বরগুনা : ৬৫ দিনের মৎস্য ধরা নিষেধাজ্ঞায় প্রতি জেলে পরিবার ইতোমধ্যে সরকারি সহায়তা পেয়েছে ৫৬ কেজি করে চাল। মাত্র ৮শ ৬০ গ্রাম চাল একটা জেলে পরিবারে একদিনের জন্য যা গড়ে পাঁচ সদস্যের জেলে পরিবারের জন্য নিতান্তই অপ্রতুল মনে করছেন জেলেরা। উপকূলে ৬৫দিনের মৎস্য অবরোধ শুরু হয়েছে ২০ মে থেকে। আয়-রোজগারের বিকল্প কোনো সুযোগ না থাকায় বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনাভাইরাসজনিত লকডাউন ও বঙ্গোপসাগরে ৬৫দিনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধের কারণে বরগুনার জেলেপল্লীতে চলছে দুর্দিন। ঋণ, ধার-দেনা ও দাদনের জালে আটকিয়ে বহু কষ্টে জীবনযাপন করছেন সমুদ্র উপকূলীয় জেলেরা।
উপকূলীয় সমুদ্রগামী জেলে ও ট্রলার মালিকরা বলছেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার এদীর্ঘ সময়ের জন্য সরকার থেকে প্রতি পরিবারের জন্য মাত্র ৫৬ কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে। যা একটা জেলে পরিবারের জন্য খুবই অপ্রতুল। কোনো আর্থিক সহায়তা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে জেলেরা। তারা আরো বলছেন, ঋণ, দাদন, ধারদেনা ইত্যাদির প্রভাবে এ অবরোধ মানতে চাচ্ছে না উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বাংলাদেশের জল সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার অর্ধশতাধিক জেলেপাড়ায় আট হাজার ২২৭টি জেলে পরিবারের ৩৭ হাজার ২২ জন সদস্য রয়েছে। এসময়ে উপকূলীয় এলাকার জেলেদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার স্বল্প পরিমানের চাল প্রদানের বিষয়টি খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন জেলেরা।
কয়েকটি মৎস্য পল্লী সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকা সাগর ও নদ নদী ঘেষা জনপদের বেশির ভাগ পরিবার জেলে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশ সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে জেলেরা নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছেন। বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দকৃত চাল দিয়ে তিনবেলা কাটানো সম্ভব নয় বিধায় জেলেরা বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন মাছ শিকারে। এমন দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী জেলেদের উৎসাহিত করছে সাগরে মাছ শিকার করতে। ফলে পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মৎস্য শিকারে যাচ্ছে অনেক জেলে।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রতিজেলে সরকারি চাল পেয়েছেন ৫৬ কেজি। প্রাপ্ত এ চাল দিয়ে একটা জেলে পরিবারের সংসার চালানো দুঃসাধ্য। তিনি আর্থিক সহায়তারও জোর দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। অনেক জেলে আসেনি এখনো নিবন্ধনের তালিকায়। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিক ও জেলেদের ঋণ সহায়তার দাবি জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। এরমধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২ শ ৭৭ জেলে পাবে খাদ্য সহায়তা ৮৬ কেজি করে চাল।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :