• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গাজীপুরে লিচুর আশানুরূপ ফলনে হাঁসি ফুটেছে কৃষকের মুখে 


এম. এস. রুকন গাজীপুর প্রতিনিধি মে ১৭, ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
গাজীপুরে লিচুর আশানুরূপ ফলনে হাঁসি ফুটেছে কৃষকের মুখে 

গাজীপুর: বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শুক্রবার (৩) জ্যৈষ্ঠ। দেশের ঐতিহ্য অনুসারে এখন সারা দেশেই চলছে মধুমাস। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে গ্রাম-গঞ্জে, স্থানীয় হাট-বাজার,শহর-নগর ও বন্দরের বাজারগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে বাহারি রঙের নানা জাতের রসালো ফলের সমাগম ঘটে। 

তবে এর মধ্যে টসটসে রসালো ও সুস্বাদু ফল লিচুর আগমন ঘটে সবার আগে। এজন্য তাই দিনাজপুরের পরেই দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক ভাবে লিচুর চাষাবাদ এলাকা শিল্প সমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরের চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

লিচু চাষীদের এই ব্যস্তা দেখতে ও তাদের সঙ্গে এবার লিচুর ফলন এবং ব্যবসার খোঁজ খবর নিতে সোনালীনিউজের প্রতিনিধি টিমের সদস্যরা শুক্রবার সকালেই বেরিয়ে পড়েন জেলার বিখ্যাত লিচু উৎপাদন এলাকা সদর উপজেলার পিরুজআলী ও শ্রীপুরের টেংরা এলাকায়। 

শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সোনালীনিউজের প্রতিনিধি টিমের সদস্যরা প্রথমেই যায় সদর উপজেলার পিরুজআলী এলাকায়। এ এলাকায় ঐতিহ্যবাহী ৪০ বছরের পুরোনো একটি লিচু বাগান রয়েছে। প্রয়াত সোলায়মান রহমানের। 

বর্তমানে এই বাগান চাষাবাদ করছেন তারই ছেলে মো.সাদিকুর রহমান। বাগানের ভিতরে ঢুকতেই -বাতাসে ভেসে আসে টসটসে রসালো পাঁকা লিচুর মৌ-মৌ গন্ধ। গন্ধের স্বাদ সয়তে না পেরে আমরা কিছু লিচু খাওয়ার জন্য চেয়ে নিলাম বাগান মালিক থেকে। একটি লিচু মুখে দেওয়া মাত্রই এক অভূতপূর্ব স্বাদের তৃপ্তি পেলাম। একই সঙ্গে মনে হলো এটা যেনো ভারতের বোম্বাই লিচু খেলাম। যাই হোক এবার আমরা মূল আলোচনা শুরু করলাম। 

এত তীব্র তাপদাহের মধ্যেও লিচুর কেমন ফলন হয়েছে এবং বাজারে এবার দাম কেমন পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলাম বাগান মালিকের কাছে।

এ সময়ে এই বাগানের বর্তমান মালিক সাদিকুর রহমান জানান, সারা দেশেই তীব্র তাপদাহের কারণে কৃষি ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়লেও। সদর উপজেলা, কাপাসিয়া ও শ্রীপুরের বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা গরমের সময়ে লিচু বাগানের অধিকতর যত্ন নেওয়ায় বাগানে তেমন বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। এর ফলে এ অঞ্চলে লিচুর বাম্পার ফলন ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। এজন্য তাই লিচুতে ভরপুর এখন স্থানীয় বাজারগুলো। 

এক কথায় বললে, টসটসে রসালো লিচুর মৌ-মৌ গন্ধ গাজীপুরের আকাশে-বাতাসে বইছে। তিনি আরও বলেন, অর্থকারি ফসল হিসেবে গাজীপুরে লিচু চাষীরা উন্নত জাতের লিচুর চাষ করছেন। বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে মেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি এবং দেশি লিচুর ফলন ভাল হয়েছে।তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ শিল্পাঞ্চলের লিচু গাজীপুর ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়া শুরু হয়েছে।

তবে তরুণ এই লিচু চাষী অভিযোগ করে বলেন, গাজীপুর দেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এ জেলায় শিল্প কারখানার পরেই কৃষি শিল্পেরও ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উন্মোচন হয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলার কৃষি বিভাগ কৃষক, চাষী ও বিভিন্ন কৃষি উদ্যাগক্তাদের সহায়তা প্রদানে উদাসীন। 

তারা যদি যে কোনো দুর্যোগময় সময়ে কৃষক ও চাষীদের খোঁজ-খবর না নেয়। তাহলে একটা সময়ে কৃষি শিল্পের বিকাশ থেমে যাবে। এতে করে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়বে। লিচু চাষী সাদিকুর আরও জানান, তার বাগান থেকে প্রতি বছরই প্রায় ৭/৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন। তবে তীব্র তাপদাহের কারণে লিচুর ফুল ঝড়ে পড়ায় এবার তিনি ৫/৬ লাখ টাকা লিচু বিক্রির আশা করছেন। 

এ সময়ে সাদিকুরের বাগানে লিচু কিনতে আসা স্থানীয় পাইকার মো.শাজাহান জানান, গাজীপুরের এই পিরুজ আলীর মাটি অত্যন্ত উর্বর ও লিচু চাষাবাদের জন্য খুব উপযোগী। এজন্য অনেকেই লিচুর বাগান দিয়েই অর্থ নৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ তীব্র তাপদাহে অনুকূল আবহাওয়া না থাকলেও লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাগান থেকে ২০০/২৫০ টাকা ধরে লিচু কিনে বাজারে ৩০০/৩৫০ টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। বাজারে গাজীপুরের লিচুর চাহিদা সব সময় ভালো থাকে বলে তিনি জানান। 

এ দিকে শ্রীপুরের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি লিচু বাগানের এক দৃষ্টি নন্দন অপরূপ দৃশ্য দেখা গেছে। লিচুর ভারে গাছের গাছের ডাল-পালা মাটির দিকে লুটিয়ে পড়ছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে লিচু গাছের ডাল-পালা আটকিয়ে রাখা হয়েছে।

লিচু চাষি এনামুল হক সোনালিনিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেক লিচু ঝরেও গেলেও এবারও লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গাজীপুরের লিচুর মান ও স্বাদ ভাল থাকায় সারা দেশেই বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর গন্ডি পেরিয়ে এখন ইউরোপের দেশগুলোতে লিচু রপ্তানী শুরু হয়েছে। 

অপর দিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরে দেড় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর আবাদ হয়। সব উপজেলায় মোট আবাদের প্রায় অর্ধেক লিচু উৎপাদন হয় শ্রীপুর উপজেলায়। 

উপজেলা উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, এবার শ্রীপুরে ৭৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। বাজারে দাম ভাল থাকায় অধিক মুনাফা অর্জিত হবে চাষীদের। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, তার উপজেলায় ৭৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি বা পাতি (চায়না-৩) ৫০ হেক্টর, কদমী ৪০ হেক্টর, বোম্বে ১৫৫ হেক্টর, ভেরারী ১৫ হেক্টর ও বাকিগুলো দেশি জাতের লিচু। তিনি আরও বলেন, শুধু শ্রীপুরই নয় পুরো গাজীপুর জুড়েই লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। 

এআর

Wordbridge School
Link copied!