ময়মনসিংহ: ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর বাজারে লেবু বেচাকেনা শুরু হয়। এলাকায় লেবু চাষী কম থাকায় প্রথমে অল্প পরিসরে লেবু আসতো বাজারে। পরবর্তীতে ফুলবাড়ীয়া উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী ভালুকা, ঘাটাইল, মধুপুর ও সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এই বাজারে লেবু আসতে থাকলে দিনকে দিন এই এনায়েতপুর বাজারটি বিশাল আকার ধারণ করে। প্রতিদিন কোটি টাকার লেবু যাচ্ছে ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, নারায়নগঞ্জ ও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিনই বাজার। দুপুর ২টা থেকে শুরু, চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
বাজারের ইজারাদার ও লেবু ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, দরিদ্র এলাকা বলে এক সময় এনায়েতপুরের মানুষের সাথে অন্য এলাকার মানুষ আত্মীয় করতে চাইতো না। এখন লেবুর চাষ করে এখানকার মানুষ বারোমাসই টাকা রোজগার করতে পারে। এনায়েতপুরে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই লেবুর চাষ করছেন। লেবু চাষ করে এলাকার মানুষের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।
তিনি আরও জানান, ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর ছাড়াও সোয়াইতপুর, কাহালগাঁও, গয়নাতপুর, ফুলতলা, আছিম, কান্দানিয়া, হাছেনের মোড়, মাঝির ঘাট, বাবুগঞ্জ, রাঙামাটিয়া, অনন্তপুর, পাশ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার গারো বাজার, সাগরদিঘি, জোড়দিঘি, কামালপুর, গোপিনপুর, আকন্দের বাইদ, বাশাবাইদ, আড়ংচালা, বাঘাঢ়া, ইন্দ্রজানি, আষাইঢ়ার চালা, মাকরাইল, সখীপুরের কুতুবপুর, বড় চাওনা, ছোট চওনা, কালিয়া, কচুয়া, ভালুকার উথুরা, চামিয়াদী, কৈয়াদী, বনগাঁও, মাহার বাজার, আঙ্গারগাড়া, পাঁচগাঁও, কাতলামারী ও মধুপুর থেকে এখানে লেবু আসে।
লেবু চাষিরা জানান, রমজানে এবং ফাগুন চৈত্র মাসে লেবুর চাহিদা থাকে বেশি। তাছাড়া বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে লেবু গাছে ফলন হয় প্রচুর। এ বছর গরম আর বৃষ্টিপাত না থাকায় গাছে ফলন কম হয়েছে।
চাষিরা আরও জানান, বস্তা হিসেবে লেবু বিক্রি করে থাকেন তারা। বিভিন্ন আকারের লেবু হয়ে থাকে আর সে অনুপাতে বস্তায় লেবু ভর্তি করা হয়। বড় হলে প্রতি বস্তায় ১২ থেকে ১৪শ লেবু ভরা যাবে। আবার মাঝারী কিংবা ছোট হলে ১৫ থেকে ১৬ ও ১৭ থেকে ১৮শ পিস লেবু ভর্তি করা যায়। লেবুর চাহিদা অনুযায়ী বাজারে দর উঠানামা করে। রমজান মাসে দর ভালো পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক ভাবে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় লেবু বড় হচ্ছেনা। ফলে বাজারে কম উঠছে লেবু। দামও কম পাওয়া যাচ্ছে।
বেপারীরা জানান, এই বাজারে পর্তা করেই (ন্যায্য মূল্যে) লেবু কিনতে পারেন তারা। এখানে বেচাকেনায় কোনো অসুবিধা নেই। তাছাড়া নিরাপত্তার সাথে এখানে টাকা পয়সা লেনদেন করতে পারেন তারা।
ইজারাদার মোশারফ হোসেন জানান, এই বাজারে প্রতিদিন স্থানীয় ও দুর দুরান্ত থেকে প্রায় একশো বেপারী আসেন। তারা লেবু কিনে ছোট বড় মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ি ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবু নিয়ে যাচ্ছে। সৃজনে আরো বেশি যায় গাড়ি। প্রতিদিন কোটি টাকার এ বাজারে লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। তবে সৃজনে দুই থেকে তিন কোটি টাকার লেবু বিক্রি হয়।
তিনি আরও জানান, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ সরকার যদি এই এলাকার নজর দিতো তাহলে সেটি সকলের জন্যই ভালো হতো। তাছাড়া এনায়েতপুরে সরকারি কোনো ব্যাংক নেই। তবে সরকারি কোনো ব্যাংকের শাখা খোলা হলে ব্যবসায়ীদের দারুন সুবিধা হতো।
এনায়েতপুর বাজার ও এলাকার রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৯নং এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল ইসলামের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এসআই