• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আনন্দে মেতেছে জনতা, ব্যতিক্রম আয়োজনে ‘ঈদ উৎসব’


জনাব আলী, রাজশাহী এপ্রিল ১৩, ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম
আনন্দে মেতেছে জনতা, ব্যতিক্রম আয়োজনে ‘ঈদ উৎসব’

রাজশাহী: দশ মিটার দূরের মাটির হাড়ি ভাঙতে হবে বাশের বাড়ি দিয়ে সাথে থাকবে চোখ বাঁধা। বাইসাইকেল চালাতে হবে ধীর গতিতে, যে সবার পরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে সেই হবে বিজয়ী। বিবাহিত বনাম অবিবাহিত পুরুষদের দুই দলের দশজন করে বিভক্ত হয়ে রশি টান।  যে দল টেনে দাগ পার করতে পারবে সে দল হবে বিজয়ী। ছিলো পনের ফিট উচ্চতা সমান সরিষা তেল দেওয়া কলাগাছে উঠতে হবে নিচ থেকে। ছিলো মহিলাদের বালিশ খেলা, সুই-সুতা খেলা। এইভাবেই ঈদুল ফিতরের দিন ব্যাতিক্রমী উৎসবে মেতে উঠে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাসিন্দারা। পৌরসভার পিল্লাপাড়া ভোকেশনাল মাঠে খেলা পরিচালন কমেটির আয়োজনে ১৫টি গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় খেলায় অংশ নেয় প্রায় ২০০ জন নারী-পুরুষ। 

জানা যায় প্রতিবছরেই এইরকম আয়োজন করে থাকে আয়োজন কমেটিরা। কমেটির সদস্য রাব্বি হোসেনের কাছে আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছরই আমাদের এই মাঠে এই আয়োজন করে থাকি আমরা। ঈদের দিনে আমাদের এই মাঠে খেলা দেখতে আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েক হাজার দর্শক আসে। যা আমাদের সবাইকে আনন্দ দেয়। আমরা প্রতিবার ঈদে এইরকম গ্রামীণ খেলার আয়োজন করে থাকি যা আমাদের কাছে এখন ঐতিহ্যবাহী খেলায় রুপ নিয়েছে। 

খেলা দেখতে আসা মথুরা গ্রামের মামুন আলী তার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করে বলেন, আমরা ঈদের দিন বাইরে কোথাও ঘুরতে না গিয়ে আমরা এই ভোকেশনাল মাঠে আসি। এইসব গ্রামীণ খেলা জেলার আর কোথাও হয় কি না আমার জানা নাই। খেলা গুলো দেখতে ভালোই লাগে। পরিবারের সবাই একসাথে বসে এগুলো খেলা উপভোগ করা যায়। এই খেলাগুলো আয়োজন করার জন্য আয়োজন কমেটিদের ধন্যবাদ জানাই। 

খেলায় অংশ নেয় ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধ হাঠারী । তার কাছে খেলায় অংশ নেওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনে বেছেঁ থাকতে হলে আনন্দ বিনোদনের প্রয়োজনে আছে। আমরা প্রতিবছর ঈদের দিন সব দুঃখ কষ্ট ও নাগরিক জীবনের অবসাদ পিছনে ফেলে আমরা এই আনন্দ আয়োজনে অংশ নেই।  আমি অংশ নিয়েছিলাম বয়স্কদের ফুটবল খেলার। অবশ্য আমরা দুই এক গোলে প্রতিপক্ষ দলের কাছে হেরে যাই। তবে খেলাতে যাই হোক না কেন আমরা অংশ নিয়েছিলাম আর দর্শকরা আনন্দ পেয়েছে এতেই আমরা খুশি। খেলায় অংশগ্রহণ করে করে ৫ বছর বয়সের শিশু থেকে ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ। এখন আমাদের কাছে ঈদের দিনের এই খেলা সার্বজনীন হয়ে গেছে। 

১৫ টি খেলায় অংশ নেওয়া সকলে অংশ পুরস্কারের ব্যবস্থা করে আয়োজন কমেটি। খেলায় পরিচালনার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজিজুল হক। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খেলায় যত জন খেলোয়াড় অংশ নিয়েছিলো তাদের সবার জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করেছে আয়োজন কমেটি। আসলে এখানে কেউ পুরস্কারের জন্য খেলায় অংশ নেয় না । অংশ নেয় আনন্দের জন্য। 

তরুণ প্রজন্মকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে খেলাধূলার কোন বিকল্প নাই উল্লেখ করে রাজশাহী মহানগীরর আলহাজ¦ সুজাউদ্দৌলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল বলেন, ঈদের দিন নামাজ শেষ করে এসে আমরা সবাই মোবাইল, ফেসবুকের প্রতি আসক্ত হয়ে যাই। বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মোবাইল ছাড়া কিছুই বুঝে না। তাই আমি মনে করি তরুণ প্রজন্মকে মোবাইল থেকে দুরে রাখতে খেলাধূলার কোন বিকল্প নাই । আজকে দেখেন এই মাঠে কত মানুষ এসেছে। কেউ খেলতে আবার কেউ এসেছে খেলায় অংশ নিতে। ঈদের এই ধরণের চমৎকার আয়োজন ঈদের আনন্দ কে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা এই আয়োজন করেছে তাদের কে অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাধূবাদ জানাই।

খেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পরিদর্শনে এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আসেন পবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী । তিনি তার বক্তব্যে বলেন, একটি শিক্ষিত জাতি গড়তে যেমন পড়াশোনার প্রয়োজন। তেমনি ভাবে একটি সুস্থ জাতি গঠনে তরুণ প্রজন্মের খেলাধূলার কোন বিকল্প নেই। এই ধরণের গ্রামীণ খেলার ঈদের দিন রাজশাহী জেলার আর কোথাও বোধহয় হয় না। কিন্ত এই গ্রামের আয়োজনে প্রতিবছর ঈদের দিন খেলার আয়োজন করা হয়। তাই যারা এত পরিশ্রম করে খেলার আয়োজন করেছে তাদের কে ধন্যবাদ জানাই। 

খেলার সার্বিক পৃষ্টপোষকতায় এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্টানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ। তার কাছে খেলার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুস্থ ও মাদক মুক্ত আগামী প্রজন্ম গড়তে শিশুদের খেলাধূলার আয়োজন করতে হবে অভিবাবক এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। আমি আমার পৌরসভা এলাকায় যেখানেই খেলাধূলা হোক না কেন সময় পেলে আমি যাই। খেলার আয়োজন করতে যা যা লাগে আমি তা দেই। আজকে ঈদের দিন পিল্লাপাড়ায় যে গ্রামীণ খেলাধূলা হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই এগুলো খেলা সম্পর্কে জানে না। খেলাধূলার বিস্তার বাড়াতে সকলের সহযোগিতায় প্রয়োজন। তাই যারা এই খেলার আয়োজন করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি সামনে বছর এই ধরণের খেলা আরো বড় পরিসরে হবে। 

এমএস

Wordbridge School
Link copied!