ভৈরব: একমাত্র ভাইয়ের প্রতি বোনের স্নেহ মায়া মমতা ভালোবাসা এতটাই মধুর ছিল- লাশ দেখে সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন বিসর্জন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল কলেজছাত্রী নাজা মোল্লা। ছোট ভাই স্কুলছাত্র নিরব মোল্লার (১৩) লাশ দেখে বোন নাজা মোল্লা (১৮) নিজ বাসার তিনতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে নিজের প্রাণ দিল।
এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইবোনের মৃত্যুর খবরে ভৈরব শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুটি নিষ্পাপ প্রাণ এভাবে ঝড়ে যাবে কেউ ভাবতে পারেনি। দুই সন্তান হারিয়ে বাবা-মা এখন পাগলপ্রায়। স্বজনদের মধ্য চলছে মাতম। ভৈরবের মানুষজন বলছে এমন নির্মম মর্মান্তিক ঘটনা জীবনে কখনো দেখেনি।
ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার মোল্লাবাড়ির বাসির মোল্লার ছেলেমেয়ে তারা দুজন। ছেলে নিরব মোল্লা স্থানীয় ব্লুবার্ড কিন্ডারগার্টেনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। মেধাবী মেয়ে নাজা মোল্লা ভৈরবের রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজে এইসএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল।
বাসির মোল্লার একমাত্র ছেলে ছিল নিরব। দুটি মেয়ে। এক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে আর নাজা ভাইয়ের লাশ দেখে আত্মহত্যা করল।
দুজনের মা রুমানা বেগম কেঁদে কেঁদে বলছেন- আমার একি হলো। আল্লাহ আমার দুটি সন্তান কেড়ে নিয়ে গেল।
বাবা বাসির মোল্লা আর্তনাদ করে বলছেন, আমার একটি মাত্র ছেলে আল্লাহ কেড়ে নিয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাব, ছেলে বড় হয়ে বড় চাকরি করবে। আমার আশা ভরসা সব শেষ হয়ে গেল। আমি কি নিয়ে বাঁচব।
বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবে আর ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে বড় চাকরিতে যোগদান করাবে। সেই আশা প্রত্যাশা আল্লাহ শেষ করে দিয়েছে বলে চিৎকার করে কাঁদছে তাদের বাবা ও মা।
জানা গেছে, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে নিরব মোল্লা বাসা থেকে বের হয়ে ফুটবল খেলতে যায়। খেলা শেষে শরীরের কাঁদামাটি মুছতে পাশের ডোবায় গোসল করতে গেলে সে পানিতে ডুবে মারা যায়। নিরব সাঁতার জানত না বলে জানায় তার পরিবার। পরে সহপাঠীরা তাকে ডোবা থেকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ খবর পেয়ে নিরবের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যান।
এ সময় তার বড় বোন নাজা মোল্লা লাশ দেখে পাগলের মতো হয়ে যায়। ছোট ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নাজা তৎক্ষণাৎ নিজ বাসায় গিয়ে তিনতলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় প্রতিবেশীরা ঘটনা দেখে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করে ডাক্তাররা। ঢাকায় নেওয়ার পথে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় নাজা মোল্লা মারা যায়।
ব্লুবার্ড কিন্ডারগার্ডেনের মালিক মো. সুমন মোল্লা বলেন, সোমবারও নিরব স্কুলে এসে ক্লাশ করেছে। আমি তাকে খুব আদর করতাম। মেধাবী ছাত্র ছিল সে।
রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষক সত্যজিৎ দাস ধ্রুব বলেন, নাজা মোল্লা মেধাবী ছাত্রী ছিল। কলেজে আসলে চুপচাপ থাকত। কথা বলত কম। আমি শুনেছি ভাইয়ের লাশ দেখে সে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। তবে এমন ঘটনা ঘটাবে কেউ ভাবতে পারেনি।
পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু মঙ্গলবার সকালে তাদের বাসায় গিয়ে চোখের পানি রাখতে পারেননি। যুগান্তর প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, আমার জীবনে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু আর কখনো দেখেনি। একটি পরিবারের দুটি সন্তান একদিনে মারা গেল। হৃদয়বিদারক ঘটনা।
সোনালীনিউজ/এম