পাবনা: লিচুর রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদী। ইতিমধ্যেই ঈশ্বরদীর হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের দেশি মোজাফরপুরি লিচু। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই কদর রয়েছে এখানকার রসালো লিচুর। আগাম জাতের এ লিচু আকারে ছোট ও বিচি বড়। গত বছরের তুলনায় এবছর ৪০ শতাংশ গাছে মকুল আসে। তার উপর তীব্র খরা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচু আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। ফলে লিচুর ফলন বিপযয়ের আশংকায় চিন্তিত লিচু চাষিরা। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার এসব আগাম দেশি জাতের এ লিচু ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ায় ফলন কম হলেও খুশি চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত উপজেলার জয়নগর, মানিকনগর,সাহাপুর, মিরকামারি, তিলকপুর,আওতাপাড়া, বাশেরবাদা গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়ে সারিসারি লিচুর বাগান।শহরের রিকশাস্ট্যান্ড, চাঁদ আলী মোড়, রেলগেট, রেল ফুটওভার ব্রিজ মোড়, রেলস্টেশন ও বাজারের প্রধান ফটকের সামনে ফলের দোকানে আওতাপাড়া, আড়মবাড়িয়া দাশুড়িয়া বাজার, মুলাডুলি হাটে আগাম জাতের লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈশ্বরদীর লিচু সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় অনেকে কিনছেন।
আবুল কাশেম নামের এক বিক্রেতা জানান, দুদিন হলো বাজারে লিচু উঠা শুরু হয়েছে। এখনো বাজারে পর্যাপ্ত লিচু উঠেনি। যে লিচুগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো আগাম জাতের দেশি আটি লিচু নামে পরিচিত। এ লিচুর সুস্বাদু ও রসালো হলেও বিচি বড় ও আকারে ছোট। বোম্বাই ও চায়না লিচু উঠতে আরও ২০ -২৫ দিন সময় লাগবে।
শহরের রিকশাস্ট্যান্ডে লিচু বিক্রেতা আবির হোসেন বলেন, প্রথম দিন দুই হাজার লিচু এনেছিলাম সব বিক্রি হয়ে গেছে। আজ তিন হাজার এনেছি। সকাল থেকে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বিকেলের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে আশা করি।
আড়মবাড়িয়া বাজারে লিচু বিক্রেতা আসমত আলী বলেন, বাজারে লিচু প্রথম উঠেছে দেখে অনেকেই কিনছেন। এখানকার লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি তাই কদরও বেশ ভালো। দুই তিন দিনের মধ্যে লিচুর বেচাকেনা আরও বাড়বে।
আব্দুস সামাদ নামের এক ক্রেতা জানান, দেশি লিচু বাজারে এলে প্রতিবারই বাড়ির জন্য নিয়ে যাই। এবার কিনতে এসে দেখলাম গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। গতবছর ১০০ দেশি লিচু ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার লিচু বিক্রেতারা ১০০ লিচুর দাম হাঁকছেন ২৬০-২৮০ টাকা। মিজানুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, দেশি লিচু আকারে ছোট হলেও সুস্বাদু। অনেকে টক বলে কিনতে চাইছেন না। আসলে সব লিচু টক না। কিছু লিচু এখনো পরিপক্ব হয়নি। তবুও বাজারে আনা হয়েছে।
উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ঈশ্বরদী তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টন।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়ভাবে দেশি বা আটি লিচু হিসেবে পরিচিত হলেও এটি মোজাফরপুরি জাতের লিচু। এ লিচুর বিচি বড় হয় ও আঁশ কম হয়। এগুলোর সাইজ ছোট-বড় হলেও পরিপক্ব। স্বাদ মিষ্টি ও হালকা টক-মিষ্টি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, বাজারে মোজাফরপুরি জাতের দেশি লিচু উঠা শুরু হয়েছে। এগুলো আগাম হয়। উপজেলায় ৮০ শতাংশ বোম্বাই লিচু ও ২০ শতাংশ দেশি লিচুর আবাদ হয়। বোম্বাই জাতের লিচু জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে উঠা শুরু হবে।
সোনালীনিউজ/এএ/এসআই