গাজীপুর: দেশের প্রতিটা শহর, নগর ও গ্রাম-গঞ্জে এমন কোন লোক নেই যে, যিনি নিজের ভাগ্য বদলের জন্য একাধিক পেশা বদল করেননি। তবে পেশা বদলের এই পালায় এবার ভিন্ন এক পেশায় কাজ কারে সমাজে বেকার লোকজনদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের শহীদুল ইসলাম শহীদ।
তিনি জেলার কালিয়াকৈর মাছের বাজারে ক্রেতাদের ক্রয়কৃত মাছ হাঁটু মেরে দ্যা দিয়ে মাছ কেটে দৈনিক যে অর্থ উপার্জন করছেন। সেই অর্থ দিয়েই সংসারের দৈনন্দিন খরচের যোগান দিয়ে এর পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্যও বিভিন্ন প্লাটফর্মে টাকা জমাচ্ছেন।
কালিয়াকৈরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাজারে মাছ কেটে উপার্জিত অর্থ দিয়েই শহীদ সংসারের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে এনেছে।পাশাপাশি সন্তানদের পড়া লেখার খরচ যোগানোর অর্থও এ পেশায় কাজ করেই যোগিয়েছেন তিনি। সরেজমিনে, কালিয়াকৈর বাজারে সোনালীনিউজ এর সাথে কথা হয় অদম্য পরিশ্রমি শহীদের।
এ সময়ে শহীদ জানান, বেশি দূর পড়া-লেখা জানেন না তিনি। একটা সময়ে যখন সংসারের অভাব-অনটন ঝেকে বসে ছিলো। তখন তিনি পেশা বদল করে কোন উপায় কূল না পেয়ে এই বাজারে ছোট্ট একটি দ্যা নিয়ে বসে যান মাছ কাটার কাজে। প্রথম দিকে ১ কেজি ওজনের মাছ কাটতেন ৫ টাকায়। সারা দিন ২০০/৩০০ টাকার কাজ করতেন। পরে কেজি প্রতি যখন ১০ টাকা পান তখন দিন শেষে ৪০০/৫০০ টাকা উপার্জন করতেন। এ সময়ে কোন মতে ডাল-ভাত খেয়ে পড়ে জীবন যাপন করতেন।
তিনি বলেন, বাজারে সব কিছু জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন মাছ কেটে পাওয়া যায় প্রতি কেজিতে ২০ টাকা। প্রায় ১০ বছর ধরে এই বাজারে মাছ কাটছেন তিনি। দৈনিক ৭০০/৮০০ টাকা উপার্জন হয়। তবে শুক্রবার বাজারের দিনে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা উপার্জন করছেন তিনি।
জানা যায়, গাজীপুর শিল্প অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কালিয়াকৈর। এ উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা কালিয়াকৈর-টাঙ্গাইল সড়কের দুই পাশে কম করে হলেও ৪ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী মাছ বিক্রি করেন। প্রতি শুক্রবার সড়কের দুই পাশে প্রায় ৫০০ মিটারজুড়ে মাছের বাজার বসে। মাছ বাজারের কারণে ওইদিন ভোর থেকে সড়কটিতে যানজটের ভোগান্তি নিরসনে ভারী যানবাহন চলাচলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
শুক্রবার বাজারের দিনে কালিয়াকৈর ছাড়াও পাশের জেলা টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ থেকে শত-শত ক্রেতা মাছ কিনতে বাজারে ভিড় করেন। বাজারের বৈশিষ্ট্য হলো, ছোট থেকে বড় এবং দেশে প্রচলিত এমন প্রায় সব মাছই পাওয়া যায়। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও পাবনার খাল-বিল থেকেও জেলেরা মাছ নিয়ে এখানে বিক্রি করতে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ওমর আলী বলেন,কালিয়াকৈরের এই মাছের বাজারটি গত ১ যুগ ধরে তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এখনে কম দামে দেশের সকল ধরনের মাছ ক্রয় বিক্রয় হয়। প্রতি দিন ভোর ৫ টায় শুরু হয় এই বাজার চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই পার্শ্ব রাস্তা জুড়েই শুধু মাছের দোকন আর দোকানে সয়লাব হয়ে পড়ে। মনে হয় এ যেনো এক মাছের মেলা বসেছে।
মাছ বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান,তিনি ৩০ বছর ধরে ইলিশ মাছের ব্যবসা করেন।ঢাকার কাওরানবাজার,বাইপাইল আড়ত থেকে মাছ কিনে এনে বিক্রি করেন। তার মতো অনেকেই রাজশাহী, নাটোর,নওগাঁ থেকে রুই, কাতল,মৃগেল মাছ এনে বিক্রি করেন তিনি।
ক্রেতা আবুল হাসেম বলেন,অন্যান্য বাজার থেকে কালিয়াকৈরে সাশ্রয়ে মাছ কেনা যায়। মাছ কাটার জন্যও অনেক লোকজন থাকে। ভোর সকালে বাজারে এলে অনেক কম দামে টাটকা মাছ কিনতে পাওয়া যায়।তিনি আরও বলেন,শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় এ বাজারে দিন-দিন ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম বেড়েই চলছে।
এমএস