চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সেতুটি কোনো কাজে লাগছে না। থাই দাড়িয়ে আছে নদীর ওপর। প্রায় দু’মাস আগে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এতে যানবাহন ও এলাকাবাসীর চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি।
স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনো নৌকায় কখনো বাশেঁর সাঁকো দিয়ে নদী পার হচ্ছেন। অথচ শর্ত ছিল ব্রিজের সংযোগ সড়ক করার প্রয়োজনীয় জমি ও উপযোগিতা পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখা দিলে দরপত্র আহবান করার আগেই কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সেতুটি অবশ্য হাজার হাজার জনগণ ও যানবাহন পারাপারের কাজে না আসলেও এখন গঞ্জেরঘাট নদী পাড়ের মানুষেরা সেতুর ওপরে ধান, গম ও ভুট্টা শোকানোর কাজে ব্যবহার করছে।
সরেজমিনে দেখাগেছে, পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সেতুটির পাশেই জনসাধারণের পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো করে দিয়েছে খেয়া ঘাটের ইজারাদার। এই বাঁশের সাঁকোদিয়ে পার হচ্ছে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পায়ে হাটা নারী পুরুষ। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়লে সাঁকোর পরিবর্তে তখন ব্যবহার করা হয় নৌকা।
অপরদিকে, ব্রীজে বাঁশের মই লাগিয়ে উঠা নামা করতে দেখা যায় স্থানীয় নারী-পুরুষদের। কৌতুহল বসত বাঁশের মই দিয়ে ব্রীজটি ওপরে উঠে দেখি স্থানীয় পাইকার ভুট্টা ব্যবসায়ি ও সাধারণ কৃষকরা ধান, গম ও ভুট্টা শোকানোর কাজে ব্যস্ত। ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত ব্রীজটি জুড়ে শোকানো হচ্ছে ভুট্টা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থে পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ টাকা। দরপত্র আহব্বান করলে সেতুটি নির্মাণে কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠার মো. নুরুজ্জামান মিয়া ও সৈকত এন্টারপ্রাইজ জেভিসিএ এর সঙ্গে চুক্তি হয় ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকায়।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি গঞ্জেরঘাট প্রান্তে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই বছরে ১১ ফেব্রুয়ারি দরপত্রের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেতুটি ২০২২ সালের ১৮ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু বছর হতে চললেও সেতুটি চালু করা যায়নি আজও।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়ক থেকে কিছুটা দূরে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুর দুই পাশে সড়ক না থাকায় এটি আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এজন্য সেতুর কাছে নৌকা ও সাঁকোয় নদী পারাপারের যে ব্যবস্থা রয়েছে সেটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করছি। বর্ষার সময় সারাদিনই খেয়াঘাটের মাঝি রশি টেনে নৌকায় যাত্রী পারাপার করেন। পণ্য নিয়েও অনেকেই পারাপার হতে হয়। সেতুর পেছনে সরকারের বরাদ্দের কোটি কোটি টাকাও আমাদের জীবনকে আধুনিক যোগাযোগের সুবিধা এনে দিতে পারেনি।
গঞ্জেরঘাট পাড়ের বাসিন্দা হাটকালুগঞ্জের কৃষক ঝন্টু বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে এলজিইডি ব্রীজ বানালো। অথচ সে ব্রীজ জনগণের কোন কাজে আসছে না। এমনও দিন আছে আমাদের চাষাবাদের জন্য ২/৩ বার নদী পার হওয়া লাগে। নৌকা ও সাঁকো দিয়ে এই নদী পারাপার হতে আমাদের গুনতে হয় প্রতি পারে ৫ টাকা।
এলজিইডি চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইতোমধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছে। সংযোগ সড়ক তৈরি ও জমি অধিগ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এলজিইডির কাছে আছে। অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেলে নিয়ম মেনে জমির মালিককে মূল্য পরিশোধ এবং পরবর্তী সময়ে দ্রুততম সময়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হবে। আশা করছি খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
এমএস