লক্ষ্মীপুর: নৌকার ওপর সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। সেই প্যানেলের আলোয় জাল মেরামত করছেন কয়েকজন জেলে। শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যা ৭টা, তখনও মেঘনা নদীতে চলছে ভাটা। রাতের মাঝামাঝিতে জোয়ার আসবে, তখন নদীর বুকে নৌকা ভাসাবে মাঝি রাসেল ও তার দলবল।
প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে মেঘনায় ইলিশ শিকারে নামেন তারা। নদীতে গত ১০ দিন ধরে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। এরআগে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা ছিল। পহেলা মে থেকে শুরু হয়েছে এ মাছ ধরা। রাসেলের ট্রলারটি ১০ দিন মেঘনায় মাছ শিকার করেছে। এই দশদিনে যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে, তা বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার টাকা। ট্রলারে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা।
জেলার কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকায় ট্রলার মালিক রাসেলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা ছয়জন মাছ শিকার করি। মাছ বিক্রির পর খচর বাদ দিয়ে অবশিষ্ট যে টাকা থাকে, সেগুলো সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিই। কিন্তু মাছ ধরার পর যে টাকা পাই, তা দিয়ে কারো সংসার চলে না।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে নদীতে গিয়ে আমাদের পোষায় না। তারপরও ইলিশের আশায় আশায় নদীতে যাই। বড় মাছ ধরা পড়লে খরচ উঠে লাভ থাকবে। কিন্তু এখন খরচ বাদ দিয়ে তেমন একটা লাভ থাকে না।
ওই ট্রলারের জেলে নুর উদ্দিন বলেন, আমরা জোয়ারভাটা দেখে নদীতে নামি। দিনে দুইবার নামা হয়। আমি ৮ মে থেকে মেঘনায় নেমেছি, পরের দিন ভোরে উঠে আসছি। এদিন পুনরায় সকাল ১০টার দিকে নেমে বিকেল ৩টার দিকে ফিরে আসছি। রাতে আবার নদীতে গিয়েছি। সকালে যে মাছ নিয়ে ঘাটে আসছি। সেগুলো ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর বিকেলের গুলো ৩৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। জ্বালানি খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা।
সরজমিনে মতিরহাট মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে শুনশান নিরবতা। নদীতে মাছ ধরা পড়লে এ সময়টাতে ঘাটে মাছ বিক্রির জমজমাট দৃশ্য থাকতো। এ ঘাটে ৪২টি বাক্স রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র দুটি বাক্সে স্বল্প পরিমাণে মাছ বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঘাটে পাইকারি দরে জাটকা ইলিশের হালি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৭৫০ টাকা করে। আর প্রায় দেড় কেজি ওজনের একহালি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৪৩৫০ টাকা, প্রায় তিন কেজি ওজনের ৭টি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৫০২৫ টাকা।
মাছ ঘাটের ম্যানেজার বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের বাক্সে রোববার সারাদিনে ৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। এ বাক্সের আওতায় অন্তত ২০ জন জেলেকে দাদন দেওয়া আছে। কিন্তু মাত্র ৪টি নৌকার মাছ ঘাটে এসেছে। নদীতে মাছের পরিমাণ কম থাকায় অল্প সংখ্যক জেলে মাছ শিকারে যায়। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদীতে মাছের পরিমাণ কম।
তিনি আরও বলেন, মাছ কম হলেও দাম অনেক বেশি। আমাদের বাক্সে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি উঠেছে তিন হাজার, আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি চার হাজার। দেড় কেজি ওজনের এক হালি মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ টাকায়।
মেঘনায় মাছের আকালের বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন সোনালীনিউজকে বলেন, এখনও ইলিশের মৌসুম শুরু হয়নি। সাধারণত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস হলো ইলিশের মৌসুম। তবে সারাবছরই কম-বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমান সময়টাতে কোনো বৃষ্টিপাত নেই। ফলে নদীতে নাব্যতা সংকট। তাই এ সময়টাতে নদীতে ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। বর্ষা শুরু হলে এবং নদীতে পানির গভীরতা বাড়লে বেশি মাছ ধরা পড়তে পারে।
জেইউবি/এসআই