ঢাকা: আর মাত্র কয়েক দিনই পরই সারাবিশ্বের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরাও যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা, আনন্দ ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে পালন করবেন পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে দেশের প্রধান দুই মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে ঈদের যাত্রী বহনকারী গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাসের চাপের বেড়েছে। পাশাপাশি এই দুই মহাসড়কে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ বেশি।
তবে এই দুই মহাসড়ক ব্যবহারকারী বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ঈদুল ফিতরের ছুটি হবে আরও তিন থেকে ৪ দিন পর। এর আগেই গাজীপুর হয়ে যাতায়াত কারী দুরপাল্লার বাস ও গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে।
জানা যায়, গাজীপুরের দুই মহাসড়ক দিয়ে দেশের প্রায় ৪০ জেলার বাসিন্দারা ঈদের ছুটির সময় গ্রামের বাড়িতে ফিরেন। গেল কয়েক বছরের তুলনায় গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের ৭টি উড়াল সেতু খুলে দেওয়ায় এবার যানজটের স্বস্তি মিললে বলে আশা করছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে এর পাশাপাশি তারা আশঙ্কা করছেন এখুনি যে ভাবে গণপরিবহন গুলো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। তাতে পুরো গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ঈদের ছুটি ঘোষণা হলে এর চেয়েও বেশি বাড়তি ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।
সরেজমিনে, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রীমোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণত ঈদের ৫-৬ দিন আগে মানুষজন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটতে শুরু করেন। তবে এবার ৯-১০ দিন আগেই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শ্রমজীবীরা ঘরমুখো হয়ে উঠেছে। এতে করে সময়ের আগেই মহাসড়কে চাপ বেড়েছে যাত্রী ও বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের। একই সঙ্গে দেখা গেছে,ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর অংশে অনেক পরিবহন মালিকেরা পুরোনো দিনের ফিটনেসবিহী এবং লক্কর -ঝক্কর গাড়ি গুলো দুয়ে মুছে চকচকে-জকজগে করে মহাসড়কে নামিয়েছে। যাতে করে যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদের এই সময়টাতে ভাল ভাড়া আদায় করতে পারেন।
উত্তরবঙ্গ অভিমুখী যাওয়া হানিফ পরিবহনের যাত্রী শফিকুর রহমান বলেন, গাজীপুরের প্রতি বছরই যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবার তাই একটু আগে ভাগেই বাড়ি যাচ্ছেন। তবে ঈদের এক সপ্তাহের আগেই দূরপাল্লা বাসের ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ঈদের আগ মহূর্তে এটা আরও বাড়বে মনে হচ্ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজীব পরিবহনের যাত্রী তানিয়া রহমান বলেন, তিনি গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মাত্র ৩৫০/৪০০ টাকায় জামালপুর যেতেন। ঈদের এখনো এক সপ্তাহের অধিক সময় বাকী এখনি ৫০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। মনে হচ্ছে আর ৩/৪ দিন পরে ভাড়া আরও বাড়তি চাবেন পরিবহন কনট্রাকটরেরা।
অপর দিকে সৌখিন পরিবহনের হেলপার মাসুদ রানা বলেন, তাদের গাড়ির ভাড়া কখনো বাড়ানো হয়না। তবে ঈদের সময় কিছু বাড়তি ভাড়া ধরা হয়। এটা ঈদের বোনাস হিসেবে নেওয়া হয়।
জেলার পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলোমেলো গাড়ি পার্কিং, ওভারটেকিং ও ট্র্যাফিক আইন না মানলে কিছু পয়েন্টে যানজটের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এছাড়া এবার গাজীপুর অংশে মহাসড়ক গুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তির আশংঙ্কা নেই।
শুধু তাই নয় কোন ভাবেই যাতে ঘরমুখো মানুষের যানজটের ভোগান্তি পোহাতে না হয়। এজন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি ঈদযাত্রায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে জেলা প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন বলেন, গাজীপুরে প্রতিদিন মহাসড়কে যাত্রী বাড়তেই থাকবে। এ কথা ভেবেই যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মহাসড়কে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও যেসব স্থানে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এসব এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছি, সেসব যায়গায় সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আমি আশাবাদী গেল বছরের তুলনায় এবার যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।
বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট যানজটের কিছুটা শঙ্কা থাকলেও সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ায় গাজীপুরের শিল্প কারখানার শ্রমিকরা সহজে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, এবার মহাসড়কের ফ্লাইওভার গুলো খুলেছে সড়ক বিভাগ। তাই যানজটের ভোগান্তি একেবারেই কম হবে বলে আশাবাদী।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এবার ঈদে যানজটের শঙ্কা নেই। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং নিরাপত্তায় নানা পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া কোথাও যাতে ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। এজন্যও নেওয়া হয়েছে মনিটরিং ব্যবস্থা।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে,
ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে প্রায় ৪০ জেলার লোকজন ঈদের সময় বাড়ি ফেরেন। এতে করে এই মহাসড়ক স্বাভাবিক ভাবেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে যাতে কোন যানজট সৃষ্টি না হয়। এজন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। ঈদযাত্রায় এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যেতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এমএস/এসআই