ঢাকা: সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফাইটার মো. সালেহ আহমদের অপহরণের খবরে কান্না থামছে না তার তিন মেয়ের।
সালেহ আহমদ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের মৃত সাখায়াত উল্যার ছেলে। তিনি চারভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড়। পরিবারে স্ত্রী তানিয়া আক্তারসহ তার তিন কন্যা সন্তান রয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সালেহ আহমদের গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায় অপহরণের খবরে দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনরা এসেছেন। ঘরে একমাত্র বোন জান্নাতুল মাওয়া রানী ও স্ত্রী তানিয়া আক্তারসহ তার সন্তানেরা অঝরে কাঁদছেন।
জান্নাতুল মাওয়া রানী বলেন, সোমালিয়ায় জাহাজ অপহরণের ঘটনায় আমি একজন ভুক্তভোগীর বোন। আমার ভাই সালেহ আহমদসহ যারা জিম্মি আছে তাদের সকলকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে সালেহ আহমদ অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে দুই মিনিট কথা বলেন। এ সময় সালেহ জানান, জলদস্যুরা তাদের জাহাজ কিডন্যাপ করে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই যেন তার জন্য দোয়া করি। এরপর আর কোনো খোঁজ পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীরতো কোনো দোষ নেই। জাহাজের মালিক এবং সরকার যেন আমার স্বামীসহ আটক ২৩ বাংলাদেশিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় সেই দাবি জানাচ্ছি। বাবার বিপদের খবর শুনে আমার তিন মেয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমার স্বামীর কিছু হলে আমি কী করবো বলেই বিলাপ শুরু করেন তিনি।
এদিকে সোমালীয় দস্যুদের হাতে আটক জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে ফাইটার সালেহ আহমদসহ নোয়াখালীর দুইজন রয়েছেন। আরেকজন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামের আনোয়ারুল হক রাজু। তিনি বাংলাদেশি পতাকাবাহী ওই জাহাজের এবি (অ্যাবল সিম্যান) হিসেবে কর্মরত।
রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, অপহরণের খবর শোনার পর থেকে আমাদের পরিবারে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার মা ক্ষণে ক্ষণে ছেলের জন্য মূর্ছা যাচ্ছে। আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতা কামনা করছি।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অপহরণের শিকার বাংলাদেশি জাহাজের ২৩ নাবিকের দুইজন নোয়াখালীর বাসিন্দা। আমরা তাদের পরিবারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ান জলদস্যুরা। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। জাহাজটিতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। পণ্যবাহী জাহাজটি ভারত মহাসাগর হয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই। এরমধ্যে দস্যুদের কবলে পড়ে। বুধবার (১৩ মার্চ) জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
এআর