• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা


বিজয় চন্দ্র দাস, নেত্রকোনা জুন ২৩, ২০২৩, ০৪:২৯ পিএম
নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল মোহনগঞ্জে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের রমরমা ব্যবসা করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।  হাওর অঞ্চলের 'মৎস্য ভান্ডার ' হিসেবে পরিচিত এই শহরের জাল-পট্টিতে রয়েছে এসব জালের বিশাল মার্কেট ।এখান থেকেই প্রকাশ্যে খালিয়াজুরীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা সুনামগঞ্জ ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, তাহেরপুরে এসব জাল নিয়মিত  সরবরাহ করা হচ্ছে । তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, তারা কড়াকড়ি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

নিষিদ্ধ জাল বিক্রেতাদের রয়েছে কমিটি, কমিটির দুই জনের দায়িত্ব রয়েছে ঝামেলার সবদিক ম্যানেজ করার জন্য।তবে জেলেদের অভিযোগ প্রশাসন শহরের মার্কেটে পাইকারি বিক্রেতা তাদের না ধরে শুধু গরিব ছেলেদের জাল পুড়িয়ে তাদের দায় শেষ করেন। এতে পেটের দায়ে ঋণ করে জাল কিনে মাছ বিক্রি করে পরিবার-পরিজন চালানো জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন ।আর মূল বিক্রেতারা রয়ে যাচ্ছেন আড়ালে। 

সরেজমিনে, কয়েকজন জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই মার্কেটে ছোট পাশের কারেন্ট জাল ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, মাঝারী পাশের কারেন্ট জাল বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি ধরে, আর বড় পাশের জাল বিক্রি হয় ১৭০০ টাকা কেজি ধরে ।এছাড়া চায়না জাল, মশারি নেট সহ নানা ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয় ।এর মধ্যে মশারি নেট দিয়ে ছোট বড় সব ধরনের মাছ ধরা হয়।  জানা গেছে,ছোট পোনা মাছ ধরতে এই জাল বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে মোহনগঞ্জ থেকে পাইকারি ধরে কারেন্টাল নিয়ে ডিংগাপোতা হাওর পাড়ের জেলেদের কাছে বিক্রি করে। 

জাল বিক্রি করেন এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, মোহনগঞ্জের জাল পট্টি থেকে জেলেদের চাহিদা অনুযায়ী কারেন্ট জাল মশারি জালসহ অন্যান্য জাল কিনে নিয়ে বিক্রি করি স্থানীয় ছেলেদের কাছে ।এছাড়া অনেক জেলে নিজেরা ও শহরের ওইসব দোকান থেকে জাল কিনেন । বর্ষার মৌসুমে কাজ না থাকায় এসব এলাকার কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। 

 ডিঙ্গাপোতা হাওড় পাড়ের জেলে রোকন উদ্দিন,ফজর রহমান, স্বাস্থ্য মিয়া, রফিকুল, রবিনসহ অনেকে । তারা জানান, গরিব জেলেরা সুদে টাকা এনে জাল কিনেন। মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবার চালান। কেউ কেউ গরু বাছুর বিক্রি করে জাল কিনেন। কিন্তু প্রশাসন মাঝে মধ্যে ঐসব গরিব ছেলেদের অবলম্বন পুড়িয়ে দেয়। 

এসব জাল মোহনগঞ্জ বাজার থেকে কিনেছেন। কিন্তু বাজারে দিন দুপুরে যারা এসব জাল বিক্রি করছে তাদের গুদামে হানা দেয় না কেউ।পাইকারি বাজার বন্ধ হলে তো জেলেরা কিনতে পারবে না আগে পাইকারি মার্কেট বন্ধ করার দাবি তাদের।

মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চয়ন এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোহনগঞ্জ হলো হাওর অঞ্চলের অবৈধ জলের একমাত্র মার্কেট। এখান থেকে মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী পাশের সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালপুর, ও তাহেরপুর সহ পুরো হাওড় অঞ্চলের অবৈধ কারেন্ট জাল, মশারির নেট, ও চায়না জালসহ সব ধরনের জাল বিক্রি হয়। 

এসব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারের কারণে হাওরে এখন মাছের সংকট এ পর্যন্ত প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে হওয়া প্রতিটা সভা সেমিনারে বলেছি। শহরের অবৈধ কারেন্ট জালের মার্কেট এগুলোতে অভিযান চালান,মার্কেট বন্ধ হলেই অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ হবে গরিব জেলেদের মারবেন না, কিন্তু কাজের কাজ তারা কিছুই করছেন না। 

মোহনগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, মৎস্য সপ্তাহে হাওরে অভিযান চালিয়ে অনেক ধরনের অবৈধ জাল জব্দ করেছি। পাশাপাশি শহরের জাল মার্কেটে অভিযান চালিয়েছি। ওরা অনেক চালাক। উপস্থিতির টের পেয়ে একে অন্যকে ইশারা দিয়ে লুকিয়ে পড়ে।গুদাম কোথায় জানা যায় না এবার অভিযানে একটা গুদাম পেয়েছি এর মালিক পাওয়া যায়নি। 

মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, হাওরের পাশাপাশি শহরের দোকানগুলোতে অভিযান করেছি। দোকানে মূলত অবৈধ জাল গুলো রাখে না। অন্য কোথাও লুকানো থাকে ।দোকান গুলোই আসলে বন্ধ করতে হবে। এখান থেকেই হাওর অঞ্চলের এসব জাল সরবরাহ হয় শুনেছি। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে খুব কড়াকড়ি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!