ঢাকা : বিপিএলের ইতিহাসেই এমন ঘটনা কোনোদিন দেখা যায়নি। বিশ্বের অন্য কোনো ছোটখাট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে এমন হয় কিনা- সেটাও গবেষণার বিষয়। পারিশ্রমিক না দেওয়ায় দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা অনুশীলন বর্জন করেছেন।
বৃহস্পতিবারের মধ্যে পারিশ্রমিক না পেলে তারা ম্যাচ বয়কটের হুমকিও দিয়েছেন। নতুন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের ‘নতুন বিপিএলে’ এ এক নতুন কেলেঙ্কারি!
এবারের বিপিএলের শুরুতেই ভিন্ন কিছু হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেই ভিন্ন কিছুই হচ্ছে, কিন্তু প্রায় সবই নেতিবাচক। চার-ছক্কা বাড়াতে ছোট করা হয়েছে বাউন্ডারি লাইন।
[241839]
দলগুলোতে বিশ্বমানের তারকা নেই বললেই চলে, বরং অজানা, অচেনা মেয়াদোত্তীর্ণ সব ক্রিকেটার ধরে আনা হচ্ছে। এসব ক্রিকেটার পিচে বল রাখতে পারছেন না। তাদের করা বিশাল বিশাল সব ওয়াইড, নো বল নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিতই। সম্প্রতি মিগুয়েল কামিন্সকে এনেছে রাজশাহী, যে গত পাঁচ বছর টি-টোয়েন্টিই খেলেনি!
তবে সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক নিয়ে কেলেঙ্কারি। বলা হয়েছিল টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই খেলোয়াড়দের ৫০% বেতন দিয়ে দিতে হবে, টুর্নামেন্ট চলাকালে ২৫% এবং শেষে বাকি ২৫%। এর বাইরে প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ৮ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে বলা হয়েছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অনুরোধে সেটা ৩ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ছাড়া অন্য কোনো দল সেটাও দেয়নি বলে জানিয়েছে ক্রিকইনফো।
[241819]
আসরের অর্ধেক হয়ে গেলেও রাজশাহীর খেলোয়াড়দের এখন পর্যন্ত এক টাকাও পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। তাদের দেওয়া একটি চেক গত ৯ জানুয়ারি বাউন্স হয়। এতে খেলোয়াড়রা ১০ জানুয়ারির ম্যাচ না খেলার হুমকি দেন। দলের মালিক শফিক রহমান তখন জানান, ১৪ জানুয়ারি সবাই টাকা পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা না হওয়ায় খেলোয়াড়েরা গতকাল ১৫ জানুয়ারির অনুশীলন বর্জন করেন। একাধিক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমে বলেছেন, পারিশ্রমিক তো দূরের কথা, ডেইলি অ্যালাউন্স্ দেওয়া হচ্ছে না ক্রিকেটারদের!
এসব নিয়ে গতকাল দিনভর নাটকের পর রাতে দুর্বার রাজশাহীর অপারেশন ইন-চার্জ জায়েদ আহমেদ দাবি করেন, পারিশ্রমিকের জন্য অনুশীলন বর্জনের ঘটনা নাকি সত্যি নয়। ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। দলের মালিকের স্ত্রীর শরীরে বল লাগায় তিনি ব্যাংককে গেছেন চিকিৎসা নিতে। এজন্য ক্রিকেটারদের চেক বাউন্স হয়েছে! বলা বাহুল্য যে, এই শিশুতোষ অজুহাতের মাধ্যমে তারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারছেন না। কেলেঙ্কারিটা প্রকাশিত হয়ে গেছে।
[241817]
বিপিএলে মাঠের খেলা শুরুর আগে ৭ কোটি টাকা খরচ করে কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে মাসকট। কিন্তু এসব দিয়ে বিপিএলের অন্তঃসারশূন্যতাকে আড়াল করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে- পাকিস্তানি শিল্পী এনে লোক দেখানো অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে, তাহলে ক্রিকেটাররা কেন তাদের পারিশ্রমিক পাচ্ছে না?
এমন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কীভাবে দল গঠনের অনুমতি দিয়েছে বিসিবি- এমন প্রশ্নও উঠছে। বিষয়টি রাজশাহীর মালিকপক্ষের ইস্যু হলেও বিসিবি তো এর দায় এড়াতে পারে না।
এমটিআই