পাবনা: পাবনা জেলার সদর উপজেলার জালালপুর বাজার সংলগ্ন বাকচীপাড়া এলাকায় এম আর এগ্রো নামে তরুণ উদ্যোক্তা রাজুর গরুর খামারে বিশাল আকৃতির তিনটি কোরবানির পশু জেলাতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে সেই পশু দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন ক্রেতারা। করছেন দর দাম। সঠিক দাম পেলেই বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা।
রাজু তার খামারের বড় তিনটি গরুর মধ্যে ফিজিয়াম জাতের কালো-সাদা মিশ্রিত রঙের গরু পাবনার রাজা, হলেস্টিন ফিজিয়াম জাতের কালো রঙ্গের গরুটি কালা পাহাড় ও ব্রাহামা ক্রস লাল রঙের গরুর নাম দিয়েছেন লালা পাহাড়। যা ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে জেলাজুড়ে। এই তিনটি দৃষ্টিনন্দন বিশাল আকৃতি গরু ছাড়াও তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে আরও প্রায় ৩০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে।
শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে গ্রামের পৈত্রিক জায়গায় গরুর খামারের কার্যক্রম শুরু করেন রাজু। ২০১০ সালে মাত্র ১০টি গরু দিয়ে ছোট পরিসরে এ গরুর খামার শুরু করেন তিনি। এখন তার খামারে সংগ্রহে সবসময় ২০ থেকে ৩০টি পশু থাকে।
রমজান ও পবিত্র ঈদুল আযহা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় গরু সংগ্রহ করেন রাজু আহম্মেদ। পরবর্তীতে সেই গরু নিজের খামারে আনার পর পরম যত্নে আরও হুষ্ঠপুষ্ট করে তোলেন। কোনো প্রকার বাইরের খাবার না দিয়ে নিজেদের তৈরি মিশ্রিত খাবার আর কাঁচা ঘাস দেওয়া হয় রাজুর খামারের পশুদের।
বেশ কয়েক বছর ধরে পাবনা জেলাসহ দেশের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিশাল আকৃতির পশু পাওয়া যায় তার খামারে। বিগত দিনগুলোতত যে কয়টি কোরবানির পশুর নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, তার মধ্যে রাজুর খামারের পশুর নাম অন্যতম। এর মধ্যে পাবনার বাদশা নামে একটি পশু আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এ বছরে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টি গরু অনলাইনে বিক্রি করেছেন তিনি। এখনও খামারে প্রায় ৩০টি ছোট-বড় কোরবানির পশু ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা থেকে রাজুর খামারে আসা গরু ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রাজুর খামার থেকে আমরা কোরবানির জন্য পশু নিয়ে থাকি। তবে বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে ছবি ও ওজন দেখে দাম দর করে গরু কিনেছি। যেমনটা ছবিতে দেখেছি যা বলেছে ঠিক তেমনটাই পাওয়া গেছে। এ বছরে সরাসরি গরু দেখার জন্য পরিবারের সদ্যদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। পছন্দ করে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচটি গরু কিনবো। আর পাবনা জেলাতে বেশ ভালো জাতের সুন্দর সুন্দর গরু পাওয়া যায়। ঈদের আগে খামারের পরিবহনে করেই সেগুলো আমাদের ঠিকানায় পৌঁছে দেবেন খামারিরা।
তরুণ উদ্যোক্তা মো. রাজু আহম্মেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে এই গরুর খামার করি। সবাই যদি চাকরি করে তবে ব্যাবসা করবে কে! আমি সারা দেশে ঘুরে পছন্দ করে বিভিন্ন উন্নত জাতের ষাঁড় গরু সংগ্রহ করি। এর পরে সেই গরুগুলোকে লালন পালন করে যত্ন নিয়ে পবিত্র ঈদুল আযহার জন্য প্রস্তুত করি। আমাদের গরুকে কখনও বাজে খাবার খাওয়ানো হয় না। পুষ্টিকর ভালো মানের খাদ্য দেওয়া হয়। তাই আমার খামারের গরু যারা নিয়েছেন, তারা আবার আমার কাছে অর্ডার দেন। আমি কখনও হাটে গরু নেই না। খামার আর অনলাইনে আমার গরু বিক্রি হয়ে যায়। এই বছরে প্রায় কোটি টাকার পশু বিক্রি করবো বলে আশা করছি।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আল-মামুন হোসেন সোনালী নিউজ কে বলেন, জেলার যে কয়েকটি বিষয়ে আমরা নাম উল্লেখ করি তার মধ্যে দুধ, দুদ্ধজাতীয় পণ্য ও কোরবানির পশু অন্যতম। এই জেলাতে বহু আগে থেকেই পশু লালন পালন হয়ে থাকে। এখানে যত খামারি আছেন, সবার খামারেই দুগ্ধ গরুর পাশাপাশি ষাঁড় গরু থাকে। পুরুষ এবং নারী উদ্যোক্তা ও পুরস্কারপ্রাপ্ত বেশ কিছু খামারিও আছেন এই জেলাতে।
তিনি আরও বলেন, জেলার খামারিদের মধ্যে বড় আকৃতির ষাঁড় গরু পালনের জন্য রাজু অন্যতম। রাজুর খামারে প্রতি বছরই বড় বড় গরু দেখতে পাওয়া যায়। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে সব খামারিদের সঙ্গে আলোচনা করে পশু বিক্রির জন্য সরকারি সহযোগিতা করা হয়। আর প্রতি বছর এই জেলা থেকে পরিবহনসহ ক্যাটেল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পশু সরবরাহের জন্য। বিগত বছরের চাইতে এ বছরে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার কোরবানির পশু বেশি আছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকলে খামারিরা এবার পশুর ভালো দাম পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সোনালীনিউজ/এম
আপনার মতামত লিখুন :