ঢাকা : ফুটবলে না থেকেও বেশ ভালোভাবেই আছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। ফিফার দুই প্রস্থের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন নানা অনিয়মের অভিযোগে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে ২০২৩ সালে। তারপরও সোহাগের ছায়া থেকে গেছে ফুটবলে।
অভিযোগ আছে, দায়িত্বে না থেকেও বাফুফের চার মেয়াদের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ বেশ ক’জন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। তিনি না থাকলেও ফুটবল রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন সোহাগের স্ত্রী তাসমিয়া রেজওয়ানা নাঈম। ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনী কংগ্রেসে দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব বিক্রমপুর কিংসের কাউন্সিলর হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোহাগ নিজেই। বিক্রমপুর কিংসের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট মুহিম তালুকদারও দিয়েছেন তাসমিয়াকে কাউন্সিলর করার ব্যাখ্যা।
[233460]
গত বছর ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন বিকেলে ফুটবলাঙ্গন তোলপাড় হয় ফিফার এক সিদ্ধান্তে। আর্থিক বরাদ্দ ব্যবহারে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে ফিফা সোহাগকে প্রথম প্রস্থে ২ বছর ফুটবলের সকল প্রকার কর্মকান্ড থেকে নিষিদ্ধ করে। অধিকতর তদন্তের পর সোহাগের শাস্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ফিফার শাস্তির তাকে ভুগতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। ফিফার প্রথম প্রস্থের নিষেধাজ্ঞার পরপরই বাফুফে সোহাগকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছিল।
তবে অভিযোগ আছে, সালাউদ্দিনের সোহাগ নির্ভরতা কমেনি তাতে। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে সোহাগের ডাক পড়ে সালাউদ্দিনের ডেরায়। নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে ব্যবসায় জড়িত সোহাগ সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন একটি ফুটবল সমর্থক গোষ্ঠীর আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হওয়ায়।
তবে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে সালাউদ্দিন ও বাফুফের আলোচিত সদস্য এবং মহিলা ফুটবল কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের পক্ষে অনেক ভোটারের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি। এই দুজনের ভোটব্যাংক বাড়াতে যে তিনি কাজ করছেন তা নিজ স্ত্রীকে বিক্রমপুর কিংসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়েই পরিস্কার হয়েছে।
যদিও বিক্রমপুর কিংস দাবী করছে তাসমিয়া গত বছর জুন মাসে ক্লাবটির সহ-সভাপতি হয়েছেন। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট বলেন, ‘আমরা কিন্তু ক্লাবের ভেতর থেকে একজনকে বাফুফের কাউন্সিলর করেছি। উনি (তাসমিয়া) গত বছর জুনে সহ-সভাপতি হয়েছেন আমাদের ক্লাবে। খোঁজ নিয়ে দেখেন, অনেক ক্লাবই বাইরের অনেককে কাউন্সিলর হিসেবে পাঠিয়েছে।‘
সোহাগের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই দাবী করে সম্রাট আরও বলেন, ‘ওনার (তাসমিয়ার) স্বামীকে ফিফা ও বাফুফে নিষিদ্ধ করেছে। ওনাকে তো করেনি। সোহাগের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাসমিয়া ম্যাডামের সঙ্গেই আমাদের সকল যোগাযোগ।‘
স্ত্রীর কাউন্সিলর হওয়া প্রসঙ্গে সোহাগ দাবী করেছেন বিক্রমপুর কিংসের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্কে চার-পাঁচ বছরের। যা ক্লাব সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে একেবারেই মিলছে না।
সোহাগ বলেন, 'আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ফুটবলের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলাম, স্বাভাবিকভাবেই আমার স্ত্রীরও ফুটবলের ব্যাপারে একটা আগ্রহের জায়গা তৈরী হয়েছে। তাছাড়া ওরা (বিক্রমপুর কিংস) যখন জোর করলো, তখন আর আমি মানা করিনি। তাছাড়া ক্লাবটির সহ-সভাপতি হিসেবে ও চার বছর ধরে রয়েছে। ক্লাব চেয়েছে আমার স্ত্রীকে কাউন্সিলর করতে। তবে এই পর্যন্তই। কংগ্রেসে যাবে, ভোট দিয়ে চলে আসবে।‘
[233459]
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোন সম্ভাবণা আছে কীনা জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, ‘অনেকেই হয়তো চাইবে ও প্রার্থী হোক। কারণ ফুটবলের মানুষজনের সঙ্গে এখনও আমার নিবিড় সম্পর্ক আছে। তবে আমি মনে করি সবকিছুর একটা সঠিক সময় থাকে। আমি মনে করি না, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় ওর হয়েছে।'
সোহাগের স্ত্রীকে বাফুফের নির্বাচনে কাউন্সিলর হতে দেখে মনে পড়ে গেলো কক্সবাজারের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির কথা। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ম্যান্ডেটে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ইয়াবা সম্রাটখ্যাত বদি। দেশে মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর তালিকায় বদির নাম ছিল শীর্ষে। যে কারণে পরেরবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তার বিরুদ্ধে হয়েছিল একাধিক মামলা।
তবে একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাতে কক্সবাজার-৪ আসনে বদির রাজত্ব বজায় থাকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের আগপর্যন্ত। বদির পরিণতিও ভালো হয়নি। ২০ আগস্ট গ্রেফতার হয়েছেন।
সোহাগের মতোই হয়তো তার ওপর নেমে আসবে বড় শাস্তির খরগ। সোহাগ অবশ্য এখনও আশায় আছেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হবে।
এমটিআই