গাজীপুর: গাজীপুরের কালিয়াকৈর শিল্প এলাকায় সরকার ঘোষিত নতুন মজুরিতে বেতন না পাওয়ায়। এ শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানাসহ স্পিনিংমিল কারখানার শ্রমিকরা রাজপথে ও স্ব-স্ব কারখানার গেটের সামনে বেশ কয়েক দিন যাবত বিক্ষোভ আন্দোলন করছে। এতে করে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পুরো গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ফের এক ধরনের শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বিপাকে পড়েছেন এ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন মিলকারখানার মালিকরা।
জানাগেছে, দেশের বৃহত্তর গাজীপুর শিল্পাঞ্চলসহ সারা দেশেই সকল পোশাক শিল্প এলাকায় কর্মরত হাজার-হাজার পোশাক শ্রমিকরা অব্যাহত ভাবে বেতন বাড়ানোর দাবিতে সংশ্লিষ্ট শিল্পাঞ্চলে বৃহত্তর তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলায়। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। গেল ২০ ডিসেম্বর পোশাক শ্রমিক ও কর্মচারীদের চারটি গ্রেডে মজুরি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
গেজেট অনুযায়ী তথ্য সূত্রে জানাগেছে, গ্রেড-১ এ ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল মজুরিতে শ্রমিকদের মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। গ্রেড-২ এ ৭ হাজার ৮০০ টাকা মূল মজুরিতে মোট বেতন হবে ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। গ্রেড-৩ এ ৭ হাজার ৪০০ মূল মজুরিতে মোট বেতন ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা; গ্রেড-৪ এ ৭ হাজার ৫০ টাকা মূল মজুরিতে মোট বেতন ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২৫ টাকা। সর্বনিম্ন গ্রেড-৫ এ ৬ হাজার ৭০০ টাকা মূল মজুরিতে একজন শ্রমিকের মোট বেতন হবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
ইতিমধ্যে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানার কর্তৃপক্ষ। নতুন মজুরি অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের মাসিক বেতন পরিশোধ করেছেন। তবে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে যেসব কারখানার মালিকরা এখনো তাদের কারখানার শ্রমিকদেরকে সরকার ঘোষিত নতুন মজুরিতে বেতন প্রদান করেননি। এ ছাড়াও আরও একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে গাজীপুরে যেসব স্পিনিং মিলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কারখানার কর্তৃপক্ষ ও সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়।
সরেজমিনে, কালিয়াকৈর শিল্পাঞ্চলের স্পিনিং মিলকারখানা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা ৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ গুলো হলো, প্রথম দাবি গার্মেন্টস কর্মীদের মতো আমাদের জন্যও নুন্যতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি আমরা কোন ছুটি ছাটা পায়না। আমাদের জন্য সাপ্তাহিক নিয়মিত ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয় দাবি হচ্ছে, আমাদেরকে বারৎসরিক ছুটির টাকা প্রদান করতে হবে এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি ব্যবস্থা করতে হবে।
গার্মেন্টস কারখানার মতো স্পিনিংমিল কারখানার শ্রমিকদেরকেও নুন্যতম মজুরি প্রদানের দাবিতে কালিয়াকৈরের শাহাবুদ্দিন স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, হানিফ স্পিনিং, করতোয়া স্পিনিং, জমজম স্পিনিংসহ অন্যান্য স্পিনিং ও নিটিং কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা - টাঙ্গাইল মহাসড়কে গেল বুধ, বৃহস্পতিবার থেকে টানা শনিবার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সময়ে সোনালী নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যমুনা স্পিনিং মিলকারখানার নারী শ্রমিক কহিনুর বলেন, আমরা এতটা নির্যাতিত যে, আমাদের কেউ দেখার সময় নেই। গার্মেন্টসের বেতন বাড়াইছে সরকার অথচ স্পিনিং মিলকারখানার মালিকেরা ২০০/৩০০ টাকা করে আমাদের বেতন বাড়িয়েছে। তাইলে আমরা কি ভাবে চলমু। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘর বাড়াই দিতে হয়। ৪ হাজার টাকা। তাইলে আট হাজার টাকা বেতন দিয়ে কি ভাবে চলমু। একই কারখানার আরেক শ্রমিক নুরজাহান বলেন, আমারা বেতন বৃদ্ধির দাবি কর কোন আন্দোলন করলেই আমাদেরকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য মালিকের লোকেরা হুমকি দামকি দেয়। আমরা কার কাছে আমাদের দাবি জানামু ভাই।
যমুনা স্পিনিং ডিভিশনের শ্রমিক আলাল সরকার বলেন, ৭০০০ টাকা বেতনে সংসার চলে না। কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। মালিকপক্ষ সরকারের নির্দেশনা মানবে না, জানিয়ে দিয়েছে। আন্দোলন করলে কারখানা বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ রকম হলে আমরা কি ভাবে চাকরি করে জীবন যাপন করমু। আমরা সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পরিদর্শক (কালিয়াকৈর) নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কালিয়াকৈরে বেশ কয়েকটি স্পিনিং মিলকারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মহাসড়কে আন্দোলন করেছে। এর মধ্যে যমুনা স্পিনিং ডিভিশন এবং মালেক স্পিনিং মিলের শ্রমিকরাই বেশি। তবে আমরা তাদের কে বুঝিয়ে কারখানায় কাজ করতে বলেছি। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় এটা কারখানার কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :