চট্টগ্রাম : স্ত্রীকে খুন করতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার সোর্স কামরুল শিকদার ওরফে মুছাকে বাধ্য করেছিলেন। সোমবার (১৭ জুলাই) তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. জসিমের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা বলেন মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার। ২০০৩ সাল থেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন মুছা। পরে বাবুল আক্তারের সোর্স হন। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আদালতে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন বাবুল।
পান্না আদালতে বলেছেন, ‘মিতু খুন হওয়ার পর একটি বিশেষ নম্বরে মুছাকে ফোন করেন বাবুল আক্তার। মুছাকে বলতে শুনি, "স্যার আমি তো এটা করতে চাইনি, আমার ফ্যামিলির কোনো সমস্যা হলে আমি পুলিশের কাছে মুখ খুলব।" কথা শেষে মিতু হত্যায় মুছা জড়িত কিনা জানতে চাই। জবাবে মুছা বলেন, "বাবুল আক্তার তাকে মিতুকে খুন করতে বাধ্য করেছেন। ফোন নম্বরটি আমাকে দেয়নি মুছা।"
মুছাকে জীবিত না পেলেও অন্তত তার লাশটি ফেরত চেয়ে আদালতের কাছে আকুতি জানান পান্না। মিতু হত্যায় মুছা জড়িত থাকলে তার ফাঁসি হলেও তার কোনো আপত্তি নেই বলে জানান পান্না। স্বামী মুছাকে গুম করা হয়েছে বলেও আদালতে দাবি করেন পান্না।
মিতু হত্যা মামলায় পান্না ছাড়াও সরোয়ার আলম ও মোখলেসুর রহমান ইরাদ নামে আরও দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা উভয়েই কক্সবাজারে গায়েত্রী (বাবুলের কথিত প্রেমিকা) যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেই ফ্ল্যাটের দারোয়ান ছিলেন। এই দুজনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার ফের তাদের জেরা অনুষ্ঠিত হবে।
সাক্ষ্য ও জেরায় পান্না জানান, পিবিআই কর্মকর্তা তৎকালীন পরিদর্শক মহিউদ্দিন সেলিম ও পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন নগরের কাঠগড় এলাকা থেকে তার স্বামী মুছাকে আটক করে নিয়ে যান। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন। চট্টগ্রাম মহানগর পিপি আবদুর রশিদ বলেন, বাবুল আক্তারের নির্দেশেই সোর্স মুছা মিতুকে খুন করেছেন। পান্না সাক্ষ্যে তা প্রমাণ করেছেন।
বাবুল আক্তারের আইনজীবীর জেরায় পান্না বলেন, মুছা নিখোঁজ হওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়েন। চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙ্গুনিয়ায় মুছার গ্রামের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে তিনি চলে যান। তবে পিবিআইর আর্থিক সহযোগিতা এবং ভাশুর সাকুকে মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার শর্তে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন পান্না।
বাবুলের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরীর দাবি, মুছা নিখোঁজ হওয়াই স্ত্রী পান্নার আর্থিক সংকটের সুযোগ নিয়ে পান্নাকে বাবুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সাক্ষ্য ও জেরায় পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছেন পান্না।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে মিতুকে হত্যা করা হয়।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :