ঢাকা : দারুণ প্রাপ্তি হাতছানি দিচ্ছে হারের কথা ভুলতে বসা দুই দলকে। উরুগুয়েকে পেছনে ফেলে লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে চূড়ায় ওঠার সুযোগ শিরোপাধারী আর্জেন্টিনার সামনে। অন্য দিকে ২৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিততে মরিয়া কলম্বিয়া।
ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৬টায়।
জয় পেলেই উরুগুয়েকে টপকে কোপার সর্বোচ্চ ষোড়শ ট্রফি ঘরে তুলবে লিওনেল মেসির দল। আর দুর্দান্ত অজেয় যাত্রায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের থামাতে পারলে ২০০১ সালের পর আবার মুকুট মাথায় পরবে কলম্বিয়া।
[227645]
কলম্বিয়ার প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র কোপা আমেরিকা জয়ের আসর নিয়ে অবশ্য রয়েছে কিছু প্রশ্ন। প্রায় ২৩ বছর আগে কলম্বিয়ায় হওয়া টুর্নামেন্টে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে অংশ নেয়নি আর্জেন্টিনা। আর ব্রাজিল পাঠায় দ্বিতীয় সারির দল। তাই অনেকটা ফাঁকা মাঠেই বাজিমাত করার সুযোগ পেয়ে যায় স্বাগতিকরা।
এবারের পরিস্থিতি অবশ্য পুরোপুরি ভিন্ন। গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলকে রুখে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। পরে সেমি-ফাইনালে উরুগুয়েকে বিদায় করে দেয় রদ্রিগেসের দল। শুধু এই টুর্নামেন্ট নয়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর্জেন্টিনার ম্যাচের পর পরাজয় শব্দটিই যেন ভুলে গেছে কলম্বিয়ানরা।
প্রায় আড়াই বছর ও ২৮ ম্যাচ ধরে তারা অপরাজিত। এই সময়ে উরুগুয়ে ছাড়াও ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানির মতো পরাশক্তিদের হারিয়েছে কলম্বিয়া। চলতি কোপায়ও দাপুটে ফুটবল খেলে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে করেছে ১২টি গোল। এক গোলের সঙ্গে টুর্নামেন্টের এক আসরে রেকর্ড ছয় অ্যাসিস্ট করে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন হামেস রদ্রিগেস।
আর গোলের জন্য নির্দিষ্ট কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি নেস্তর লরেন্সোর দলের। দুটি করে গোল করেছেন হন কর্দোবা, দানিয়েল মুনিয়োস, হেফার্সন লের্মা ও লুইস দিয়াস। জালের দেখা পেয়েছেন হামেস রদ্রিগেস, মিগুয়েল বোর্হা, রিচার্ড রায়োস, দেভিনসন সানচেসরাও।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১১ ধাপ এগিয়ে থাকলেও কলম্বিয়ার সাম্প্রতিক ছন্দে ফাইনাল ম্যাচটি মোটেও সহজ হবে না আর্জেন্টিনার জন্য।
মাঠের খেলা ছাড়াও মাঠের বাইরে দর্শকদের চাপও সইতে হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ফ্লোরিডার মায়ামি গার্ডেন্স এলাকায় কলম্বিয়ান প্রবাসীদের দাপট তুলনামূলক বেশি। নর্থ ক্যারোলিনায় সেমি-ফাইনাল ম্যাচেও প্রায় পুরো গ্যালারি দখলে নিয়েছিল কলম্বিয়ার জার্সি পরা দর্শকরা।
[227642]
ফাইনালে গ্যালারিতে আর্জেন্টিনার নীল-সাদা ও কলম্বিয়ার হলুদ জার্সিধারীদের মধ্যে তাই দেখা যেতে পারে অন্যরকম লড়াই। শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস থেকে ম্যাচের পরদিন অগ্রিম সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
কলম্বিয়ার শিরোপা জয়ের পথে শেষ কাঁটা হয়ে থাকা লিওনেল স্কালোনির দলও কাটাচ্ছে দারুণ টুর্নামেন্ট। পাঁচ ম্যাচের সবকটি জিতেই ফাইনালে পা রেখেছে তারা। এখন পর্যন্ত করেছে ৮টি গোল। গোল হজম করেছে মোটে একটি।
চার গোল করে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা লাউতারো মার্তিনেস। তরুণ স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেস করেছেন দুটি। শুরুর দিকে গোল না পেলেও সেমি-ফাইনালে করা গোলে যেন ছন্দে ফেরার আভাসই দিয়েছেন মেসি।
দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যানও কথা বলছে শিরোপাধারীদের পক্ষে। সব মিলিয়ে ৪৩ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে আর্জেন্টিনার জয় ২৬টি আর কলম্বিয়া জিতেছে ৯ ম্যাচ। ড্র হয়েছে বাকি ৮টি। সবশেষ ১২ ম্যাচের মধ্যে আর্জেন্টিনাকে স্রেফ একবার হারাতে পেরেছে কলম্বিয়া, ২০১৯ কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বে।
ইতিহাস যা-ই বলুক, আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কলম্বিয়া। তবে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাব্য কঠিন চ্যালেঞ্জের কথাও মনে করিয়ে দেন দলের কোচ লরেন্সো।
ভালো পারফরম্যান্স যদি না করতাম, তাহলে আমরা এখানে (ফাইনাল) থাকতাম না। এখন আর্জেন্টিনাকে হারাতে আমাদের সেরা রূপে নামতে হবে এবং সেটি কয়েক গুণ বাড়াতে হবে।
২০২১ কোপা আমেরিকা, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের পর বড় টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয় শিরোপার সামনে দাঁড়িয়ে স্কালোনি বলেছেন, নিজেদের খেলার ধরন একই রেখে জয়ের খোঁজে নামবে তার দল।
“আমরা সবসময় একইভাবে খেলার চেষ্টা করি। এই দলের ডিএনএ একই আছে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ফাইনাল জেতার চেষ্টা করব। আমাদের খেলার ধরন বদলাবে না। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার, ফাইনাল সবসময় বিশেষ।”
এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে চলেছেন আনহেল দি মারিয়া। ম্যাচের আগের দিন বিশেষ আয়োজনে গত কোপা আমেরিকার ফাইনালের নায়ককে সম্মাননা জানিয়েছেন মেসি, মার্তিনেসরা। ফাইনালে আরও বড় উৎসব দিয়েই সতীর্থকে বিদায় জানাতে চাইবেন তারা।
রেয়াল মাদ্রিদে দি মারিয়ার এক সময়ের সতীর্থ রদ্রিগেসের জন্যও এমন উৎসবের অপেক্ষায় কলম্বিয়া। না, জাতীয় দলকে বিদায় জানাচ্ছেন না এই প্লে মেকার। কঠিন সময় পেরিয়ে নিজের সেরা সময়ের ফুটবল খেলছেন তিনি। তাকে ঘিরেই শিরোপার স্বপ্ন বুনছে কলম্বিয়া। সেটা পূরণ করার পথে সম্ভাব্য কঠিনতম প্রতিপক্ষই অপেক্ষা করছে তাদের সামনে, যারা গত ৫ বছরে হেরেছে মোটে দুটি ম্যাচ।
ছন্দে থাকা কলম্বিয়াকে হারিয়ে স্পেনের পাশে বসতে চায় আর্জেন্টিনা। গড়তে চায় বিশ্বকাপ জেতার পর মহাদেশীয় শিরোপা ধরে রাখার কীর্তি। যেটা তারকা খচিত স্পেন করেছিল ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে।
এমটিআই