লক্ষ্মীপুর: বর্ণাঢ্য আয়োজনে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল বর্ধিত সভা করা হলেও 'দাওয়াত' পাননি জেলা সভাপতি। তবে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। গুঞ্জন রয়েছে, একই সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এমপি নয়নের ভগ্নিপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুনুর রশিদকে একক প্রার্থী হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া চেয়ারম্যান হিসেবে গত একবছর ধরে আলোচনায় থাকলেও বর্ধিত সভায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ বিন জাকারিয়ার নাম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত থাকা ৫ জন আওয়ামী লীগ নেত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, মূলত এমপি নয়ন তার ভগ্নিপতি মামুনুর রশিদের বিজয় নিশ্চিত করতে বর্ধিত সভার নামে উপজেলা আওয়ামী লীগকে দিয়ে 'সমঝোতা' বৈঠক করিয়েছেন। এজন্যই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকুকে দাওয়াতি দেওয়া হয়নি। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সভার সঞ্চালক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠানের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীর নাম প্রকাশ হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, ভগ্নিপতি মামুনুর রশিদকে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিজানুর রহমান মুন্সীকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সভার বিশেষ অতিথি ছিলেন।
এছাড়া এমপি নয়নের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করা তার বক্তব্যের ভিডিও থেকে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে উঠে। বর্ধিত সভা থেকে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থীর সিদ্ধান্ত দিয়ে এমপি নয়ন কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন বলে উপজেলা ও জেলার কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন।
রায়পুরে জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ সভার সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুর রশীদ, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার, আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ বিন জাকারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক কৌশিক আহমেদ সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাকির পাটওয়ারীসহ কয়েকজন আলোচনায় রয়েছেন।
এদিকে ২১ এপ্রিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। এরমধ্যেই ১৯ এপ্রিল রায়পুরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। তবে দাওয়াত পাননি লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু।
অন্যদিকে বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি নয়ন এমপি তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দলের স্বার্থে ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে একমত থাকলে দু হাত তুলে দেখান। আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামি দিনগুলোতে ইউপি, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দিয়ে দলের ঐক্য ধরে রাখবো। আপনারা যেভাবে চান সেভাবেই প্রার্থী হবে। আমরা কোন প্রার্থীকে চাপিয়ে দেবো না। আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও তাদের মধ্য থেকে আপনারা যে ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী চান আলোচনার মাধ্যমে আমরা তা সিদ্ধান্ত নেবো। চেয়ারম্যান-ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থী, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসে ঐক্যবদ্ধ প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়টি নিয়ে এমপি নয়ন উপস্থিত নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত জানিতে চাইলে সবাই হাত তুলে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
এমন ঘটনায় এমপি নয়ন সাংবাদিকদের বলেন, দল থেকে একক প্রার্থী দিলেও অন্যরা প্রার্থী হতে পারবেন। যেহেতু কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে উম্মুক্ত নির্বাচনের সেহেতু অন্য কেউ প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
মারুফ বিন জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি একবছর ধরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে এলাকায় কাজ করে আসছি। কিন্তু বর্ধিত সভায় আমাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে'।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, 'দল থেকে এমপি নয়নের ভগ্নিপতি মামুনকে একক প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি তাদের বর্ধিত সভায় যাইনি। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ছিলাম, আছি ও থাকবো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান বলেন, আমরা দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। যারা যারা ভোট করতে চায়, তারা ভোট করবে। ভোট কে করবে না করবে এটা তার ব্যাপার। তৃণমূলে যেন মারামারি বা বিশৃঙ্খলা না হয় এজন্য আমরা বর্ধিত সভা ডেকেছি। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তবে মারুফ বিন জাকারিয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এ আ.লীগ নেতা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, দল থেকে একক প্রার্থী দেওয়ার কোন সিদ্ধান্ত নেই। ক্ষমতাও কারো নেই। যারা করেছে তারা অবৈধভাবে করেছে। দলের কেউই কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা হল দলগত ভাবে কোন প্রার্থী দেওয়া যাবে না। এমপি-মন্ত্রীর কোন আত্মীয়-স্বজনও নির্বাচন করতে পারবে না। কোন ধরণের হস্তক্ষেপও করা যাবে না। আর বর্ধিত সভায় আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি, বিষয়টি আমি কেন্দ্রে জানাবো।
জেইউবি/এসআই