ঢাকা: নিজের পুলিশ পরিদর্শক বাবা ও মাকে হত্যার দায়ে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমান কারাগারে ওয়ার্ড রাইটারের দায়িত্ব পালন করছেন। তার অধীনে ওয়ার্ডে থাকা অন্যান্য বন্দীদের গণনাসহ অনেক কাজ করেন তিনি।
কারা আইন মেনে সব সময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখেন ঐশী। তবে ওয়ার্ড রাইটারের দায়িত্ব পাওয়ার অনেক আগে শিক্ষকতা করতেন।
বাবা-মাকে হত্যার দ্বায়ে সাজাপ্রাপ্ত ঐশী রহমান কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের কলমি লতা নামে ভবনের একটি ওয়ার্ডে এখন রাইটারের দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে সব সময় সে কাজের মাঝেই ডুবে থাকেন। এত বছর ধরে কারাগারে আছেন, অথচ তার নামে কারা আইন বহির্ভুত কোনো অভিযোগ পায়নি কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, যেহেতু ঐশীর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে, তাই এখন কারাগারে রাইটার হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ ও ভালো আছেন। তবে, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় কারা আইন অনুযায়ী তাকে কয়েদী শাড়ি পরতে হয়। গত দুই মাস যাবৎ কোনো স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আসেনি।
কারাগারে ওয়ার্ড রাইটারের কাজ অনেক বড় একটা দায়িত্ব। তাকে নিজের ওয়ার্ডে থাকা বন্দিদের হিসেব ঠিক রাখা, নতুন বন্দিদের হিসেবসহ পুরাতন বন্দিদের জামিনের পর ওয়ার্ড ত্যাগ- সব হিসেব রাখতে হয়।এসব কারণে রেজিস্টার খাতা রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ওয়ার্ডে বন্দিদের খাওয়া-দাওয়া সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করাসহ আরও অনেক কিছু করতে হয়।
ঐশী ওয়ার্ড রাইটারের দায়িত্ব পাওয়ার অনেক আগে আদালতের নির্দেশে বন্দি মায়েদের সঙ্গে কারাগারে থাকা শিশুদের পড়াতেন।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন নিহত দম্পতির মেয়ে ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদের আদালত। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার অন্য আসামি মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ঐশীর অন্য বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পান। দু’টি খুনের জন্য পৃথক দু’টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। দু’টি অপরাধের জন্য আলাদা করে ঐশীকে দু’বার ফাঁসি ও দু’বারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের সাতদিন পর ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছে।
পরে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিল গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেনট। একইসঙ্গে জরিমানা ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়। পরে এই দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ঐশী আপিল বিভাগে আবেদন করে। যেটি এখনো বিচারাধীন আছে।
সোনালীনিউজ/আইএ