কক্সবাজার: মৌসুমি বায়ুর কারণে সাগর উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলো। ভাঙন দেখা দিয়েছে সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে। ১০-১২টি স্থান ভেঙে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়কও। ভাঙন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরুর কথা বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দেওয়া হয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। সাগর উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পূর্ণিমার জোয়ার। ফলে হু হু করে বাড়ছে জোয়ারের পানি।
আজ শনিবার দুপুরের জোয়ারে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার ১৭টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ করে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরং এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করেছে।
সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টসহ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক। আজ দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক ঢেউ এসে পড়ছে সৈকতে। ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে যাচ্ছে ঝাউগাছ, তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ। তছনছ হচ্ছে বালিয়াড়ির রাস্তা ও বিভিন্ন স্থাপনা। সমুদ্রের এমন বিরূপ আচরণ দেখে অবাক পর্যটকরা।
ঢাকার গুলশান থেকে আসা পর্যটক মহসিনুল কবির বলেন, ‘অনেক বছর পর দেখছি কক্সবাজার সৈকতেও ভাঙছে। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর না।’
রাজশাহীর বাগমারা থেকে আসা পর্যটক নাসিমা ইসলাম বলেন, ‘সাগরে পানি বেড়ে যাওয়ায় ভয় পাওয়ার পাশাপাশি উপভোগও করছি।’
সরেজমিনে এসে আজ দুপুরে কক্সবাজার পা্উবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজীর সাইফ আহমেদ জানান, পূর্ণিমার ভরা কটালের পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলসহ সমুদ্র সৈকতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, কুতুবদিয়া মহেশখালীর বেশকিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। ওই সব এলাকায় দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। ভাঙন প্রতিরোধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পাউবো। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন এলাকায় প্রাথমিকভাবে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বেশকিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে সড়কের বিভিন্ন অংশ। যেহেতু সড়কটি সেনাবাহিনী নির্মাণ করেছে, তাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘পরিবেশ প্রতিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে মেরিন ড্রাইভের কাজ করতে হবে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে মেরিন ড্রাইভ রক্ষা করবে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান জানান, ‘পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে মেরিন ড্রাইভ সমুদ্র সৈকত ও বেড়িবাঁধ ভাঙনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। আশাকরি এ ব্যাপারে খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
সোনালীনিউজ/এম
আপনার মতামত লিখুন :