কলাপাড়া: জেলিফিশের আক্রমণ থেকে বাঁচতে গভীর সমুদ্র থেকে জালপালা গুছিয়ে নিয়ে আসছে জেলের, বঙ্গোপসাগরের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে অসংখ্য মৃত জেলিফিশ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে আছে এ মাছগুলো। গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য মরা জেলিফিশ বালুতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসব মাছের মধ্যে কোনোটা আকারে ছোট, কোনোটা বড়। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। তবে এগুলো কি কারণে মারা যাচ্ছে এর সঠিক কারণ কেউ বলতে পারছেন না। জেলেরা বলছে সমুদ্রে এত পরিমান জেলিফিশ বেড়েছে যে আমরা সাগরে জাল দিতে পারছি না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ ৩২ কিলোমিটার সৈকতের একাধিক পয়েন্টে জোয়ারের পানির সঙ্গে অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে এসে আটকা পড়েছে। সৈকতে এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে গোটা সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় জেলেদের কাছে জেলিফিশ সাগরের ‘লোনা’ হিসেবে পরিচিত। গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে এসব জেলিফিশ আটকা পড়ে মারা যেতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে জোয়ারের পানির সাথে জেলিফিশ গুলো ওঠা নামা করে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে এক পর্যটক বলেন, জেলিফিশের নাম শুনেছি কিন্তু কখনো দেখিনি, এই প্রথম দেখছি। এ গুলো দ্রুত সরিয়ে না নিলে পঁচে সৈকতের পরিবেশ দূষিত হবে। তবে জেলিফিশ গুলো দেখতে খুবই সুন্দর।
স্থানীয় জেলে মো. হারিচ জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের জালে বিপুল পরিমাণ জেলিফিশ ধরা পড়েছিল। তারা জাল থেকে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে।শুধু তারাই নয় বর্তমানে জেলিফিশ সমুদ্রে এতটাই বেড়েছে যে, জেলেরা বাধ্য হয়ে সমুদ্র থেকে জাল উঠিয়ে নিয়ে আসছে।
এদিকে ফিশারিজ বিভাগের গবেষকদের মতে, জেলিফিশ গভীর সমুদ্রের মাছ। সমুদ্রের পানিতে কোনো বিপর্যয় বা পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসাটাই শঙ্কা। জেলিফিশ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি। একটি প্রজাতি মিঠাপানিতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত পানির ওপর ভাগে ভাসমান অবস্থায় থাকে। গভীর সমুদ্রে জেলিফিশের হরেক রকম জাত রয়েছে। এদের বিশেষ ধরণের দংশন কোষ আছে। যাকে ইরেজিতে- jellyfish (জেলিফিশ) বলে। বহির্বিশ্বে এটার বাজারমূল্য অনেক বেশি। উন্নতমানের হোটেলে উৎকৃষ্টমানের খাবার হিসেবে বিক্রি হয় এই মাছ। এগুলো স্পর্শ করলে শরীর চুলকায়, এমনকি ঘা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ কোষের কামড়ে মানুষ মারাও যেতে পারে। কুয়াকাটা সৈকতে আটকে মরে যাওয়া জেলিফিশগুলো পঁচে গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই কাঠ বা লোহা দিয়ে তুলে এ মাছগুলো বালুতে পুঁতে ফেলা উচিত।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত কয়েক দিন থেকে এসব জেলিফিশ উপকূলের কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়েছে। পরে জেলেরা মাছগুলো ফেলে দেয়ায় মরা মাছ কুয়াকাটা সৈকতের বেলাভূমিতে আসতে শুরু করেছে। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে সবকিছু ঠিক হয়যাবে। জেলিফিশ সমুদ্রে বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্র থেকে বর্তমানে জেলেরা জাল উঠিয়ে রাখতেছে।
এমএস