রিয়াল মাদ্রিদকে ফের গুঁড়িয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ বার্সেলোনার

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০১:১২ পিএম

ঢাকা : আগের ক্লাসিকোর ব্যর্থতা ভুলে শুরুতেই কিলিয়ান এমবাপের দারুণ গোল, রিয়াল মাদ্রিদের আশা জাগানিয়া শুরু। কিন্তু কীসের কী! দাপুটে ফুটবলে আবারও তাদের জালে গোল উৎসবে মেতে উঠল বার্সেলোনা।

দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় প্রতিপক্ষে একজন কম থাকার সুযোগেও নাটকীয় কিছু করে দেখাতে পারল না কার্লো আনচেলত্তির দল। আরেকটি ক্লাসিকোয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের উড়িয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বার্সেলোনা।

সৌদি আরবের জেদ্দায় রোববার রাতের ফাইনালে ৫-২ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের দল। এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ড কাতালান দলটি আরও সমৃদ্ধ করল ১৫তম ট্রফি জিতে।

গত অক্টোবরে মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোয় লা লিগায় রেয়ালের মাঠে দ্বিতীয়ার্ধের চার গোলে ৪-০ ব্যবধানে জিতেছিল বার্সেলোনা।

এবার শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে প্রথমার্ধেই চার গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বার্সেলোনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরেকটি গোলে স্কোরলাইন ৫-১ করে ফেলে তারা। খানিক বাদে তাদের গোলরক্ষক ভয়চেক স্ট্যান্সনি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর রদ্রিগোর গোলে পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমাতে পারে রেয়াল।

গত ক্লাসিকোয় বার্সেলোনার চার গোল করেছিলেন আক্রমণভাগের তিন তারকা রবের্ত লেভানদোভস্কি, রাফিনিয়া ও লামিনে ইয়ামাল মিলে। এবারও জালের দেখা পান এই তিন জনের প্রত্যেকে। জোড়া গোল করেন রাফিনিয়া, একটি করে লেভানদোভস্কি, ইয়ামাল ও আলেহান্দ্রো বাল্দে।

[241631]

নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা দুটি ক্লাসিকোয় অন্তত ৪ গোল করে করল বার্সেলোনা। ১৯৬৩ সালে রেয়ালের (৫-১ ও ৪-০) পর প্রথমবার ক্লাসিকোয় দেখা গেল এমন কিছু।

স্প্যানিশ সুপার কাপের গত আসরের ফাইনালে সৌদি আরবেই রেয়ালের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। এবার মাদ্রিদের দলটিকে গুঁড়িয়ে মধুর প্রতিশোধও নিল তারা।

কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটিতে দ্বিতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। থিবো কোর্তোয়ার নৈপুণ্যে রক্ষা পায় রেয়াল। বক্সের বাইরে থেকে ইয়ামালের বাঁ পায়ের শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। চতুর্থ মিনিটে গাভির ক্রসে কাছ থেকে রাফিনিয়ার হেডও ঠেকান তিনি।

পরের মিনিটে নিজেদের প্রথম আক্রমণ থেকেই এমবাপের চমৎকার গোলে এগিয়ে যায় রেয়াল। মাঝমাঠ থেকে ভিনিসিউস জুনিয়রের পাস ধরে এগিয়ে যান ফরাসি ফরোয়ার্ড। ডিফেন্ডার বাল্দের বাধা এড়িয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।

ক্যারিয়ারের প্রথম ক্লাসিকোয় বার্সেলোনার ‘হাইলাইন’ ডিফেন্সে আটবার অফসাইডের ফাঁদে আটকা পড়লেও, এবার শুরুতেই গোল করলেন বিশ্বকাপ জয়ী তারকা।

[241628]

বারবার রেয়ালের রক্ষণে ভীতি ছড়ানো বার্সেলোনা সমতায় ফেরে ২২তম মিনিটে, ইয়ামালের চমৎকার গোলে। লেভানদোভস্কির থ্রু বল ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে আরও দুজনের মধ্যে দিয়ে বাঁ পায়ের নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ১৭ বছর বয়সী স্প্যানিশ উইঙ্গার।

পায়ে অস্বস্তি অনুভব করায় ২৯তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন বার্সেলোনা ডিফেন্ডার ইনিগো মার্তিনেস। তার জায়গায় নামেন রোনাল্দ আরাউহো।

৩৬তম মিনিটে সফল স্পট-কিকে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন লেভানদোভস্কি। রেয়ালের মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা বক্সে গাভিকে ফাউল করলে শুরুতে সাড়া না দিলেও, ভিএআরের সাহায্যে মনিটরে দেখে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি।

চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৭ ম্যাচে ২৬ গোল করলেন ৩৬ বছর বয়সী পোলিশ স্ট্রাইকার।

তিন মিনিট পর ব্যবধান আরও বাড়িয়ে চালকের আসনে বসে বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে জুল কুন্দের ক্রসে বক্সে চমৎকার হেডে বল জালে পাঠান রাফিনিয়া।

[241625]

প্রথমার্ধের ৯ মিনিট যোগ করা সময়ে বক্সের ভেতর থেকে বাল্দের কোনাকুনি শট এক হাতে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান কোর্তোয়া। খানিক পরই জালের দেখা পান ২১ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগে শাণানো প্রতি-আক্রমণে রাফিনিয়ার পাস ধরে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

প্রথমার্ধে ৬২ শতাংশ সময় পজেশন ধরে রেখে গোলের জন্য ১৩টি শট নিয়ে ৭টি লক্ষ্যে রাখে বার্সেলোনা। এই সময়ে রেয়ালের ৮ শটের কেবল ২টি লক্ষ্যে ছিল।

৪৭তম মিনিটে রদ্রিগোর একটি শট পোস্টে লাগে। পরের মিনিটে আবার রেয়ালের জালে জড়ায় বল। নিজেদের অর্ধ থেকে মার্ক কাসাদোর পাস ধরে এগিয়ে যান রাফিনিয়া, বক্সে একজনকে কাটিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি।

মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৭ ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের গোল হলো ১৯টি, সঙ্গে অ্যাসিস্ট আছে ১০টি।

বক্সের বাইরে এসে এমবাপেকে ফাউল করে ৫৬তম মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন পোলিশ গোলরক্ষক স্ট্যান্সনি। ভিএআরের সাহায্যে মনিটরে রিপ্লে দেখে এই সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।

গাভিকে তুলে নিয়ে ইনিয়াকি পেনিয়াকে পোস্ট সামলানোর জন্য নামান বার্সেলোনা কোচ। একই সঙ্গে ইয়ামালের বদলি নামেন দানি ওলমো।

[241624]

ওই ফ্রি-কিকেই ব্যবধান কমান রদ্রিগো। বল পেনিয়ার হাত ছুঁয়ে পোস্টে লাগে জালে জড়ায়।

বাকি সময়ে বার্সেলোনার ওপর চাপ বাড়ায় রেয়াল। তবে গোলের দেখা পায়নি তারা কিছুতেই। শেষ বাঁশি বাজতেই উল্লাসে মেতে ওঠে বার্সেলোনা।

এই মৌসুমে বার্সেলোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ফাইনালেই শিরোপার স্বাদ পেলেন জার্মান কোচ ফ্লিক। মৌসুমে দারুণ শুরুর পর গত বছরের শেষ দিকে ব্যর্থতা জেঁকে ধরেছিল তাদের। তবে নতুন বছরের শুরুটা হলো দারুণ। বছরে প্রথম তিন ম্যাচের সবকটি জিতল তারা।

এমটিআই