জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছিতের শিকার ওই শিক্ষকের নাম মু. মাহবুবর রহমান। তিনি উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং ক্ষেতলাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন। আর অভিযুক্ত হলেন আশরাফ আলী ফকির। তিনি উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেল আফরোজা আরা বানুর স্বামী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেল আফরোজা আরা বানু বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ আলী ফকিরের স্ত্রী। আর মু. মাহবুবর রহমান ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়ের দোকান ভাড়ার টাকা নিয়ে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। প্রধান শিক্ষকের স্বামী আশরাফ আলী বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডলকে জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল মুঠোফোনে শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে তার কার্যালয়ে আসতে বলেন।
শিক্ষক মু. মাহবুবর রহমান তার সহকর্মী জিল্লুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ১টার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কার্যালয়ের ফটকের সামনে আসেন। সেখানে আশরাফ আলী ও শিক্ষক মাহবুবর রহমানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আশরাফ আলী ফকির শিক্ষক মু.মাহবুবর রহমানের গালে দুটি চড় মারেন। এ নিয়ে সেখানে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে শিক্ষক মাহবুবর রহমান আহত হন। এরপর সেখানকার লোকজন শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করায়।
শিক্ষক মাহবুবর রহমান বলেন, আজ তেলাল কুসুমশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রাথমিকের ইউনিয়ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা হচ্ছিল। আমি সেখানে ছিলাম। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মুঠোফোনে কল করে আমাকে তার কার্যালয়ে আসতে বলেন। আমি হাটশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিল্লুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের ফটকের সামনে পৌঁছায়। সেখানে আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বামী আশরাফ আলী ফকির আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। আমার গলা ও ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে।
বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ আলী ফকির বলেন, আমার স্ত্রীর বিদ্যালয়ের দোকান ঘরের ভাড়ার টাকা নিয়ে সহকারী শিক্ষক মাহবুবর রহমানের দ্বন্দ্ব হয়। আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষক মাহবুবর রহমান তার ফেসবুকে আজেবাজে কথা লিখেছেন। এ কারণে শিক্ষক মাহবুবর রহমানের গালে কষে দুটি চড় মেরেছি। আমি চড় মারার কথার ওসিকেও বলেছি।
ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল বলেন, প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে আমার কার্যালয়ে আসতে বলেছিলাম। আমার কক্ষে ঢোকার আগেই দুই পক্ষ মারামারি করেছে। ঘটনাটি দুঃখজনক।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানী বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। আগামীকাল সহকারী শিক্ষক মাহবুবর রহমানকে থানায় আসতে বলেছি। তার কথার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনালীনিউজ/এসআই