চুয়াডাঙ্গা: অবশেষে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন মাস পর দেশে ফিরেছে সৌদি প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার রিপন হোসেনের মরদেহ।
রিপন জেলার জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশাদুল হকের ছেলে।
জীবননগরের উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামের ইউপি সদস্য (মেম্বার) আরমান আলী জানান, শুক্রবার ভোর ৪ টার দিকে রিপনের মরদেহ গ্রামে পৌছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে সকাল ৮ টায় জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় রিয়াদ থেকে ছেড়ে আসা শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ট্রানজিট (রিয়াদ-কলম্বো-ঢাকা) কার্গো ফ্লাইটে ঢাকা শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ পৌছায়। বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম শেষে রিপনের মরদেহের কফিনটি বৃহস্পতিবার রাতে তার পিতা আশাদুল হকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে সৌদি প্রবাসী রিপন হোসেন আত্মহত্যা করে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ৫ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান রিপন। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল কাসিম ব্রুদা শহরের একটি কৃষি খামারে কাজ করতেন তিনি।
রিপন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার জিন্নানগর গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মোবাইল ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে প্রেমিকা মেয়ের সাথে ঝগড়া ও বাগবিতণ্ডা হয় তার। এসময় রিপন (২৮ডিসেম্বর) প্রেমিকা ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। রিপনের বন্ধুরা কাজ শেষে ঘরে ফিরে রিপনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় লাশের পাশে থাকা মোবাইল ফোনে তারা একটি মেয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার প্রমাণও পায়। কিন্তু রিপনের লিগ্যাল ডকুমেন্টস না থাকায় সৌদির সরকারি দাফতরিক কাজে মরদেহ প্রেরণের জটিলতা দেখে দেয়।
সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক আরটিভি প্রতিনিধি বশির উদ্দীনের মাধ্যমে জানা যায়, প্রবাসী রিপনের মরদেহ দেশে প্রেরণে কোন সরকারি অর্থায়ন নেই। দেশটির ভিসা নীতি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে চুক্তিবিহীন সেচ্ছায় কাজ করে বেড়াতেন তিনি। এই কারণে তার মৃত্যুতে কফিল (কোম্পানী) কোন প্রকার খরচ বহনে বাধ্য নন। তার লিগ্যাল ডকুমেন্টস না থাকায় তার কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানি বহন করবে না বলেও জানান তার কোম্পানি। নিজেদের অর্থায়নে মরদেহ নিজ দেশ ফেরত নিয়ে আসতে হবে।
এমতাবস্থায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ দূতাবাসকে, রিয়াদের প্রথম সচিব শ্রম (স্থানীয়) স্বাক্ষরিত {স্বারক নং- ১৯.০১.৯৬৬১.৭০০.৩৩.০০১.১৭ (অংশ-০১)-৪৬২} এক চিঠিতে স্থানীয় ভাবে দাফনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জারি করা হয়। মৃতদেহর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যে কোন সময় দাফন করলে দূতাবাসের কোন করনীয় থাকবে না।
পরবর্তীতে উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের কৃতি সন্তান সৌদি প্রবাসী রায়হানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে, সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক আরটিভি প্রতিনিধি বশির উদ্দীন এবং ইন্ডিয়ান ভিত্তিক প্রবাসী কল্যান সংস্থার সহযোগিতায় প্রায় ১১হাজার রিয়াল অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে তার মরদেহ পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
রিপনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে তার পরিবার, কোন জনপ্রতিনিধি বা কোন জনশক্তি অফিস নূন্যতম সহযোগিতা করেনি বলেও জানান তারা।
অবশেষে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন মাস ৭দিন পর দেশে ফেরে জীবননগরের সেনেরহুদা গ্রামের সৌদি প্রবাসী যুবক রিপন হোসেনের মরদেহ।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :