• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

চাকরি বাঁচাতে দুই শিক্ষকের কাণ্ড


রংপুর প্রতিনিধি মার্চ ২০, ২০২১, ০৩:৫১ পিএম
চাকরি বাঁচাতে দুই শিক্ষকের কাণ্ড

ফাইল ছবি

রংপুর: সম্প্রতি দুই শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণ পেয়েছে এনটিআরসিএ। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাদিরাবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে জালসনদ নিয়ে কর্মরত আছেন দুই শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হারেছ মিয়া এবং বাংলার শিক্ষক শাহনাজ বেগম জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে চাকরি করছেন।

আরো পড়ুন : প্রাথমিকের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা বাতিলের চিন্তা 

কিন্তু জাল সনদধারী এ শিক্ষকরা থেমে থাকেননি। চাকরি বাঁচাতে এনটিআরসিএর কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া আদেশ তৈরি করেছেন। যা দেখে বিভ্রান্ত হয়েছেন খোঁদ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তবে, জালসনদধারী এ দুই শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে এনটিআরসিএ। 

সম্প্রতি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর কাদিরাবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষক মো. আব্দুল হারেছ মিয়া এব শাহনাজ বেগমের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়। সনদ যাচাই শেষে তা জাল বলে প্রমাণ পায় এনটিআরসিএ। গত ৩০ ডিসেম্বর সনদ দুটি জাল বলে যাচাই প্রতিবেদন দেয়া হয়।

এনটিআরসিএর দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হারেছ মিয়া যে সনদটি জমা দিয়ে চাকরি করছেন তা অনুত্তীর্ণ। পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে না পেরে তিনি সনদ জাল করেছেন বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। 

অপরদিকে যাচাই প্রতিবেদনে এনটিআরসিএ আরও জানায়, বাংলার শিক্ষক শাহনাজ বেগম যে সনদটি দিয়ে চাকরি করছেন তার মূল মালিক মজিবর রহমান নামের এক প্রার্থী। অন্যের সনদ দিয়ে চাকরি করছেন শাহনাজ। সে প্রেক্ষিতে ৩০ ডিসেম্বর দেয়া সনদ যাচাই প্রতিবেদনে জালিয়াতি করে চাকরি করা জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্দেশনা দেয়। 

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, এ শিক্ষকদের মধ্যে মো. আব্দুল হারেছ মিয়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পেয়ে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ ১০ বছর ভুয়া সনদ নিয়ে অবৈধভাবে এমপিওভোগ করছেন। আর শাহনাজ বেগম এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায় তাদের সনদ যাচাই করা হয়। বিষয়টি নিষ্পিত্তি না হওয়ায় তাদের কোন বিল ছাড় করা হচ্ছে না বলেও জানা গেছে। তবে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানে একটি আদেশ জমা দেন এ দুই শিক্ষক। যা দেখে বিভ্রান্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষকরা এনটিআরসিএর একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে আদেশটি তৈরি করেছেন। ভুয়া আদেশটিতে দাবি করা হয়েছে, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদের সনদযাচাই প্রতিবেদনটি বাতিল করা হয়েছে। আদেশে এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলামের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। যদিও আদেশটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন তাজুল ইসলাম। 

কাদিরাবাদ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়র প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান শুক্রবার জানান, দুই শিক্ষককে নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। এনটিআরসিএর সনদ যাচাইয়ে বলা হয়েছে তাদের সনদ ভুয়া। আর শিক্ষকরা একটি আদেশ জমা দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে সনদযাচাই আদেশ বাতিল করা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিনা কি করবো। বিষয়টি এনটিআরসিএকে জানিয়েছি। যদিও শিক্ষকরা নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন তাদের বহাল করতে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায় তাদের সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠাই। আর তাদের সনদ নিয়ে সন্দেহ থাকায় বিল ছাড়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানি করছেন। তারা চাপ দিচ্ছিন। এনটিআরসিএকে আমি লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা যে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

সনদযাচাইয়ের ভুয়া প্রতিবেদনটি নিয়ে এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক বলেন, ভুয়া আদেশটির ভাষা দেখলেই বোঝা যায় তা এনটিআরসিএ থেকে জারি করা না। অভিযুক্তরা ভুয়া যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আমার স্বাক্ষর জাল করে। এনটিআরসিএ এমন কোন চিঠি ইস্যু করেনি। আমাদেরর নথিতেও এ ধরণের চিঠির তথ্য নেই।

তিনি বলেন, এ ধরণের ভুয়া আদেশ দিয়ে অনেকেই জালসনদ সঠিক করার চেষ্টা করছেন। 

তিনি আরও বলেন, জাল সনদধারীদের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্দেশনা চেয়েছেন। শিগগিরই তাদের বিষয়টি লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানানো হবে। জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে এনটিআরসিএ। জাল সনদে চাকরি করে কেউ পার পাবে না। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!