কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর প্রভাবে কক্সবাজারে থেমে থেমে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। আর উত্তাল সেই সাগরতীরে পর্যটকের আনাগোনা দেখা গেছে। যার জন্য পর্যটকদের সাগরে না নামতে মাইকিংও করা হচ্ছে। কিন্তু তা মানছে না অনেক পর্যটক।
ঘূর্ণিঝড় আমুনের প্রভাবে সোমবার সকাল থেকে কক্সবাজার ও উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মঙ্গলবার ও বুধবার কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলসহ সারা দেশে ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৯ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের গিয়ে দেখা গেছে সাগর স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে একটু উত্তাল রয়েছে। আর সেই উত্তাল সাগর দেখতে কক্সবাজারে অবস্থানরত পর্যটকের উপস্থিতি দেখা মিলেছে। এসব পর্যটকরা সাগরে নামে গোসল করছেন। যা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে চালানো হচ্ছে প্রচারণা। বলা হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে সাগরে নামে নিরাপদ না, তাদের উঠে আসতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিন্তু তাও মানছে না পর্যটকরা।
সৈকতের নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের কর্মী বেলাল হোসেন জানান, পর্যটকরা কোন অনুরোধ মানছেন না। বার বার অনুরোধ করার পরও সাগরে নেমে গোসল করছেন অনেকেই। বেশি অনুরোধ করলে উল্টো রেগে গিয়ে বকাঝকা করছেন। যদিও লাইফগার্ড কর্মীরা সর্তকর্তার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রস্তুতিমুলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এই সভাটি মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জুম এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে এ সভায় জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা সংযুক্ত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় হামুন এর প্রস্তুতি সভায় পূর্ণিমাকালীন সময়ে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস থেকে নিচু এলাকার জানমাল রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হয়। সেই সাথে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে নীচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে।
সভায় বলা হয়, জেলার ৯ টি উপজেলায় ৫৭৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। উপকূলীয় কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ সহ সেন্টমার্টিন দ্বীপে মাইকিং করে নিচু এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সভায় জানানো হয়েছে, প্রশাসনের নিদের্শনা না মেনে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত আড়াই শতাধিক পর্যটকদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন সহ কক্সবাজারে অবস্থানরত পর্যটকরা যেন সাগরে গোসল করতে না নামেন তার জন্য প্রচারণা চালানো পাশাপাশি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পর্যটকদের সহযোগিতাও চাওয়া হয়।
অপরদিকে, এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সৈকতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিমা বিসর্জন। যে প্রতিমা বিসর্জনকে ঘীরে সৈকতে বিকালে সমাগম হবে ৪ লাখের বেশি মানুষের। এই উত্তাল পরিস্থিতিতে সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সর্তকর্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :