসার কাছে। শুধু পেপই নন পচেত্তিনো, সিমিওনে, জিদানের মতো কোচরাও বিয়েলসার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। তার কোচিং ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছেন।
বিয়েলসা খেলোয়াড় জীবন শুরু করেছিলেন ডিফেন্ডার হিসেবে আর্জেন্টিনার ক্লাব নিউ ওল্ড বয়েজে। তবে জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। খেলোয়াড়ের চেয়ে কোচ হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। মার্সেলো বিয়েলসা বর্তমানে উরুগুয়ের কোচ। বিয়েলসার অধিনে বদলে গেছে উরুগুয়ে।
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উরুগুয়ের খেলা এবং কোপা আমেরিকাতে প্রথম দুই ম্যাচের ফলই বদলে যাওয়া উরুগুয়ের প্রমাণ। বিয়েলসার অধিনে উরুগুয়ে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচ খেলে হেরেছে মাত্র দুটি। চলতি কোপা আমেরিকাতে উরুগুয়ে ২ ম্যাচে করেছে ৮ গোল। তবু দলকে ফেভারিট মানতে নারাজ বিয়েলসা।
[226632]
বলেন, 'এই প্রতিযোগিতার সেরা দলগুলোর মুখোমুখি না হয়েই দুটি ম্যাচ (বলিভিয়া ও পানামার বিপক্ষে) জেতার মানে এই না যে, আমরা নিজেদেরকে ফেভারিটদের একটি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করব। এটা নিশ্চিত হতে আরও দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।'
আর্জেন্টিনায় সবাই ভালোবেসে বিয়েলসাকে ডাকেন 'এল লোকো' নামে যার অর্থ পাগল। লোকটা পাগলই বটে। একজন ফুটবল পাগল মানুষ তিনি। দলের অনুশীলনে যেন সবাইকে ভালোভাবে পরখ করা যায় তাই একবার নাকি গাছেও উঠেছিলেন তিনি।
বিয়েলসা খেলোয়াড়ের ফিটনেসের উপর জোর দিয়ে থাকেন। খেলোয়াড়দের থেকে তাদের সর্বোচ্চটা বের করে আনতে পারেন বিয়েলসা। আর প্রমাণ অতীতে আছে ভুরি ভুরি। সম্প্রতি ডারউইন নুনেজকে দেখলেও বিষয়টির ধারণা পাওয়া যাবে।
উরুগুয়ের নুনেজ বিয়েলসার অধিনে শেষ ৩ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল। বিয়েলসা উরুগুয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর নুনেজ ৯ ম্যাচে করেন ১০ গোল। অথচ নুনেজ লিভারপুলের হয়ে গেল মৌসুমে ৫৪ ম্যাচে করেছেন ১৮ গোল।
বিয়েলসার ট্যাকটিস সহজ, আপনাকে সবসময় বলের পেছনে ছুটতে হবে, পজিশন হারালে প্রতিপক্ষকে মারাত্মকভাবে প্রেস করতে হবে।
[226632]
ফুটবল পাগল বিয়েলসা ১৯৮২ সালে নিজের লোকাল ক্লাব নিউ ওয়েলস ওল্ড বয়েজে স্কাউটিংয়ের (খেলোয়াড় বের করে আনা) কাজ শুরু করেন। যুব দলের দায়িত্বও পান। ১৯৯০-৯২ দুই বছর মূল দলের কোচ ছিলেন। ওল্ড বয়েজকে জেতান আর্জেন্টিনার লিগ শিরোপা।
এরপর মেক্সিকোর দুটি এবং আর্জেন্টিনার আরও একটি ক্লাবে কোচিং করান। স্প্যানিশ ক্লাব এস্পানিওলে কিছুদিন থাকার পর ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব পান।
তবে ২০০২ বিশ্বকাপে বিয়েলসার অধিনে তারকাসমৃদ্ধ আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩ দল ২০০৪ এ তার অধিনেই জিতেছিল অলিম্পিক গোল্ড। ২০০৪ কোপাতেও ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা, হেরেছিল ব্রাজিলের কাছে।
২০০৭ সালে চিলির দায়িত্ব নেন। দলকে ট্রফি এনে দিতে না পারলেও ১৯৯৮ সালের পর নিয়ে গিয়েছিলেন (২০১০) বিশ্বকাপের মঞ্চে।
আর্জেন্টিনায়, চিলিতে না পারলেও ইউরোপের ক্লাব পর্যায়েও কোচ হিসেবে বেশ সফল বিয়েলসা। চিলির দায়িত্ব ছাড়ান পর স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ে দুই মৌসুম থাকেন। ২০১১-১২ মৌসুমে লিগে দশম এবং কোপা দেল রে ও ইউরোপা লিগে রানার্সআপ হয় বিলবাও।
লিলেতে এক বছর থেকে দায়িত্ব ছাড়েন নিজেই। এরপর ২০১৮ তে দায়িত্ব নেন ইংলিশ ক্লাব লিডস ইউনাইটেডের। দ্বিতীয় বিভাগে থাকা দলটিকে চ্যাম্পিয়ন করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তোলেন।
বিয়েলসা এবার উরুগুয়েকে কোপা আমেরিকা শিরোপা জেতাতে পারেন কিনা সেটি দেখার।
এমটিআই