ঢাকা : দাদি-নানির হাতে তৈরি সুতোয় বোনা কাপড় শৈশবে পরেনি এমন মানুষ কমই আছে। নানা রঙের সুতো দিয়ে বাহারি নকশার জামা-জুতোগুলো দেখতে যেমন কারুকার্যপূর্ণ, পরতেও আরামদায়ক। এই কাপড়গুলো তৈরি হয় কুশিকাটার মাধ্যমে।
শুধু কাপড় নয় সৌখিন মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে গৃহ সজ্জার কুশি পণ্যও। কুশিকাটা দিয়ে সুতোয় বোনা ছোটদের জামা-জুতো থেকে শুরু করে গৃহ সজ্জায় একজন মানুষ নিজের মতো করে যেমন গৃহ সাজেতে পারে তেমনি নিজেকেও। সেই কাজটি অনেক দিন ধরে করছেন সাহেদা বেগম।
তিনি শুধু নিজের জন্য করে ক্ষান্ত হননি ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্যকে কাজে লাগিয়ে ‘ইউনিক বই সাহেদা’র মাধ্যমে আয় করছেন প্রতিনিয়ত। তার হাতে বুনন শৈলী এখন দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিভিন্ন বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে।সম্প্রতি ‘ইউনিক বাই সাহেদা’র কার্যক্রম নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন ‘সোনালী নিউজ’-এর সঙ্গে।
সোনালী নিউজ : কুশিকাটা দিয়ে কাপড় বুননের শুরুর গল্প শুনতে চাই -
সাহেদা বেগম : ছোটবেলায় দেখতাম আম্মাকে কাজ করতে। অবাক হতাম একটা কাটা দিয়ে কিভাবে কাজ করেন। আম্মা আমাদের তিন বোনকে কুশিকাটা দিয়ে কাপড় বুননের কাজ শেখাতে চেষ্টা করতেন। বড় দু’বোনকে না পেরে আমাকেই প্রায় জোড় করে শেখালেন। তখন আমি বেসিক টুকু শিখে টুকটাক কয়েকটা কাজ করেছিলাম। মূলত আমার কাজ শেখা আমার ঘর থেকেই, বোনের দেখতাম সুঁই সুতার কাজ করতে। তাদের দেখেই আমার কাজের প্রতি আগ্রহ জমে। নতুন নতুন কাজ শিখতে আমার ভালো লাগে। আম্মার থেকে কুশি কাটার কাজ এবং নিটিংয়ের কাজ শিখেছি। বোনেদের থেকে সুঁই সুতার কাজ।
সোনালী নিউজ : ‘কুশিকাটা’র কাপড়ের চাহিদা কাদের ভেতর বেশি বলে মনে করেন -
সাহেদা বেগম : সৌখিন মানুষদের পছন্দের তালিকায় কুশিকাটা তৈরি পোশাক বা পণ্য থাকে। এগুলো সম্পর্কে ভালো করে না জানলে বা না বুঝলে কিনতে পারেনা কেউ। অনেকেই ভাবে কি এমন কাজ, কষ্ট আছে নাকি এই কাজের। আর আমি বলি সৌখিন মানুষেরা এই কাজের মূল্য দিতে পারে। কুশিকাটার কাজ নিখুঁত বুনন ও প্রচুর শ্রমের হয়। তবেই না পরিপূর্ণ রূপ আসে কাজে। কুশিকাটার কাজ গৃহ সাজসজ্জার যেমন সব বয়সী মানুষের পছন্দ তেমনি বাচ্চাদের কাপড়ে আগ্রহ বেশি থাকে।
সোনালী নিউজ : ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্যে কাজ করার আগ্রহ এলো কি করে-
সাহেদা বেগম : ছোটবেলায় যখন কাজ শিখলাম তখন কাজের সীমা ছিলো টুকটাক। বড় হয়ে এগুলো নিয়ে কাজ করবো তা কখনও ভাবা হয়নি। একবার টিভিতে দূর পাঠ প্রোগ্রামে পুথি দিয়ে ব্যাগ বানানো দেখলাম। ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখি পারি কিনা। একটা দুইটা তিনটা করে যখন বানাতে শুরু করলাম তখন আমার কাজ দেখে আশেপাশের মানুষগুলো ব্যাগ কিনতে শুরু করলো। তখন থেকে শুরু নতুন করে কিছু করার তাগিদ পেলাম। সেই সময় ভাবনা আসে আমার হাতের কাজ শুধু নিজের এলাকায় কেনো, সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাক। সেই থেকে আমার অনলাইন বিজনেসের শুরু।
সোনালী নিউজ : ‘ইউনিক বাই সাহেদা’ নাম করনের কোনও গল্প আছে -
সাহেদা বেগম : না, তেমন কোনও গল্প নাই তবে আমি চাইতাম ইউনিক কিছু তৈরি করার। নতুন নতুন জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ যেমন বেশি থাকে অন্যদিকে নিজের কাজ করতেও ভালো লাগে। আর তা যদি হয় হাতের কাজের তাহলে তো কোন কথাই নাই। কাজ যেহেতু আমিই করি তাই আমার নামটাও সঙ্গে থাকুক। এখান থেকে প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ইউনিক বাই সাহেদা’।
সোনালী নিউজ : কাদের জন্য কাপড় বুনে তৃপ্তি বা আনন্দ পান -
সাহেদা বেগম : আমি কাজ করি সকলের জন্য। তবে বাচ্চাদের কাজ করা হয় বেশী। বাচ্চাদের জন্য পোশাক বানাতে দারুণ লাগে। মনের মাঝে এক ধরনের তৃপ্তি আসে। নতুন সব ডিজাইনে ছোট্ট ছোট্ট পরীগুলো যখন সজে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। এই ভালোলাগাটা আমাকে খুব টানে। এখান থেকে বাচ্চাদের কাজ বেশে করা হয় তবে এই নয় আমি বড়দের কাজ করি না বা করতে চাই না। করি তবে সে অনেক কম। কাজ তো ধরেন তৃপ্তির জন্য, বাচ্চাদের কাছ থেকে সেটা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - ‘খুব কঠিন প্রশ্ন, যে উপন্যাসই পড়ি সেই উপন্যাসের নায়ক হতে ইচ্ছা করে’
সোনালী নিউজ : একই সঙ্গে সংসার এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে কোনও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না -
সাহেদা বেগম : সংসার, বাচ্চা, কাজ। এই তিনটি বড় বিষয়কে এক সুতয় এনে সামলানো আসলেই কঠিন ব্যাপার। তবে কখনও বাধা আসেনি। কাজ আমার কাছে সন্তানের মতো। আমার বাচ্চাদের ছাড়া যেমন কিছু ভাবতে পারিনা তেমনি এক মুহূর্ত কাজ ছাড়া আমি থাকতে পারিনা।
সোনালী নিউজ : একটি সুখ স্মৃতির ঘটনা শুনতে চাই, মানে ‘ইউনিক বই সাহেদা’ না হলে হয়তো সেটা ঘটতো না -
সাহেদা বেগম : সুখ স্মৃতির ঘটনা তো অনেক। একটা বললে অন্যটা বলা হবে না। স্মৃতিরাও রাগ করতে পারে। তবে একটা কথা মানুষের ভালোবাসা। ‘ইউনিক বাই সাহেদা’ না হলে এইটা পেতাম না। অন্য দিকে আমার একটি নিজস্ব জগত বা পরিচয়। আমি হয়তো কোনদিন দেশের বাইরে যেতে পারবো না কিন্তু আমার কাজ দেশের বাইরে যায়। সারা বাংলাদেশে তো যায়ই সঙ্গে ৭-৮টা দেশের প্রবাসীরা মাঝে মাঝে আমার কাছ থেকে বাচ্চাদের জামা-জুতো বানিয়ে নেয়। এইটা আমার অনেক বড় পাওয়া।
আরও পড়ুন- ‘বটতলা’ না হলে মানুষকে খুশি করার অনুভূতি পেতাম না
সোনালী নিউজ : ‘ইউনিক বাই সাহেদা’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাই-
সাহেদা বেগম : শখের কাজ করতে করতে একটা সময় দেখি নিজের পরিচয় বাড়তে শুরু করেছে। তবে আমি কল্পনা প্রবণ নয়। তাই ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। কাজ করছি নিজের মতো, একটু একটু করে ‘ইউনিক বাই সাহেদা’ বড় হচ্ছে। নয় বছরে যতটুকু হয়ছে, আশা করি আরও দু’তিন বছর গেলে আরও অনেক বড় হবে। আমি পরিকল্পনা নয় কাজে এবং পরিশ্রমে বিশ্বাসী।