• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেলা চলছে মাহফিলের নামে


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৪:৪০ পিএম
মেলা চলছে মাহফিলের নামে

ছবি : সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও : কোনো স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মাহফিল মাঠে মানুষের ঢল নেমেছে। অন্যদিকে মাহফিল মাঠের ভ্রাম্যমাণ দোকানে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। বক্তার বক্তব্যে মনোযোগ না নিয়ে আড্ডায় মত্ত মানুষ। সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করা বিধিনিষিধ প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। এমন অভিযোগ স্থানীয় সচেতনদের।

শনিবার(২২ জানুযারি) রাত ৯টায় দেখা যায়, উপজেলার বটতলি এলকায় একটি ট্যাকনিক্যাল কলেজ মাঠে চলছে ওয়াজ মাহফিল। মহফিলের প্যান্ডেল ঘুরে দেখা যায় মঞ্চে স্থানীয় এক বক্তা ইসলামি বক্তৃতা করছেন। ডান পাশে চেয়ারে বসা কিছু মুসুল্লি আর সামনে কয়েকটি শিশু বসে বক্তব্য শুনছেন। যাদের কারো নেই টিকা সনদ।

ওই মাঠেই বসেছে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান। দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফুচকা, ঝালমুড়ি, কসমেটিকসহ নানা রকম পণ্যসামগ্রীর দোকান।

ফুচকা বিক্রেতা রহমত মিয়া জানান, এখানে দোকান দেওয়ায় তাকে মাহফিল কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে। এখানে যারা দোকান করছে তাদের প্রত্যেকে মাহফিল কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন।

ওয়াজ শুনতে আসা স্থানীয় রমিজ উদ্দীনের অভিযোগ, বিকেল চারটা থেকে শুরু হয়েছে এ গ্রাম্য মেলার সঙ্গে মাহফিল। এখানে ধর্মীয় অনুভূতিকে জিম্মি করা হয়েছে। তা না হলে সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এমন ওয়াজ মাহফিলের নামে ব্যবসার উদ্দেশ্যে মেলা বসতো না।

এ সময় এমন কাজে উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন তিনি। রমিজ উদ্দীন বলেন, এমনতো না যে চিরতরে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করা হচ্ছে, প্রশাসন একটু দায়িত্বশীল হলে এ আয়োজন পেছানো যেত। প্রশাসনের উচ্চ পদস্থদের বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা দরকার।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী মহসিন বলেন, মাহফিল প্যান্ডেলে স্বাস্থ্যবিধির নাটক করা হয়েছে। কাউকে ছবি ও ভিডিও করতেও দেওয়া হচ্ছে না। ফেসবুক গ্রুপে ওয়াজ মাহফিলটি লাইভ প্রচার করতে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু মাহফিল কমিটি কড়া নিরাপত্তায় রেখেছে। আমার ক্যামরা রাখার ট্রাইপড নিয়ে নেওয়া হয়েছে। বারবার মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে যেন কেউ ভিডিও না করেন। সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো এখানে হচ্ছেটা কী?

স্থানীয় ৫০ বছর বয়সী জলিল মিয়া বলেন, এখানে ওয়াজ শুনতে এসেছিলাম। এখানে মাহফিল নয় এসে দেখি বাজার বসেছে। বক্তার বক্তৃতায় মনোযোগ নেই অনেকের। দোকানাপাটে মানুষের ভির আর চেচামেচি কানে এসে বাজছে। কাছেই বাসা আমার। ঘরে বসে শুনবো, আর এবাদত করবো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এলাকার এক ছাত্র রায়হান কবির বলেন, ওমিক্রণ প্রতিরোধে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠেই চলছে ওয়াজ মাহফিলের নামে রমরমা মেলা। ওখানে যেসব শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে তারা ৮০ শতাংশ আঠারো বছরের নিচে। যারা এখনো টিকা গ্রহণ করেনি। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে প্রশাসন ঢিলেমিতে এমন আয়োজন চলছে। এভাবে প্রকৃতপক্ষে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে না।

মাহফিল কমিটির অন্যতম সদস্য রুবেল মাস্টার জানান, হাটপুকুর উত্তর পাড়া জামে মসজিদের ছাদ ঢালাই করার জন্য এ মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী চলবে এ মাহফিল। ২৩ জানুয়ারি ওয়াজ মাহফিলের দ্বিতীয় দিন। এদিন ঢাকা থেকে আসবেন প্রধান বক্তা আব্দুল খালেক শরীয়তপূরী।

কয়েকজন মিলে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে এ আয়োজন করতে। আয়োজন সফল হলে তিনি প্রায় ৬ লাখ টাকা মসজিদের ফান্ড হিসেবে পাবেন বলে জানান।

এ বিষযে মুঠোফোনে কথা হয় হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুলের সঙ্গে। তিনি জানান, আমি এখন ঢাকায় রয়েছি। ঠাকুরগাঁওয়ে থাকলে এটি বন্ধ করতে জোর ভূমিকা রাখতে পারতাম।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম বলেন, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উপজেলায় একটি মাহফিল চলছে। আমি খবর পেয়েছি। ধর্মীয় বিষয়, তাই সরাসরি অ্যাকশনে যেতে ভাবতে হচ্ছে। আমরা দেখছি কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!