লক্ষ্মীপুর: স্বাধীনতার আগ থেকে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলায়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে চলা ভাঙনে মেঘনায় বিলীন হয়েছে দুই উপজেলার ৩৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৩০ হাজার একর ফসলি জমি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ, কাঁচা-পাকা সড়কসহ অসংখ্য মসজিদ, বিভিন্ন স্থাপনা ও হাটবাজার। নতুন করে ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও ১০টি বিদ্যালয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর ভাঙন কাছাকাছি চলে আসায় জোয়ারের সময় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। বাস্তবায়নাধীন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো নদীতে বিলীন হতে বেশি সময় লাগবে না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে মেঘনার তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ও চরফলকন এবং রামগতি উপজেলার চরআলেকজান্ডার, চরআব্দুল্লাহ, চরআলগী, চররমিজ, বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নগুলোতে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়। অব্যাহত এই ভাঙনে অসংখ্য গ্রাম সম্পূর্ণ এবং বেশ কয়েকটি গ্রামের অধিকাংশ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ভাঙনের শিকার হয় ওই সব গ্রামের ২১টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কমলনগর উপজেলার ১৪টি ও রামগতি উপজেলার ৭টিসহ ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কমলনগর উপজেলার ৪টি মাদ্রাসা ও ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং রামগতি উপজেলার ২টি মাদ্রাসা ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভাঙনের শিকার হওয়া কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েও একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়। এখনও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কমলনগর উপজেলার ৬টি এবং রামগতি উপজেলার ৪টিসহ আরও ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙনের ১০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে চলে আসায় জোয়ারের সময় পানিতে আঙিনা ও যাতায়াতের পথ তলিয়ে যায়।
দক্ষিণ-পশ্চিম চরফলকন ইসলামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহানারা আক্তার জানান, মেঘনার ভাঙন ইতোমধ্যে বিদ্যালয় ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। বিদ্যালয় এলাকার কিছু অংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীও কমে গেছে।
কমলনগর উপজেলার বিলীন হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মতিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালতলী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর-পশ্চিম চরজগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য চরজগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ-পূর্ব চরজগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ-পূর্ব চরলরেন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম চরলরেন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরলরেন্স খানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর চরকালকিনি কেআলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিএস ফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজগবন্ধু মুন্সীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজগবন্ধু সিনিয়র মাদ্রাসা, মাতাব্বরনগর দারুচ্ছুন্নাহ আলিম মাদ্রাসা, সফিকগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, চরফলকন ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চরফলকন উচ্চবিদ্যালয়, চরজগবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় ও চরকালকিনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
অপরদিকে রামগতি উপজেলার বিলীন হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পশ্চিম চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম উত্তর চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য চরআলেকজান্ডার-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লম্বাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য-পূর্ব আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরআব্দুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা, রঘুনাথপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসাতুল বানাত দাখিল মাদ্রাসা ও সেবাগ্রাম ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়।
কমলনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ভাঙনের মুখে পড়ায় বিভিন্ন সময়ে ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন যেগুলো হুমকির মুখে পড়বে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেগুলো স্থানান্তর করা হবে। রামগতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. দিদার হোসেন জানান, বিভিন্ন সময়ে উপজেলার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো নানান সমস্যার মুখে পড়ে। বর্তমানে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দুর্ভোগে রয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে রক্ষায় ২০২১ সালের ১ জুন একনেক সভায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সে কাজ এখনও চলমান। শ্রমিক সংকটের কারণে কিছু ঠিকাদার কাজ সাময়িক বন্ধ রেখেছেন। পুনরায় কাজ শুরু করতে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোনালীনিউজ/জেইউবি/এসআই