• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে তীব্র তাপদাহে আম-লিচু চাষিদের মাথায় হাত


জনাব আলী, রাজশাহী মে ৫, ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
রাজশাহীতে তীব্র তাপদাহে আম-লিচু চাষিদের মাথায় হাত

ছবি : প্রতিনিধি

রাজশাহী: প্রতিবছর এসময় বাজারে রসালো ফল লিচুর দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এবার রাজশাহী অঞ্চলে লিচুর দানা তীব্র দাবদাহে ঝড়ে পড়েছে। কিছু থাকলেই তা শুধু আঠিসার হয়ে আছে। এতে বাগান কিনে লাভের আশায় লিচু চাষ করলেও ফলন না পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। তীব্র গরমে রাজশাহীতে এবার আম-লিচুর দৈন্যদশা। খুব কম পরিমাণ গাছে আম-লিচু রয়েছে। তারপরও গরমে আম-লিচু শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ফলে বাজারে মৌসুমী ফলের চাহিদা পূরণ হওয়া নিয়ে শংসয় দেখা দিয়েছে। আশা ছোয়া দাম হতে পারে এবার মৌসুমী ফল আম-লিচুর।

লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরের এক সময়ের নাম থাকলেও এখন তা দখল করে নিচ্ছে ঈশ্বরদী। পিছিয়ে নেই রাজশাহীও। রাজশাহীতেও ব্যাপক চাষ করা হয় দেশি লিচুর। এবার তীব্র তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর প্রতিটি লিচু গাছের প্রায় ৪০-৫০ ভাগ গুঁটি ঝরে গেছে। এবার লিচু পাকার ঠিক এক সপ্তাহ আগে কালচে হয়ে ফেটে যাওয়ায় চাষিরা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তাই কপাল পুড়তে যাচ্ছে লিচু চাষিদের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহীতে এবার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চাষিরা বলছেন, আমের মতো এবার লিচুতেও ব্যাপক লোকসান হবে।

রাজশাহী নগরীর মেহেরচরি এলাকার লিচুচাষি মুক্তার ভারি বলেন, তীব্র খরার কারণে গাছে ফেটে নষ্ট হচ্ছে লিচু। এমন ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আগাম গাছ থেকে লিচু নামিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, লিচুগুলো পরিপূর্ণভাবে পাকতে এখনও পাঁচ থেকে ছয়দিন সময় লাগবে। কিন্তু খরার কারণে গাছের গোড়ায় পানি দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এছাড়া গাছের বাদুরের অত্যাচার বেড়ে গেছে। তাই কয়েকটি গাছে ২৪০০ লিচু নামিয়ে বিক্রি করলাম প্রতি ১০০টির দাম ৪০০ টাকা দরে।

মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার লিচুচাষি সাব্বির হোসেনও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, গাছের গোড়ায় সকাল-বিকেল পানি ঢালছি। তাও লিচু রক্ষা করা যাচ্ছে না। গাছের চেয়ে মনে হচ্ছে মাটিতেই বেশি লিচু পড়ে আছে। লিচু দেখতে কালচে হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আকারে অনেক ছোট হচ্ছে।

ঈশ্বরদী সুমিষ্ট ও রসালো লিচুর জন্য বিখ্যাত। এখানে চায়না, বোম্বে, মোফাজ্জরসহ দেশি জাতের বিভিন্ন লিচুর বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হয়। লিচু ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তাপমাত্রা এরচেয়ে বেশি হলে লিচু ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রায় এক মাস ধরে ঈশ্বরদীতে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৯-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। ফলে লিচুর আকার ছোট হয়ে এবং সুমিষ্ট এ ফলের প্রাকৃতিক স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঈশ্বরদীর মিরকামারীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচু চাষি আবদুল জলিল বলেন, আমাদের বেশ কয়েক জাতের লিচু চাষ হয়। এরমধ্যে দেশি বা আঁটি জাতের লিচু সবার আগে বাজারে উঠে। প্রতি বছর মে মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে বাজারজাত হয়। এবার অনাবৃষ্টির কারণে লিচু আকারে ছোট হয়ে গেছে। লিচু যখন পাকার উপযোগী হয় তখন লিচুর চামড়া পাতলা হয়ে যায় লিচুর ভিতরের অংশ বড় হতে থাকে। লিচু যখন পাকার উপযোগী হয় তখন কোনো অবস্থাতে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি ধারণ করতে পারে না। আমাদের এখানে এখনতো তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তাপপ্রবাহ এভাবে আর সাতদিন থাকলেই দেশি লিচু অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি আইয়ুব আলী পান্না বলেন, দেশি জাতের লিচু পাকার উপযোগী লালচে রং ধারণের সঙ্গে সঙ্গেই তা তীব্র রোদে পুড়ে কালো বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর এক সপ্তাহ যদি এরকম তাপপ্রবাহ থাকে তাহলে দেশি জাতের লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। এটি আমরা বাজারজাত করতেই পারবো না।

সলিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া বলেন, মোজাফ্ফর জাতের দেশি লিচু বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এটি পুড়ে কালচে হয়ে যায়। শুধুমাত্র গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ ও গাছের ওপরে পানি ছিটানোর মাধ্যমে এটি কিছুটা রোধ করা যেতে পারে। এছাড়াও লিচুর কালচে রং রোধ করতে চাষিরা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, বৃষ্টি না হলে লিচুর গুঁটির চামড়া পুড়ে যাবে। চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ চালু রাখতে হবে। সম্ভব হলে গাছের ওপর পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে লিচু পাকার মৌসুমে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির বেশি হলেই লিচু শুকিয়ে ঝরে পড়তে পারে। সেজন্য উঠান বৈঠকের মাধ্যমে চাষিদের লিচু গুঁটি ঝরা ও গুঁটির চামড়া পুড়ে যাওয়া রোধে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা বলেন, আম-লিচু রক্ষা করার জন্য সকাল-বিকেল গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। বিকেলের পানিটা গোড়ার পাশাপাশি গাছের ওপরেও স্প্রে করে দিতে হবে। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, খরা পড়ছে, কিন্তু এখনই যে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে তা নয়। আম-লিচু তো এমন প্রতিকূল আবহাওয়ারই ফল। খরা হবে, ঝড়-বৃষ্টি, শিলা হবে, এর মধ্যে দিয়ে এগুলো বড় হবে। তবে এখন বৃষ্টি প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে পরিবেশটা ঠান্ডা হবে। তখন আর ঝরবে না।

এসআই

Wordbridge School
Link copied!