ঢাকা: অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণের গতি, মুভমেন্ট আর বাউন্সের উত্তাপ প্রথম দিনই টের পেল ভারত। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে পার্থে প্রথম দিনে ৫০ ওভারও খেলতে পারল না তারা। তাদের প্রথম ইনিংস শেষ ১৫০ রানে।
অবশ্য প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বিপদে অস্ট্রেলিয়াও। ২০ রান তুলতেই ৩ উইকেট নেই অজিদের। একে একে খাজা, ম্যাকসোয়েনি আর সেরা ব্যাটসম্যান স্মিথকেও বিদায় করেছেন বুমরাহ।
ভারতের ইনিংসে ছিল না একটি ফিফটিও। আটে নেমে অভিষিক্ত অলরাউন্ডার নিতিশ কুমার রেড্ডির ৪১ রানই দলের সর্বোচ্চ। স্বভাবজাত ব্যাটিংয়ে আশা জাগিয়েও রিশাভ পান্ত ফেরেন ৩৭ রানে।
চার উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার জেশ হেইজেলউড। নতুন বলে দুর্দান্ত বোলিং করে সুর বেঁধে দেওয়া মিচেল স্টার্কের প্রাপ্তি দুই উইকেট। একটু খরুচে হলেও দুই উইকেট শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও। ক্যামেরন গ্রিন না থাকায় যার বোলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল দল, সেই মিচেল মার্শও দারুণ পারফরম্যান্সে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেন পাঁচ ওভার বোলিং করেই।
অপ্টাস স্টেডিয়ামের উইকেটে ঘাস আছে খানিকটা। বাউন্স তো এখানে এমনিতেই বাড়তি থাকে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের লেংথ ছিল প্রায় নিখুঁত।
ম্যাচের প্রথম বলটি অবশ্য লেগ স্টাম্পের বাইরে করে ‘বাই’ থেকে চারটি রান দেন স্টার্ক। তবে পরের বল থেকেই তিনি চেপে ধরেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। দলকে প্রথম উইকেটও এনে দেন তিনিই। অস্ট্রেলিয়ায় নিজের প্রথম টেস্ট ইনিংসে আট বলে শূন্য রানে ফেরেন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল।
তিনে নামা দেবদুত পাডিক্কাল ছিলেন আরও নড়বড়ে। শুবমান গিলের চোটের কারণে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২৩ বলেও রানের দেখা না পেয়ে হেইজেলউডের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
[237848]
অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি বল খেলে শূন্য রানে আউট হওয়া ভারতীয় ব্যাটসম্যান এখন তিনিই। একটু পরই আরও বড় শিকার ধরেন হেইজেলউড। তার বাড়তি লাফানো বলে সময়মতো ব্যাট সরাতে না পেরে আউট হয়ে যান ভিরাট কোহলি (৫)।
রোহিত শার্মা না থাকায় প্রায় দুই বছর পর ওপেন করতে নামা লোকেশ রাহুল বেশ ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তার ইনিংস ২৬ রানে থামান স্টার্ক।
আউটটি নিয়ে অবশ্য বিতর্কের অবকাশ রয়ে যায় বেশ। মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নেওয়ার পর আল্ট্রা এজ-এ স্পাইক দেখে আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার। তবে মাঠ ছাড়ার সময় বেশ অসন্তুষ্ট মনে হয় রাহুলকে।
বল তার ব্যাটে লেগেছে নাকি ব্যাট লেগেছে প্যাডে, এটা নিয়ে সংশয়ের কিছু জায়গা অবশ্য ছিল। ধারাভাষ্যকাররাও ছিলেন দ্বিধান্বিত। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার মতো যথেষ্ট নিশ্চিত প্রমাণ আছে কি না, এই প্রশ্ন উঠল। সামাজিক মাধ্যমেও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানারকম মতামত দেন বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞরা। ২৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৫১ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ভারত।
লাঞ্চের পরও অবস্থার উন্নতি খুব একটা হয়নি। এমনিতে কিপার-ব্যাটার হলেও এই টেস্টে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে জায়গা পাওয়া ধ্রুব জুরেলকে ১১ রানে ফেরান মার্শ। রাভিচান্দ্রান অশ্বিন ও রাভিন্ত্রা জাদেজাকে টপকে একমাত্র স্পিনার হিসেবে একাদশে ঠাঁই পাওয়া অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দারকেও জমে উঠতে দেননি মার্শ।
ভারত সেরা জুটি পায় এরপরই। রিশাভ পান্ত ও নিতিশ কুমার রেড্ডি সহজাত ব্যাটিংয়ে দ্রুত কিছু রান যোগ করেন। চোখধাঁধানো এক স্কুপ শটে কামিন্সকে ছক্কা মারেন পান্ত।
৭৮ বলে ৩৭ রান করা পান্তকে ফিরিয়ে এ জুটি ৪৮ রানে থামান কামিন্সই। পরের ওভারে অভিষিক্ত পেসার হার্ষিত রানাকে বিদায় করেন হেইজেলউড। গালিতে গুলির বেগে আসা বলে হাত লাগালেও মুঠোয় জমাতে পারেননি অভিষিক্ত ন্যাথান ম্যাকসুয়েনি, পাশ থেকে ছোবল মেরে তা ধরে ফেলেন মার্নাস লাবুশেন।
এরপর জাসপ্রিত বুমরাহকে ফিরিয়ে চতুর্থ শিকার করেন হেইজেলউড। নিতিশকে ৪১ রানে থামিয়ে ভারতের ইনিংস শেষ করেন কামিন্স।
এআর