গাজীপুর: গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পোশাক শ্রমিকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার সারা দেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য নুন্যতম মজুরি ঘোষণা করেছে প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হতে চলছে। তবে ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পোশাক শিল্পের অপর অংশ টেক্সটাইল শ্রমিকদের জন্য নুন্যতম মজুরি ঘোষণা না আসায় এক ধরনের হতাশা ও শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে দেশের শিল্পাঞ্চল গুলোতে।
শুধু তাই নয় পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির পর টেক্সটাইল খাতেও একই দাবিতে গাজীপুর, সাভারের বিভিন্ন শ্রমিক কারখানায় অসন্তোষের ঘটনাও ঘটেছে।
এমন বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকার দেশের টেক্সটাইল শ্রমিকদের জন্য অতিশীঘ্রই নুন্যতম মজুরি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মনসুর আহমেদ।
জানাগেছে, সরকারের সর্বশেষ পোশাক শ্রমিকদের জন্য নুন্যতম মজুরি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গ্রেড পাঁচ বা এন্ট্রি লেভেলের একজন কর্মী ন্যূনতম মাসিক বেতন হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন। এর মধ্যে মূল বেতন ছয় হাজার ৭০০ টাকা, বাড়িভাড়া তিন হাজার ৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, পরিবহন ভাতা ৪৫০ টাকা ও খাদ্য ভাতা এক হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ দিকে টেক্সটাইল শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, টেক্সটাইল খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্তের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সরকার এ খাতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের জন্য চলতি মাসের যে কোন সময়ের মধ্যে নুন্যতম মজুরি ঘোষণা করার চিন্তা ভাবনা করছে।
মিনিমাম ওয়েজ বোর্ডসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে টেক্সটাইল শ্রমিক পক্ষের দাবি ২৫ হাজার ৬০০ টাকার বিপরীতে এ খাতের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। আর এটা বাস্তবায়ন হলে পোশাক খাতের শ্রমিকদের চেয়ে আড়াই হাজার টাকা কম বেতন পাবেন টেক্সটাইল শ্রমিকরা।
টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করে বলছেন, সরকার পোশাক শিল্প কারখানার অপর অংশ টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করতে মালিক পক্ষের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। সরকার আর মালিক পক্ষ এক হয়ে গেলে। তখন শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
টেক্সটাইল খাতে মজুরি নির্ধারণ-সংক্রান্ত বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি মো. শাহজাহান সাজু বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে দাবির সঙ্গে সব সময় মালিক পক্ষ বিরোধিতা করেন। তারা বাস্তবতা বুঝতে বা মেনে নিতে চান না। অথচ শ্রমিকরা ভাল থাকলে শিল্প কারখানার গতি বাড়ে। তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল ২৫ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু বোর্ডের সব পক্ষ ১০ হাজার টাকায় সম্মত হয়েছে। সরকার সর্বশেষ এটা ঘোষণা করলেও আমরা দাবি আদায়ে কাজ করে যাব।
এ দিকে টেক্সটাইল উদ্যোক্তারা ও কারখানার মালিকানা জানিয়েছেন পোশাক কারখানার চেয়ে টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকদের কাজ অনেক হালকা। তাদের কাজের উপর তেমন পেশার পড়েনা। তারা সুযোগ সুবিধাও ভাল পেয়ে থাকেন। এর পরেও পোশাক খাতে যেখানে ৫৬ শতাংশ মজুরি বাড়ানো হয়েছে, সেখানে টেক্সটাইল খাতে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে ৭৫ শতাংশ। এ বিষয়টি শ্রমিকদের বুঝতে হবে।
জানা যায়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংসহ সংগঠনটির সদস্যভুক্ত কারখানা ১ হাজার ৭৮০টি। এছাড়াও সংগঠনের বাহিরেও কিছু কারখানা রয়েছে।
এর মধ্যে সদস্য ভুক্ত কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এছাড়া সদস্যবহির্ভূত কারখানা হিসাব করলে শ্রমিক সংখ্যা ৮ লাখেরও অধিক হবে।
মজুরি বোর্ডের সূত্রে সর্বশেষ শেষ তথ্যে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত টেক্সটাইল খাতে ১০টি গ্রেডে মজুরি নির্ধারণ হচ্ছে, যা আগেও একই ছিল। সর্বশেষ বা ১০ম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরির এর এলাকাভিত্তিক তিনটি ধাপ হচ্ছে। বিভাগীয় শহরে ১০ হাজার ৭০০ টাকা, জেলা শহরে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকায় হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ বা ১ম গ্রেডে মজুরি হতে যাচ্ছে ১৫ হাজার ২৭৩ টাকা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার বলেন, টেক্সটাইল মিলস কারখানার শ্রমিকদের জন্য সরকার ও মালিক পক্ষের এই প্রস্তাবিত নুন্যতম মজুরি কোন ভাবেই সময় উপযোগী নয়। এটা বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকদের দাবির ধারে কাছেও যাওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই মজুরিতে শ্রমিকদের পক্ষে জীবন নির্বাহ করা অসম্ভব।
এ ব্যাপারে টেক্সটাইল শ্রমিকদের জন্য গঠিত মিনিমাম ওয়েজ বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ বলেন, কারখানা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সম্মতির ভিত্তিতেই সর্বনিম্ন এ মজুরি ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যেটা নুন্যতম মজুরি নির্ধারণ ড্রাফট চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরিই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
এমএস/এসআই