ঢাকা: বিভাগীয় পর্যায়ে ভালো করে অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন মোহররম হোসেন মুহিন। কিন্তু হুট করেই শুর হয় পেটে ব্যথা। তিনটি হাসপাতাল ঘুরেও মিলল না পরিত্রাণ। ক্রিকেট মাঠেও আর ফেরা হলো না ১৭ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনারের।
খাদ্যনালীর সমস্যায় শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকা দক্ষিণ অনূর্ধ্ব-১৮ দলের মুহিন। এক সংবাদ বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছে বিসিবি।
কক্সবাজারে সোমবার থেকে জাতীয় পর্যায়ের ইয়াং টাইগার্স অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্ট খেলার কথা ছিল মুহিনের। ঢাকা দক্ষিণের হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সবশেষ ম্যাচেও মাদারিপুর অনূর্ধ্ব-১৮ দলের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মুহিন। সব মিলিয়ে ওই প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে এই বাঁহাতি স্পিনার শিকার করেছিলেন ১৬ উইকেট।
জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য ফরিদপুরে চলছিল ঢাকা দক্ষিণের প্রস্তুতি পর্ব। শুক্রবার কক্সবাজার চলে গেছে দল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পেট ব্যথা শুরু হওয়ায় দলের সঙ্গে যেতে পারেননি মুহিন। তাকে ভর্তি করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে।
সেখানে প্রায় ২৪ ঘণ্টা থাকার পরও অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় মুহিনের বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন একমাত্র ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে আসবেন। শুক্রবার রাতেই ঢাকার সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতালে আনা হয় মুহিনকে। সেখানেও মেলেনি ইতিবাচক কোনো খবর।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শনিবার মুহিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখনই হৃৎস্পন্দন অনেক কম ছিল বলে জানান মুহিনের বড় চাচা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।
তাই ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বিশেষ বোর্ড গঠন করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা খুব বেশি আশা দিতে পারেননি মুহিনের পরিবারকে।
[241121]
তাই সিদ্ধান্ত হয় যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার হবে। সন্ধ্যায় শুরু হয় অস্ত্রোপচার। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার সময়ও পেটে ব্যথা ছাড়া আর কোনো সমস্যার কথা বলেননি মুহিন। বরং বারবার পরিবারকে তাগাদা দিচ্ছিলেন, কেন তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।
তিন ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। অপারেশনের সময় জানা যায়, মুহিনের খাদ্যনালী ছিদ্র হয়ে রক্ত ও অন্যান্য ফ্লুইড মিশে গেছে পাকস্থলীতে। যে কারণে লম্বা সময় চলে অস্ত্রোপচার। কিন্তু পরে আইসিইউতে নেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি ১৭ বছর বয়সী মুহিনের।
মরদেহ নিয়ে পৈতৃক নিবাস বরিশাল গৌরনদী যাওয়ার পথে প্রিয় ভাতিজার বিদায়ে নিজেদের ভাগ্যকেই দায় দেন কান্নারত অবসরপ্রাপ্ত মেজর এনায়েত।
'শুরুতে পেটের ব্যথাই মনে করেছিলাম আমরা। কিন্তু পাকস্থলীতে রক্ত ও অন্যান্য ফ্লুইড ছড়িয়ে পড়ায় জটিলতা বেড়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আসলে আমাদের ভাগ্যে ছিল না।'
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার মুহিনের সঙ্গেই ছিলেন তার ছোটবেলার কোচ আরিফ সোলায়মান। শনিবার রাতে মুহিনকে নিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল তার। এর আগেই নিজের হাতে গড়া প্রতিভাবান স্পিনারকে হারিয়ে শোকে কাতর হামিদ স্পোর্টস একাডেমির এই কোচ।
'খুব ভালো বাঁহাতি স্পিনার ছিল মুহিন। ঢাকায় এবার বাঁহাতি স্পিনার নেই আর। তাই ওকে নিয়ে অনেক আশা ছিল আমাদের। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পাবে মুহিন। কিন্তু এর আগেই ওকে হারিয়ে ফেললাম।'
এআর