ঢাকা: পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় বিশ্ব। বছরের শেষ ভাগে এসে প্রায় সব বিভাগ নিয়েই শুরু হয়েছে সালতামামির প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ক্রিকেটের আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আয়োজনও।
বছরের শেষ সপ্তাহে এসে এই ক্যালেন্ডারে ঘটে যাওয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো সোনালীনিউজের পাঠকদের সামনে।
বলতে গেলে স্মরণীয় সাফল্যে এই বছরে দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরিয়েছে অনেকের, কারো আবার সঙ্গী হয়েছে হতাশা। দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত রেকর্ড-অর্জনও কম হয়নি।
১. বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই ভারত শিরোপা জয় করে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। তারপর সাতটি আসর থেকে তাদের ফিরতে হয় খালি হাতে। অবশেষে গত জুনে এই সংস্করণের বিশ্বকাপে আরেকটি ট্রফি জয়ের অপেক্ষার অবসান হয় তাদের।
সেই স্বাদ পায় তারা নাটকীয় এক জয়ে। দুই সংস্করণের বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর প্রথমবার ফাইনালে উঠে শিরোপার সুবাসও পেতে শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বারবাডোজে ১৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৬ উইকেট হাতে রেখে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ছিল ৩০ বলে ৩০ রান। এমন ম্যাচও অবিশ্বাস্যভাবে তারা হেরে যায় ৭ রানে।
২. ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্মরণীয় জয়
জানুয়ারিতে ব্রিজবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রায় ২১ বছর পর টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় ক্যারিবিয়ানরা। আর অস্ট্রেলিয়ার মাঠে জয় পায় তারা প্রায় ২৭ বছর পর।
ক্যারিবিয়ানদের সেই জয়ের নায়ক শামার জোসেফ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ রানে ৭টিসহ ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ২১৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২০৭ রানে অল আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংস শুরু করতে নেমে এক প্রান্তে ৯১ রানে অপরাজিত রয়ে যান স্টিভেন স্মিথ।
৩. অবশেষে শ্রীলঙ্কা
আগষ্টে দেশের মাঠে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ‘টাই’ হওয়ার পর টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় শ্রীলঙ্কা। ২৭ বছর পর ভারতের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় লঙ্কানরা।
শেষ ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে।
সেপ্টেম্বরে আরেকটি অপেক্ষার অবসান হয় শ্রীলঙ্কার। ইংল্যান্ড সফরে প্রথম দুই টেস্টে হারের পর ওভালে শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় তারা; ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যা তাদের ১০ বছর পর প্রথম টেস্ট জয়। ২০১৪ সালে লিডসে শ্রীলঙ্কার জয়ের পর মাঝের এক দশকে ১০ টেস্টের ৯টি জেতে ইংল্যান্ড, ড্র হয় অন্যটি।
৪. অনন্য কামিন্দু
সেপ্টেম্বরে গলে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অপরাজিত ১৮২ রানের ইনিংসের পথে দারুণ কীর্তি গড়েন কামিন্দু মেন্ডিস। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান, ক্যারিয়ারের প্রথম আট ম্যাচের প্রতিটিতে যিনি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে গলেই তার টেস্ট অভিষেক হয় ২০২২ সালে, একমাত্র ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছয়ে নেমে খেলেন ৬১ রানের ইনিংস। তবে পরের টেস্ট ম্যাচটি খেলতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় দুই বছর।
ফেরার ম্যাচে গত মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিলেটে সেঞ্চুরি করেন দুই ইনিংসেই। পরের টেস্টে করেন অপরাজিত ৯২।
সেই ফর্ম তিনি টেনে নেন ইংল্যান্ড সফরেও। ম্যানচেস্টারে সেঞ্চুরির পর লর্ডসে ও ওভালে করেন ফিফটি। পরে গলে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয়টিতে আরেকটি শতকে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান এই বাঁহাতি।
[240565]
৫. টি-টোয়েন্টির দ্রুততম সেঞ্চুরি
জুনে সাইপ্রাসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ২৭ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন এস্তোনিয়ার সাহিল চৌহান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি। তিনি ভেঙে দেন ২০১৩ আইপিএলে ক্রিস গেইলের ৩০ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড।
একই দিন সিরিজের প্রথম ম্যাচে ‘গোল্ডেন ডাক’ এর তেতো স্বাদ পাওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে রান তাড়ায় ৪১ বলে ১৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংসের পথে রেকর্ডটি গড়েন সাহিল। তার ৩৫১.২১ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটিতে ১৮টি ছক্কার পাশে চার ছিল ৬টি।
৬. জিম্বাবুয়ের ২০ ওভারে ৩৪৪
অক্টোবরে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আফ্রিকার উপ-আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গাম্বিয়ার বিপক্ষে সিকান্দার রাজার বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে (৪৩ বলে ১৩৩) ২০ ওভারে ৩৪৪ রান করে জিম্বাবুয়ে। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড নতুন করে লেখে তারা।
যদিও রেকর্ডটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ডিসেম্বরে ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে সিকিমের বিপক্ষে ৩৪৯ রান করে জিম্বাবুয়ের রেকর্ড ভেঙে দেয় বারোদা। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের রেকর্ড এখনও জিম্বাবুয়েরই।
৭. নিউ জিল্যান্ডের অবিস্মরণীয় সাফল্য
সাত দশকে ১২ বার ভারত সফরে এসে যে নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট জয় ছিল স্রেফ দুটি, সেই নিউ জিল্যান্ড এবার ভারতকে তিন টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে তাদের মাঠেই!
বেঙ্গালুরুতে প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে জিতে ভারতের মাটিতে ৩৬ বছর পর এই সংস্করণে জয়ের স্বাদ পায় কিউইরা।
ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে গুটিয়ে ঘরের মাঠে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোরের বিব্রতকর রেকর্ড গড়ে ভারত। এশিয়ায় যে কোনো দলের পঞ্চাশের নিচে অল আউট হওয়ার প্রথম নজিরও এটি।
পুনেতে পরের টেস্টও বড় ব্যবধানে জিতে ভারতের মাটিতে প্রথমবার সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় নিউ জিল্যান্ড। অন্যদিকে, প্রায় ১২ বছর পর দেশের মাটিতে সাদা পোশাকে সিরিজ হারের তেতো স্বাদ পায় ভারত। ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৭টি ও দ্বিতীয়টিতে ৬টি উইকেট নিয়ে কিউইদের নায়ক বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।
৮. নিউ জিল্যান্ডের প্রথম শিরোপা
ভারতে টম ল্যাথাম, উইল ইয়াংদের অনেক অর্জনের সিরিজের মাঝেই অক্টোবরে স্মরণীয় সাফল্য পায় নিউ জিল্যান্ড নারী দল। দুবাইয়ে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
প্রথম দুই আসরের রানার্সআপ নিউ জিল্যান্ড ১৪ বছর পর আরেকটি ফাইনালে উঠে পায় শিরোপার স্বাদ।
অথচ টি-টোয়েন্টিতে টানা ১০ ম্যাচ হেরে এই বিশ্বকাপে পা রেখেছিল নিউ জিল্যান্ড। আগের তিনটি আসরে তারা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। তাদের নিয়ে বাজি ধরার লোক তাই খুব বেশি ছিল না। সেই তারাই এশিয়ার তিন দল ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে উঠে যায় সেমি-ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে তারা হারে কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
শেষ চারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাধা পেরিয়ে, ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন সুজি বেটস, সোফি ডিভাইনরা।
৯. ২২ বছর পর পাকিস্তান
নভেম্বরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দুই দশকের বেশি সময়ের অপেক্ষার অবসান হয় পাকিস্তানের। ২২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় তারা।
মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার ২ উইকেটে জয়ের পর অ্যাডিলেইডে ৯ উইকেটে ও পার্থে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ৩ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের এই সাফল্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন পেসার হারিস রউফ।
১০. দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ
প্রথমবার ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। একমাত্র দল হিসেবে এমন কীর্তি গড়ে পাকিস্তান।
১১. ইংল্যান্ডের আটশ
অক্টোবরে মুলতান টেস্টে হ্যারি ব্রুকের ট্রিপল সেঞ্চুরি ও জো রুটের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ৮২৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। টেস্টে ইতিহাসে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এক ইনিংসে আটশ বা এর বেশি রানের চতুর্থ নজির এটি। এর তিনটিই ইংল্যান্ডের। ম্যাচটি ইনিংস ব্যবধানে জিতে নেয় ইংলিশরা।
অন্যদিকে, টেস্ট ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে এক ইনিংসে ৫০০ রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হারের বিরল নজির সৃষ্টি করে পাকিস্তান।
১২. ১৭ বছর পর ইংল্যান্ড
ডিসেম্বরের শুরুতে ওয়েলিংটন টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে ৩২৩ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। ফুরায় তাদের অপেক্ষার প্রহরও। নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় তারা প্রায় ১৭ বছর পর। দ্বিতীয় দল হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ জয়ও পূর্ণ করে তারা।
এআর