• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে এবার আমের বাম্পার ফলন


জনাব আলী, রাজশাহী মে ৪, ২০২৩, ০২:৩৮ পিএম
রাজশাহীতে এবার আমের বাম্পার ফলন

রাজশাহী: আমের রাজধানী রাজশাহীতে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করেছন চাষি ও ব্যবসায়ী। সেই অনুযায়ী আম চাষিরা এখন গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকারিভাবে আজ বৃহস্পতিবার ( ৪ মে) থেকে দেশি গুটি জাতের আম বাজারে তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আম পরিপক্কতা পেতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা। ফলে আমকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।  

রাজশাহীর আমের সুখ্যাতি দেশ-বিদেশের সবখানেই। প্রতিবছর আমের মৌসুম এলে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের আনন্দে মন ভরে উঠে। ব্যবসা সফল এই ফলের কদর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এবার আমের বাম্পার ফলনে আম বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আমকে ঘিরে গড়ে উঠে শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের অনলাইন ব্যবসায়ী। এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গত কয়েক বছর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে রাজশাহীর আম বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়ে। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি ও রমজান পেরিয়ে যাওয়ায় আমের ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন আম চাষিরা। আমের মৌসুমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিদিন বিশেষ ট্রেন, কুড়িয়ার, পরিবহণসহ বিভিন্ন মাধ্যমে রাজশাহী থেকে কয়েশ কোটি টাকার আম যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সুস্বাদু ও পরিপক্ক আম পরিবহণে চালু হয় ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেন, বিদেশেও রপ্তানি হয় রাজশাহীর আম, সংরক্ষণের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ হিমাগার।

রাজশাহী অঞ্চলের আম বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে গাছ থেকে পাড়া ও বাজারজাত করা যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। আজ থেকে গুটি আম কেনা-বেচা করা যাচ্ছে। ফলে এখন রাজশাহীর আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বুধবার (৩ মে) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪ মে গুটি আম নামানো যাবে। গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ ২০ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি ২৫ মে থেকে নামিয়ে হাটে তুলতে পারবেন বাগান মালিক ও চাষিরা। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে। ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম নামানো যাবে। আর কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আম নামানোর নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে হবে সবাইকে।

প্রসঙ্গত, এ বছর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। এ বছর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজশাহী নগরীর কোর্ট এলাকার আম ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আম গাছে অনেক পরিচর্যা করে ব্যাপক ফলন পেয়েছি। এবার আমের দামও ভালো হবে বলে জানান তিনি।

বাঘার আম ব্যবসায়ী মানিক, রাশিদুল, ইয়াকুব আলী জানান, গত বছর ভরা মৌসুমে লখনা জাতের আম ৬০০-৮০০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে এবং হিমসাগর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি, ফজলি ৭শত থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে বেচাকেনা হয়েছে। এবার আমের দাম অনেক বেশি হবে বলে আশা করছি। কারণ সব জিনিসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ী ভাড়া বেশি, তাই আম বিক্রয় করে লাভবান হওয়া যাবে।

আড়তদাররা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে আমের জন্য অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্যাপক আমের আমদানীও হবে কিন্তু বাজারে বাহিরের পাইকার কম আসলে দামও কম হতে পারে।

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার শাহবাজপুর এলাকার আম চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, বাগানগুলোতে সঠিক পরিচর্যা করায় এবার আমের গুণগত মান অনেক ভালো। অথচ গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক দামও ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি। তিনি বলেন, গত বছর দর পতনের পিছনে করোনার প্রভাব ছিলো। স্থানীয় ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণেও চাষিরা দাম অনেক কম পেয়েছেন। এবার এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে লাভবান হবেন বলে আশা রয়েছেন তিনি।

বানেশ্বর বাজারের আম আড়তদার বজলুর রহমান জানান, গত বছর প্রথম দিকে আমে বাজার অনেক ভালো ছিল। বর্তমানে এখও বাজারে আম আসেনি। তবে যারা বিভিন্ন বাগান থেকে আম কিনে বাজারে বিক্রি করছেন তারা লাভ হচ্ছেন।
বাঘা উপজেলার অমরপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ীরা লায়েব উদ্দিন লাভলু জানান, গত বছর আম গাছে থাকতে হিমসাগর (ক্ষিরসাপাত) আম কিনেছেন ১৫‘শ টাকা লক্ষনভোগ ৮‘শ টাকা অন্যান্য আম ৮‘শ থেকে ১হাজার টাকা দরে। অর্থাৎ তারা বেশি দামে বাগান কিনেছেন। এখন বিভিন্ন জাতের আটি বা গুটি আমের পাশাপাশি রয়েছে খিরসাপাত, রানিপছন্দ লোক্ষনভোগ আম। কিন্তু অন্য বছরের চেয়ে এবার বাজারে আমের আমদানি অনেক বেশি হবে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আমের উৎপাদন বেশি হাওয়াই এবার দাম কমও হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুস্বাদু ও পরিপক্ক আম দেশের বিভিন্নপ্রান্তে পৌঁছে দিতে বিশেষ ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। স্বল্প খরচে আম পরিবহণে গত বছর ২৭ মে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ উদ্বোধন করেন। কেজিপ্রতি মাত্র ১ টাকা ১৭ পয়সা খরচে এই ট্রেনে রাজশাহীর আম ঢাকায় যায়। যেখানে কুড়িয়ারে ঢাকায় আম পাঠাতে খরচ হয় কেজি প্রতি ১২ টাকা। 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম জানান, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে রাজশাহী থেকে কেজিপ্রতি মাত্র ১ টাকা ১৭ পয়সা খরচে আম ঢাকায় যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ১ টাকা ৩০ পয়সা। এই ট্রেনে কোন যাত্রী পরিবহন করা হয় না। ২০২১ সালে প্রথমবারের মত এই ট্রেন চালু করা হয়েছিল। প্রথম বছর চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে সাড়া পাওয়ায় গত বছরও ট্রেনটি চালু করা হয়। প্রতিদিন ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুপুর ২টায় ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছে ৫টা ২০ মিনিটে। আম উঠানোর পর ৫টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায়। এছাড়া রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায়। এই ট্রেনে স্বল্প ভাড়ায় প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের আমসহ অন্যান্য ফল এবং কাঁচামাল ঢাকায় পৌঁছানো হয়।

রাজশাহীর আম বিদেশেও যাচ্ছে। গত বছর রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানির জন্য তিন টন আম ঢাকায় পাঠানো হয়। বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, গত বছর বাঘা থেকে প্রায় ৩০০ টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এবারও আম পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম রাজশাহীর আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী জেলায় উৎপাদিত আমের অর্ধেক উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়। এখানে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়।

রাজশাহী অঞ্চলের আম সংরক্ষণে গড়ে উঠছে হিমাগার বা কোল্ড স্টোর। বিভাগে দুটি আম সংরক্ষণের কোল্ড স্টোর গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কোল্ড স্টোর দুটির কাজ চলমান। এর একটি হচ্ছে রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুরে এবং অপরটি নাটোরের আহম্মদপুরে। রাজশাহীর শিবপুরহাট ও নাটোরের আহম্মদপুরে এই দুইটি হিমাগার স্থাপনের কাজ চলছে।

সোনালীনিউজ/জেএ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!