শেরপুর : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী ঢাকা থেকে সাধারণ বাসে নিজের নির্বাচনি এলাকা শেরপুরের নকলায় যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তবে এটিই প্রথম নয়। এভাবেই যাতায়াত করেন মতিয়া চৌধুরী। তিনি শেরপুর-২ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও তিনবারের কৃষিমন্ত্রী। মন্ত্রী থাকার সময় তিনি সরকারি গাড়িতে যাতায়াত করলেও বাকি সময়টা সরকারি কোনো প্রটোকল ছাড়া বাসে চড়ে যাতায়াত করেন।
গত ৪ জানুয়ারি সকালে মতিয়া চৌধুরী ঢাকার মহাখালী বাসে করে শেরপুরের নকলায় যান। নকলা ও নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে ৬ তারিখ বিকেলে আবার বাসেই ঢাকায় ফেরেন। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আগে থেকেই সাদামাটা জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। মন্ত্রী থাকার সময় শুধু সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন। এই সময়টা ছাড়া তার চলাফেরা আগের মতোই।’
জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির সভাপতি ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরী অন্য যাত্রীদের মতোই ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি আসলে অন্যদের জন্য উদাহরণ।’
পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন বলেন, ‘অনেক অনুরোধের পর আপা আমার মাইক্রোবাসে চড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গেলেও গ্যাস খরচ তিনিই দেন।’
মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬ সালের জুনে জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কৃষিমন্ত্রী হন। সে সময় থেকে একেবারে সাধারণ জীবনযাপন করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে মতিয়াকে আগের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই দেয়া হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরেও তিনি একই দায়িত্বে ছিলেন। তবে ২০১৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মতিয়াকে আর মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়নি।
মতিয়া একা নন, টানা ১০ বছর যারা মন্ত্রীসভায় ছিলেন তাদের বাদ দিয়ে এবার নতুন মুখ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মতিয়ার নির্দেশনায় বাংলাদেশের কৃষি পাল্টে গেছে অনেকটাই। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সার ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন মতিয়া। তিনি মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত সারের জন্য কৃষকের হাহাকার এমনকি গুলিতে বহু চাষির প্রাণহানি হলেও মতিয়া মন্ত্রিত্বে আসার পর এই সংকট ইতিহাস হয়ে যায়।
রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মতিয়া চৌধুরী বামপন্থায় দীক্ষিত হন। পাকিস্তান আমলে ৬০-এর দশকে তিনি বামপন্থি ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের দাপুটে নেত্রী ছিলেন। একপর্যায়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন অগ্নিকন্যা নামে। পরে ন্যাপে যুক্ত হন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করলেও ৭৫-এর পর সেনা শাসনের কঠিন পরিস্থিতিতে ৮০'র দশকের শেষ ভাগে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। বর্তমানে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদের সদস্য তিনি।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :