নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার কবর জিয়ারত করে নগরীর শিশুবাগ বিদ্যালয়ে নিজের ভোট দিতে এসেছেন। এরপর তিনি তার ভোট প্রদান করেন।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টার দিকে কেন্দ্রটিতে উপস্থিত হন তিনি। এবার জয় পেলে টানা তৃতীয়বার নারায়ণগঞ্জের মেয়র হবেন আইভী।
এসময় মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্ধারণ করে ফেলেছেন আমাকেই ভোট দেবে।আমি একশ' পারসেন্ট নিশ্চিত- নৌকা জিতবে ইনশাআল্লাহ। আইভী জিতবে ইনশাআল্লাহ।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের ধীড়গতির অভিযোগ করেছেন তিনি। ভোটের গতি ‘স্লো’ অভিযোগ করে আইভী বলেন, নগরীরর ৩, ৫, ১৮, ১৭, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে খুবই স্লো ভোট কাস্টিং হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাচ্ছি, যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আমার লোকগুলো ভোট দিতে পারে।
এ ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিএম নতুন, বিষয়টি ভোটারদের কাছেও নতুন। তাদের ট্রেইনআপ করে গতি বাড়াতে হবে। দিন ছোট। শীতকাল। সবকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি আছে।
ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ঠিক আছে মন্তব্য করে আইভী বলেন, আমি জানি না একটু পরে কী হবে। আমি চাই ভোটাররা যাতে দ্রুত ভোট দিতে পারে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুরেরে এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে আইভী বলেন, আমি যতটুকু জানি সব জায়গায় হাতির এজেন্ট আছে। বরং আমার এজেন্ট বিভিন্ন জায়গায় ছিলনা। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি ১০০% নিশ্চিত আমি জিতব, ইনশাআল্লাহ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন আইভীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার।
এ সময় স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, সুষ্ঠু হলে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভের প্রত্যাশা করছি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, আপাতত ভোটের পরিবেশ ভালো। তবে ভোট গণনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালেই ভোট দিয়ে ভোটকেন্দ্র ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তৈমূর আলম খন্দকার।
নারায়ণগঞ্জের ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিলেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে তিনি ভোট দিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে কর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন। জানা গেছে, এরপর তিনিও নগরীরর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।
ভোট দিয়ে ভোটকেন্দ্র ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অভিযোগ করে তৈমূর আলম খন্দকার জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের একটি কেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১১ সালে তিনি বিএনপির সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ভোটের আগে রাতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে এবার মরে গেলেও ভোট মাঠ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি বিএনপির সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।
এবার সিটি নির্বাচনের মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১জন ভোটার। এরই মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন ভোটার। মোট ভোট কেন্দ্র ১৮৭টি এবং ভোট কক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩০১টি। এরই মধ্যে অস্থায়ী ভোট কেন্দ্র ২৫টি।
এবার নির্বাচনে মোট ৭টি দল অংশগ্রহণ করছে। মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ৭ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন বলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি টিম থাকবে। যার প্রতিটি টিমে ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ সদস্য ও ২০ থেকে ২২ জন আনসার সদস্য থাকবেন। এর আগে গতকাল ১৯২টি ভোটের সব সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়রপদে প্রার্থী ৭ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন—খেলাফত মজলিশের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া)। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে (হাতি) নিয়েই দেশব্যাপী বেশি আলোচনা হচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট হলে সর্বাধিক আলোচিত দুই প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এ নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে প্রার্থীরা প্রচারণা শেষ করেছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড মিলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস করলেও ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ এবং পুরুষ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :