• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পদ্মা সেতু দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে দর্শনার্থীরা  


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জুন ২৪, ২০২২, ০৯:২২ পিএম
পদ্মা সেতু দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে দর্শনার্থীরা  

মুন্সীগঞ্জ : অপেক্ষার পালা শেষে শনিবার ((২৫ জুন) উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধন করবেন। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মাপাড়ের মানুষ। উদ্বোধনকে ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে সেতু দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা।

শুক্রবার (২৪ জুন) ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে দেখাযায়, মহাসড়কের সড়ক বিভাজক ও মহাসড়কের দুপাশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যানার,বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।আ.লীগের নেতাকর্মী থেকে সরকারি সংস্থাও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড লাগিয়েছে। মাওয়া পুরাতন ঘাটে যেতে সড়কেও একই অবস্থা। শিমুলিয়া ঘাটে প্রবেশ পথ শিমুলিয়া-ভাঙা মোড়ে বড় বড় বিলবোর্ড।মোড়ে বানানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুলবাগান। শিমুলিয়া ঘাটকে সাজানো হয়েছে ব্যানার, বিলোর্ড  রঙবেরঙের আলোকসজ্জায়। ঘাটের পার্কিং ইয়ার্ডে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডকুমেন্টরি প্রদর্শনীর বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে।

সেতু উদ্বোধন‌ স্থল ও সেতু ঘুরে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে কথা হয় আহাদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি নিলফামারীর জেলায়।

আহাদুল জানান, দীর্ঘদিন তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পদ্মা সেতু দেখেছেন তবে বাস্তবে দেখা হয়নি তার। এই সেতু পার হয়ে তার গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে না। তারপরেও তিনি দেশের এত বড় একটি অর্জন নিজ চোখে দেখতে এসেছেন। উদ্বোধনের দিন সেতুতে উঠতে চান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থেকে ইতিহাসের সাক্ষী হতে নীলফামারী থেকে এসেছেন তিনি ।
 
মাহমুদুল হাসান নামে আরো এক দর্শনার্থী বলেন, তার বাড়ি ময়মনসিংহ তিনিও পদ্মা সেতু দেখতে এসেছেন।তার সময় যেনো কাটছে না। পদ্মা সেতুতে উঠবো।সেতু দিয়ে পদ্মার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যাবো।

শিমুলিয়া ঘাটে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা বাগেরহাটের আফরোজা আক্তার বলেন, এক মাস আগে সেতু উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করা হয়েছিল।সেদিন থেকে দিন গুণেছি। সময় যত কাছে আসছিল ততই উচ্ছাস বাড়ছিল। আজ ফেরিতে করে বাড়ি যাচ্ছি। উদ্বোধনের পর গাড়ি নিয়ে সেতুতে করে ঢাকায় ফিরবো।
 
পদ্মা পারপারের অপেক্ষায় থাকা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা গুলোর কমপক্ষে ১৫-২০ জনের সঙ্গে কথা হয়। সেতু উদ্বোধন মেতে আছেন তারা। তারা জানান,কয়েক বছর আগেও পদ্মা সেতু নির্মাণ অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে ছিল।সব সঙ্কা কাটিয়ে পদ্মা সেতু হয়েছে।পদ্মা সেতু আমাদের জন্য কি, আমরাই সবচাইতে ভালো জানি।

পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লাশে পরিণত হয়েছি। অনেকের সুখের সময় গুলো এই ঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরির অপেক্ষায় থেকে নষ্ট হয়েছে। কত আনন্দ কতকিছু বিসর্জন দিয়েছি এ ঘাটে। শনিবারের পর থেকে আর এ দুর্ভোগ থাকবে না। সেতু দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাবো।ভেবেই যেনে আর সময় কাটছেনা।আনন্দের বাধ বাঙছে আমাদের।

মাদারীপুরের আমিরাবাদ এলাকার আরিফুল ইসলাম জানান, ঢাকায় চাকরি করেন। সেখানেই থাকতেন।সপ্তাহিক ছুটিতে একদিনের জন্য বাড়ি আসতে।তিনি মুচকি হেসে বলেন, ঢাকা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। ২৬ তারিখ থেকে  বাড়িতে আসা যাওয়া করেই অফিস করবো। বাড়ির মানুষের সঙ্গে থাকব।

লৌহজং মাওয়া এলাকার বাসিন্দা  রাসেল হোসেন নিরব  বলেন, শত প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ তাদের বাপদাদার বসত ভিটা ছেড়ে দিয়ে কষ্ট পেয়ে ছিলেন।পদ্মা সেতু হওয়ায় সবাই গর্বিত। খুসিতে আত্মহাড়া। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মত আমাদের মুন্সিগঞ্জেও আনন্দেন জোয়ার বইছে।

লৌহজং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদার বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র লৌহজং উপজেলার মানুষের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে । সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র ‌করে শিমুলিয়া ঘাটে তিনদিন ব্যাপি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। করা হবে আতশবাজি । সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষের উচ্ছাস উদ্দীপনা উপচে পরছে।

মুন্সীগঞ্জ ২ আসনের এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন,পদ্মা সেতু আমাদের প্রেরনা। স্বাধীনতার পরে এটা অনেক বড় অর্জন। আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি। শেখ হাসিনার দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাঙালি জাতির আরেকবার পরিচয় তুলে ধরেছেন। এর ফলে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। পায়রা ও মংলা বন্দরের সাথে পদ্মা সেতু হয় সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে ।

পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে ।পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে রাস্তার দু'পাশে ইকোপার্ক হবে  দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ঢল নামবে।

পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের  বলেন,শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। তবে উদ্বোধনের পর সাধারণ দর্শনার্থীদের সেতু ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এ বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে, সময়ও কমবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!