নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া একটি হত্যাকাণ্ডের জের ধরে প্রতিপক্ষের ভয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে নিজ বাড়িতে উঠতে পারছে না প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়া উপজেলার পেড়লি ইউনিয়নের পেড়লি গ্রামে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানান, পেড়লি গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপ রয়েছে। যার একটি বাবু শেখের গ্রুপ। অন্য গ্রুপটি শহিদুল মোল্যার গ্রুপ। দুটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল বিদ্যমান। এরই ধারাবাহিকতায় গত নয় মাস আগে বাবু শেখ গ্রুপের আজাদ শেখ (৩০) দুর্বৃত্তদের হাতে হত্যার শিকার হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের দলীয় প্রতিপক্ষের ২০ জনকে আসামী হলেও ২শত পরিবারের বাড়িঘরে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তারপর থেকে বারবার চেষ্টা করেও তারা আর নিজ গ্রামে ফিরতে পারেননি। ফলে ৯ মাস ধরে পালিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
ভুক্তভোগী কউসার ভূইয়া বলেন, নয় মাস আগে আমাদের এলাকায় একটা মার্ডার হয়ছিল। মার্ডারের ভিতরে হয়তো চার-পাঁচজন মানুষ ছিল। কিন্ত তারা (নিহত দলীয় লোক) এসে আমাদের প্রায় তিনশো লোকের বাড়িঘর পুড়ায় দিছে, লুটপাট করে নিয়ে গেছে। সেই রাতে আমরা শরণার্থীর মত কান্নাকাটি করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি। এ পর্যন্ত বাড়ি ওঠার সুযোগ আমাদের দেয় নি। বাড়ির দিকে কেউ গেলে মারধর করতিছে। স্বজনদের মৃত্যুতে জানাযা পড়তে গেলেও মারধর করছে।
ভুক্তভোগী কিবরিয়া মোল্যা, আসাদ ভূইয়াসহ আরও কয়েকজন বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি আগুন ধরায় পুড়ায় দিয়ে ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। সবকিছু লুটেপুটে নিয়ে গেছে। জায়গা-জমি দখল দেছে। আমরা সবাই গ্রাম ছাড়া। এ আত্মীয়ের বাড়িতে দুদিন ওই আত্মীয়ের বাড়িতে দুদিন, এখানে-সেখানে বেড়াচ্ছি। আমাদের যে কি কষ্টে দিন যাচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া এ কষ্টের কথা আর বলার জায়গা নেই। এভাবে আর কতদিন চলব। পুলিশ সুপারে কাছে দাবি আমাদের বাড়ি ওঠার ব্যবস্থা যাতে করে। চালের তলে মাথা দিয়ে একমুঠ লবণ ভাত যাতে খেতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিক।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিহত আজাদ শেখের বড় ভাই মো. উজ্জ্বল শেখ বলেছেন, ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে আমরা তখন কাতর। তাদের ঘরবাড়ি পুড়াপুড়িতে আমরা তো যায় নি। তাদের বাড়ি উঠতে না দেয়ার কথাও মিথ্যা। আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তারা নিজেদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে ভাঙে-চুরে নিজেরাই চলে গেছে এলাকা থেকে। আর যা কিছু করিছে এলাকার জনসাধারণ তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে করেছে। এর দায়ভার তো আমরা নিতে পারিনা। তাদের ভিটা-বাড়ি আছে, তারা আসবে। তাতে আমাদের সমস্যা কি। আমাদের কোন আপত্তি নেই।
এসময় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমার এক চাচা যাচ্ছিল নড়াইলে। যাওয়ার পথে সিঙ্গের থেকে তাকে মারধর করছে। বাইরে যেতে গেলে আমাদেরই নিরাপত্তা নেই, তাদের আমরা কি করব? আমরা যেদিকে যাবো সেদিকে তারা বসে থাকে। কিছুদিন আগে আমাদের একটা ছেলেকে হত্যা চেষ্টা করেছে। আমরা ধৈর্য ধরে আছি। আইনকে শ্রদ্ধা-সম্মান করি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ভাই হত্যার সুবিচার চাই।
এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান বলেন, ইতোমধ্য এ ঘটনায় বাড়িছাড়া কিছু মানুষকে বাড়িতে উঠানো হয়েছে। বাকিদেরকে ১০ থেক ১৫ দিনের মধ্যে আমরা বাড়িতে উঠানোর ব্যবস্থা করব।
এস/এসআই